Advertisment

টেনিসে ক্রমপর্যায়ের নিচের দিকে প্লেয়াররা ম্যাচ ফিক্সিং চক্রের ফাঁদে পড়েন কেন?

যেসব প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নেন, তাঁরা অনেকটাই নিচের পর্যায়ের এবং যেসব ইভেন্টের প্রাইজ মানি বেশি, সেখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tennis Fixing

অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটের কাজ ছিল দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের নিচু ক্রমপর্যায়ের খেলোয়াড়দের ম্যাচ গড়াপেটায় প্রভাবিত করা

মেলবোর্নের বাসিন্দা দুই ভারতীয় বংশোদ্ভূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা একটি আন্তর্জাতিক টেনিস ম্যাচ ফিক্সিং সিন্ডিকেটের অস্ট্রেলিয় শাখার সঙ্গে যুক্ত। ২০১৮-র মরশুমে ব্রাজিল ও মিশরের দুটি নিচু দরের প্রতিযোগিতায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ভিক্টোরিয়া পুলিশের আনা এই অভিযোগের খবর প্রকাসিত হয়েছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে। সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে পুলিশি নথিতে নাম উঠে এসেছে আরেক ভারতীয় বাসিন্দা রবিন্দর ডান্ডিওয়ালের, তবে তাঁর বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ আনা হয়নি।

Advertisment

অভিযোগ, এই সিন্ডিকেটের কাজ ছিল দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের নিচু ক্রমপর্যায়ের খেলোয়াড়দের ম্যাচ গড়াপেটায় প্রভাবিত করা, এর পর ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা বুকিদের মাধ্যমে বেট ফেলত।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে প্রকাশিত রিপোর্টে ডান্ডিওয়ালের সোশাল মিডিয়া বিবরণী থেকে জানা গিয়েছে, সে ভারতের স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থা আল্টিমেট স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের কর্ণধার, এবং অতীতে সে উইলোফেস্ট অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭ ও এক বছর পর নেপালে অনুষ্ঠিত এশিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আয়োজক। একই সঙ্গে তাকে ক্রিকেট কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক ও ক্রিকেট প্রিমিয়ার লিগের চেয়ারম্যান বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।

তিউনিশিয়ার খেলোয়াড় মাজেদ কৈলানি ২০১৬ সালে ম্যাচ গড়াপেটায় দোষী প্রমাণিত হওয়ার কয়েকদিন বাদেই এই ঘটনা সামনে এসেছে।

যে সময় থেকে সারা বিশ্বে একই সঙ্গে বিভিন্ন অফিশিয়াল টুর্নামেন্ট খেলা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই টেনিসে ম্যাচ গড়াপেটার বিষয়টি ঢুকে পড়েছে, কারণ সব প্রতিযোগিতায় নজরদারি কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়।

কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, অভিযোগই বা কী?

ডান্ডিওয়ালের আত্মীয় ২২ বছরের হরসিমরৎ সিং ও ৩২ বছরের রাকেশ কুমারের বিরুদ্ধে যতাক্রমে ৯ ও ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। দুজনেই মেলবোর্নের শহরতলি পয়েন্ট কুকের বাসিন্দা। একটি গড়াপেটা ম্যাচের তথ্য ব্যবহার করে ২২টি বেটের অভিযোগ আনা হয়েছে এদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, এক বা একাধিক খেলোয়াড়ের তথ্য দিয়ে রবিন্দর ডান্ডিওয়ালকে ম্যাচের ফল নির্ধারণে সাহায্য করা বা দুর্নীতি করার জন্য ডান্ডিওয়াল নিযুক্ত খেলোয়াড়দের তথ্য পাচার।

এই তথ্যের মাধ্যমে অভিযুক্ত দুজন ৮.৭০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে ২৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত ২২টি বেটের সঙ্গে যুক্ত থেকেছে, যার মোট মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় আজকের তারিখে ১.৬৬ কোটি টাকা। অভিযোগ জয়ের অর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে।

এই দুজনকেই ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে শুনানি হবে।

কোন পর্যায়ের টেনিসে সবচেয়ে বেশি গড়াপেটা হয়ে থাকে?

সমস্যা সবচেয়ে বেশি নিচের পর্যায়ে, বিশেষ করে ফিউচার ইভেন্টসে। মিশর ও ব্রাজিল নিচের পর্যায়ে অসংখ্য প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, যে কারণে এখানে সিন্ডিকেট ম্যাচ ফিক্সিংয়ে মনোযোগ দেয় সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ আমেরিকাতেও অন্তত একটি চ্যালেঞ্জার প্রতিযোগিতা ও রিও দে জেনেইরোয় এটিপি ৫০০ প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু যত উঁচু মানের প্রতিযোগিতা, গড়াপেটার সম্ভাবনা নজরদারির কারণে তত কম।

নিচের স্তরে ম্যাচ গড়াপেটা এত বেশি কেন?

যেসব প্রতিযোগীরা এই প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশ নেন, তাঁরা অনেকটাই নিচের পর্যায়ের এবং যেসব ইভেন্টের প্রাইজ মানি বেশি, সেখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না। এই খেলোয়াড়েরা সার্কিটে অপরিচিত এবং এই পর্যায়ের খেলায় প্রাইজ মানি কম হওয়ায়, এঁরা সহজ শিকার হয়ে ওঠেন। ভিক্টোরিয়া পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে কুমার ও সিং-এর দল যাদের টার্গেট করত, তাঁদের সবাই ক্রমপর্যায়ে ২০০-র নিচে।

বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মধ্যে আর্থিক বিভাজন কীরকম?

জার্মানির নাসলোচে অনুষ্ঠিত এম ২৫ প্রতিযোগিতা (যা ফিউচার ইভেন্টের মধ্যে সর্বোচ্চ)র বিজয়ী পান ৩৬০০ মার্কিন ডলার। এর থেকে এক ধাপ ওপরের প্রতিযোগিতা ব্যাঙ্কক চ্যালেঞ্জারে এই অর্থ দ্বিগুণ, ৭২০০ মার্কিন ডলার। দুটি ক্ষেত্রেই টুর্নামেন্ট জেতার জন্য নকআউট পর্যায়ে প্রতিযোগীকে পাঁচটি ম্যাচ জিততে হয়। এদিকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মূল ড্রয়ের প্রথম রাউন্ডে হেরে গেলে পাওয়া যায় ৯০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার যা ৬২ হাজার মার্কিন ডলারের সামান্য কম। এই সব প্রতিযোগিতাই অনুষ্ঠিত হয়েছে একই সপ্তাহে, শুরু হয় জানুয়ারির ২০ তারিখে।

প্রাইজ মানির এই বৈষম্য ফের একবার আলোচনায় উঠে এসেছে কোভিড-১৯ অতিমারীর জেরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। এর ফলে নিচের পর্যায়ের খেলোয়াড়রা রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন।

উঁচু পর্যায়ের খেলোয়াড়দের ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়ার কোনও ঘটনা রয়েছে?

এ বছরের জানুয়ারি মাসে বিশ্বপর্যায়ের প্রাক্তন ৬৯ তম ব্রাজিলের জাওা সুজাকে ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন সারা জীবনের জন্য নির্বাসন দেয়। তাঁর বিরুদ্দে ব্রাজিল, চেক প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো ও আমেরিকায় চ্যালেঞ্জার ও ফিউচার ইভেন্টে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সুজার বিরুদ্ধে তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগও রয়েছে।

টেনিসের গভর্নিং বডি কি বেআইনি কাজকর্মের হদিশ জানতে বেটিং ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে?

হ্যাঁ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ২০০৭ সালে বিশ্বের চার নম্বর নিকোলাই ডাভিডেঙ্কে ৮৭ নম্বর ক্রমপর্যায়ের আর্জেন্টিনার মার্টিন ভাসালো আর্গুয়েলোর সঙ্গে খেলা চলাকালীন নিজেকে সরিয়ে নেন। পোল্যান্ডের একটি এটিপি প্রতিযোগিতায় খেলা চলাকালীন বেটিং সংস্থা বেটফায়ার নজর করে মোট বাজির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৪ মিলিয়ন পাউন্ড, যা সেকেন্ড রাউন্ড ম্যাচের বেটিংয়ের সাধারণ পরিমাণের ১০ গুণ। এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ এই বেট মূলত ধরা হয়েছিল আর্গুয়েলার ম্যাচ জেতার পক্ষে, যদিও ডাভিডেঘ্কো প্রথম সেট জিতে গিয়েছিলেন।

বেটফায়ার সমস্ত বেট বাতিল করে দেয় এবং গোটা বিষয়টি এটিপিকে জানায়। এটিপি তদন্ত শুরু করে, তবে এক বছর পর দুই খেলোয়াড়কেই ক্লিনচিট দেওয়া হয়।

গভর্নিং বডি কি তদন্তের ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয়?

পুরোটা নয়। ২০১৬ সালে বিবিসি ও বাজফিড নিউজ এক তদন্ত চালিয়ে দেখেছিল ক্রমপর্যায়ের ৫০-এর মধ্যে থাকা ১৬ জন প্লেয়ারের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছুডে় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এর মধ্যে প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবজয়ীরাও রয়েছেন। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে ২৮ জন প্লেয়ারের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠে।

তবে এসব কোনও বিষয় নিয়েই কর্তৃপক্ষ এগোয়নি, তার কারণ ১০ বছরের পুরনো ঘটনা ঘাঁটার ব্যাপারে এটিপির অনীহা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

tennis
Advertisment