Why lower castes embrace Buddhism: গুজরাট সরকার জানিয়েছে যে কোনও হিন্দু যদি বৌদ্ধ হতে চান, তবে 'গুজরাট ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট, ২০০৩ (GFRA)' এর অধীনে জেলাশাসকের কাছ থেকে আগে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবছর, এদেশে গুজরাট এবং অন্যান্য জায়গায় কয়েক হাজার দলিত, একত্রে বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। এই ব্যাপারে গুজরাট বৌদ্ধ একাডেমির সচিব রমেশ ব্যাংকার, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে ২০২৩ সালে গুজরাটে কমপক্ষে ২,০০০ জন, যাঁদের বেশিরভাগই দলিত, বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। স্বাধীন ভারতে বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত সবচেয়ে বিখ্যাত দলিত হলেন ডক্টর বিআর আম্বেদকর। তিনি ১৯৫৬ সালে লক্ষাধিক অনুগামীকে নিয়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। যদিও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ইতিহাস নতুন নয়।
বুদ্ধের উত্থান
বৌদ্ধধর্মের উদ্ভব হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ-৫ম শতাব্দীতে সিদ্ধার্থ গৌতমের শিক্ষা থেকে উদ্ভব হয়েছিল এই ধর্মের। বৌদ্ধ ইতিহাস অনুযায়ী, বর্তমান নেপালের শাক্য রাজ্যের প্রধানের পুত্র গৌতম তাঁর চারপাশের পরিমণ্ডলের প্রতি মোহভঙ্গ হয়ে তপস্বী হয়েছিলেন। তিনি একটি অভিনব মতবাদ প্রচার করা শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর অনুসারীরা তাঁদের শিক্ষকের কথাগুলো মেনে নেওয়ার জন্য একটি মণ্ডলী তৈরি করেন। এইভাবে, একটি নতুন ধর্মের জন্ম হয়। বৌদ্ধ ধর্মের বৃদ্ধিকে পণ্ডিতদের একাংশ প্রচলিত বৈদিক ধর্মের গোঁড়ামির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখেছেন।
জৈনধর্মের উত্থান
এলপি গোমস, 'দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন'-এ লিখেছেন (সম্পাদনা- মিরসিয়া এলিয়েড, ১৯৮৯), 'ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের শিকড়গুলো খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর আন্দোলনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এদের ধর্মীয় লক্ষ্য ছিল, ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় এবং সামাজিক ব্যবস্থার বিরোধিতা। একইভাবে জৈনধর্ম হল ভারতের আর একটি প্রধান ধর্ম। এই ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের চেয়ে সামান্য আগে তৈরি হলেও, একই ধরনের সামাজিক পরিবেশে আবির্ভূত হয়েছিল।' বৌদ্ধধর্ম একটি অ-আচারিক ধর্ম হিসেবে শুরু হয়েছিল। এই ধর্ম, বৈদিক ধর্মের পশু বলির বিরোধিতা করেছিল। আর, তা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। বুদ্ধের মৃত্যুর পরপরই গঠিত বৌদ্ধ সংঘ, তথাকথিত 'অস্পৃশ্য'-সহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে ধর্মকে উন্মুক্ত করে দেয়।
ধর্মান্তরণের চেষ্টা
বৌদ্ধ ধর্ম, হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠানবাদের বিরোধিতা করেছিল। প্রতিষ্ঠানবাদ ছিল বৈদিক ভারতের মেরুদণ্ড। ড. আম্বেদকর লিখেছেন, 'বৌদ্ধধর্ম ছিল একটি বিপ্লব। এটি ফরাসি বিপ্লবের মতোই একটি মহান বিপ্লব ছিল। ( প্রাচীন ভারতে বিপ্লব এবং প্রতিবিপ্লব, ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি অসম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি)।' ভারতে শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের আধিপত্য হ্রাস পায়। কিন্তু, তা তখনও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিকশিত হয়ে যাচ্ছিল। এই ধর্মকে আশ্রয় করেই ১৯ এবং ২০ শতকে, দলিত বর্ণের উগ্র বুদ্ধিজীবীরা ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যকে ফের নতুন করে চ্যালেঞ্জ জানানো শুরু করে। তাঁদের মধ্যে তামিল অঞ্চলের আইয়োথি থাসার, মিতাবাদী কৃষ্ণান, সাহোদারন আয়াপ্পানের মতো বিশিষ্টরা ছিলেন অন্যতম। তাঁরা নিম্নবর্ণের অধিকারকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে হিন্দুধর্মকে ভাঙার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন- টিপু কেরলে হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন, মন্দিরের আগের নাম ফেরত চায় বিজেপি
আম্বেদকরের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে, ভারতে বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের কারণে ধর্মান্তরণের হুমকির সংখ্যা বেড়ে যায়। মন্দিরে প্রবেশ, পথের অধিকার, অস্পৃশ্যতা বিরোধী আইন এবং আন্তঃভোজন প্রচারের মতো অধিকারের জন্য আলোচনা গুরুত্ব পায়। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয় আন্তঃবর্ণ বিবাহেও। ডা. আম্বেদকর ১৯৩৬ সালে মুম্বইয়ে মাহারদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, 'আমি আপনাদের সকলকে বিশেষভাবে বলি, ধর্ম মানুষের জন্য, মানুষ ধর্মের জন্য নয়। মানুষের মত সুবিধা পেতে, নিজেকে পরিবর্তন করুন।' এরপর আম্বেদকর কয়েক দশক ধরে বৌদ্ধধর্ম অধ্যয়ন করেন। তারপরে ১৯৫৬ সালের ১৪ অক্টোবর, ৩.৬ লক্ষেরও বেশি অনুগামীকে নিয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। সেই থেকে দলিতদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হওয়া, গোটা দেশে প্রচলিত হয়ে উঠেছে। যাকে আম্বেদকরের পথ হিসেবেও দেখা হয়।