Why June 1 is an important date: আগামী শনিবার (১ জুন), শেষ তথা সপ্তম দফার লোকসভা নির্বাচন। দিনটি অন্য কারণেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ওই দিন দেশের অন্য রাজ্যগুলোর মত পঞ্জাবেও ভোট হবে। আর, এই ১ জুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, পঞ্জাবের এমন ইতিহাস, যা আজও নাড়া দিয়ে যায় পঞ্চনদের রাজ্যের আট থেকে আশি-কে।
পঞ্জাবে ১ জুন
দিনটি এমন একটা ঘটনার সাক্ষী, যা পঞ্জাবের রাজনৈতিক এবং ইতিহাসকে অন্য খাতে বইয়ে দিয়েছিল। বলতে গেলে উথালপাতাল করে দিয়েছিল। এই ১ জুন, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে খালিস্তানি জঙ্গিদের নির্মূল করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপারেশন ব্লু স্টার শুরু করেছিল। দিনটি ছিল তার ৪০তম বার্ষিকী। শিখদের পবিত্রতম উপাসনালয়ে এই হামলার জেরে প্রাণ দিতে হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। দিল্লি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঙ্গা হয়েছে। তার অনেক বছর পর এই ১ জুন, শিখদের জীবিত গুরু হিসেবে বিবেচিত 'গুরু গ্রন্থ সাহেব'-এর একটি অনুলিপি, ফরিদকোটের এক গুরুদ্বার থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল। যা পঞ্জাবের বাসিন্দাদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল ধর্মবিদ্বেষ, রাজনৈতিক টানাপোড়েনও।
অপারেশন ব্লু স্টার
ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রণব মুখার্জি-সহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি সত্ত্বেও, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের অনুমতি দেন। ২৯ মে নাগাদ, প্যারা কমান্ডোদের নিয়ে মীরাটের নবম পদাতিক ডিভিশনের সৈন্যরা অমৃতসরে পৌঁছেছিল। তাঁদের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিনেতা জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে এবং তার অনুগামীদের স্বর্ণমন্দির থেকে উচ্ছেদ করা। ১ জুন, মন্দিরের কাছে বিভিন্ন বাড়ির ওপরে পজিশন নেওয়া জঙ্গি এবং সিআরপিএফ জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে ১১ জন সাধারণ লোক মারা যান। অপারেশন ব্লু স্টার ১০ জুন পর্যন্ত চলে। এতে পঞ্জাবের বাসিন্দাদের জীবন, সম্পত্তি এবং আবেগের ওপর ব্যাপক আঘাত নেমে এসেছিল। এই অভিযানে স্বর্ণমন্দিরে শিখগুরুদের আসন 'অকাল তখত' নষ্ট হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই অভিযানে ৫৫৪ জন প্রাণ হারান। যার মধ্যে চার জন অফিসার এবং ৭৯ জন সেনা জওয়ান। তবে এই ঘটনায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সম্ভবত ছিল অনেক বেশি। নিহতদের মধ্যে অনেক তীর্থযাত্রীও ছিলেন। অভিযানে ভিন্দ্রানওয়ালেও মারা যায়।
আরও পড়ুন- মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাজপেয়ীর ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’! মনমোহনী ভরসায় কোনওমতে বাঁচতে চেয়েছিল ইউপিএ
স্বর্ণমন্দির অভিযানের প্রভাব
অপারেশন ব্লু স্টার পঞ্জাব ও ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘ ছায়া ফেলে। ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, ইন্দিরা গান্ধীকে তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষী হত্যা করেন। পালটা তাণ্ডব চালায় কংগ্রেসের লোকজন। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ২,১৪৬ জনকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৮৫ সালে, দেশের সবচেয়ে পুরোনো আঞ্চলিক পার্টি অকালি দলের নেতা সন্ত হরচাঁদ সিং লঙ্গোয়ালকে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার একমাসের মধ্যে হত্যা করা হয়। পঞ্জাবে হিংসা এবং অস্থিতিশীলতার 'অন্ধকার দশক' নেমে আসে। আজও পঞ্জাবের রাজনীতিতে অপারেশন ব্লু স্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিং বাদল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাতে এবারও প্রতিটি নির্বাচনী সমাবেশে ক্ষতিগ্রস্ত অকাল তখতের ছবি দেখিয়েছেন। আপ এবং বিজেপি, ইন্দিরার হত্যার পর শিখদের ওপর যে অত্যাচার চালানো হয়েছিল, ভোটারদের তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।