টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে সে দিন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন বলিউডের এক তারকা। এ কী, ফলোয়ারের সংখ্যা এত কমল কী করে! না, এক দুই নয়, হাজারের হাজারে কমেছে যে! কী করে এবার বি-টাউনে মুখ দেখাবেন! হে ভগবান, শক্তি দাও-- ছলছল করে উঠল ওই সেলিব্রিটির চোখ। হ্যাঁ, গল্প হলেও সত্যি। এমনটা হচ্ছে তো! ভাল সংখ্যাতেই হচ্ছে। যাঁদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটছে, মানে ফলোয়ার ফুরফুর করে যাঁদের কমে গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন অনুপম খের। ৩৬ ঘণ্টায় তিনি ৮০ হাজার ফলোয়ার হারিয়েছেন। ১০ জুন অনুপম টুইটারের উদ্দেশে একটি টুইটে লেখেন, 'গত ৩৬ ঘণ্টায় ৮০ হাজার ফরোয়ার বিয়োগ হয়েছে। জানি না, অ্যাপের কোনও সমস্যা, না কি অন্য কিছু। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। অভিযোগ নয়।'
অনেকে অবশ্য এর পর বলতেও শুরু করেন, মহামারিকালে যখন বহু মানুষ তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তখন অনুপমের এই ফলোয়ার খোয়ানো নিয়ে চিন্তা বিসদৃশ। কিন্তু এই ভাবে কী করে ফলোয়ার হু হু করে হারিয়ে যাচ্ছে টুইটারে? সেই প্রশ্নে সরগরম নেটিজেন-দুনিয়া। বছর তিন আগে অমিতাভ বচ্চনেরও ফলোয়ারে বড় সংখ্যক বিয়োগ হয়ে যায় হঠাত্ই। কমেছিল ৪ লক্ষ ২৪ হাজারের বেশি। শাহরুখ খান ফলোয়ার হারান ৩ লক্ষ ৬২ হাজারের বেশি, সলমন খান হারান ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৮৮৪ ফলোয়ার।
ফল অফ ফলোয়ার নিয়ে কী বলছে টুইটার?
indianexpress.com-কে টুইটার একটি বিবৃতিতে বলেছে, কথোপকথনের সুরক্ষায় টুইটার সজাগ, ফলে তারা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের বৈধতা পরখ করে, তাতেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যতক্ষণ না কোনও অ্যাকাউন্টের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে, ততক্ষণ তাদের বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। ফলে কারও ফলোয়ার হিসেবে সেই সব ইউজার থাকতে পারছে না, আচমকাই ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে। টুইটার প্রতিদিনই ক্লিন-আপ মানে টুইটারসাগরে ঝাড়ু দেয়, আর প্রতিদিনই এমন বহু অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই বলছেন, টুইটারের এই কাজটি সত্যিই দরকারি। আর এতেই অনেক সেলিব্রিটির ফলোয়ার ভ্যানিশের সংখ্যা হয়ে যাচ্ছে পাহাড় প্রমাণ।
কী করে টুইটার কাজসাজি ধরতে পারে?
টুইটার বলছে, যদি অন্যকে ভুল পথে চালাতে আক্রমণাত্মক বা বিভ্রান্তিকর কাজকর্ম করে কোনও ইউজার, মানে ফ্ল্যাটফর্ম ম্যানিপুলেশন করে, টুইটার নেটওয়ার্ক তাকে ধরে ফলে। যে সব উপায়ে এই কাজটি রমরমিয়ে চলে, তার মধ্যে একটি ফেক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার। আবার, যদি কোনও রিয়েল ইউজার নিজের অ্যাকাউন্টে এমন কোনও তথ্য দেয়, যা বিভ্রান্তিকর, তাও ওই ফ্ল্যাটফর্ম ম্যানিপুলেশনই হবে। টুইটারের পলিসি অনুযায়ী, চুরি করা প্রোফাইল পিকচার, অন্য কারওর প্রোফাইলের বায়োগ্রাফি ব্যবহার, প্রোফাইলে ভুল লোকেশন দেওয়া, ইত্যাদি সবই ওই ম্যানিপুলেশনের তালিকায়। দেখা যায়, একই নামে বহু অ্যাকাউন্ট ছড়িয়ে টুইটার সমুদ্রে। বিশেষ করে কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির নামে গাদা অ্যাকাউন্ট গজিয়ে ওঠে। টুইটারের স্ক্যানারে সেই সবই থাকে। গণ্ডগোল ধরা পড়লে বা ফেক অ্যাকাউন্ট দেখলেই কচাকচ তাদের স্পিকটি নক করে দিতে এই সোশ্যাল সম্রাটের হাত কাঁপে না।
কৃত্রিম ভাবে ফলোয়ার বাড়ানো নিয়ে টুইটার কী বলছে?
এক সময় গোয়ালে কার কত গরু, তা নিয়ে গর্ব চলত। এখন গরু রাজনীতির ক্যারেক্টার। আর রাজনীতিক থেকে ফিল্ম স্টার সকলেই টুইটারে কার ফলোয়ার কত, তা নিয়ে গর্বের প্রতিযোগিতা করেন। ফলে ফলোয়ার-সংখ্যা কৃত্রিম ভাবে বাড়ানোর যেন ধুম লেগেছে। চলতে থাকে ফলোয়ার কেনাবেচা। এই কাজ পুরোটাই নির্জলা নিষিদ্ধ। কিন্তু তাতে কী বেশ কয়েকটি অ্যাপের সাহায্যে এটা সহজেই হয়ে যায়। ফেক ইউজারের ফলোয়ার যেমন কেনা যায়, তেমনই আসল ইউজারেও যায়। এবং সমুদ্র মন্থন করে তাদের খুঁজে বার করতে থাকে টুইটার, তাদের আন-ফলো করে দেয়। এখন যদি নিজের অ্যাকাউন্টে কেউ নকল ফলোয়ারের খনি পুষে রাখেন, তবে তাঁর কপালে দুঃখ ঘনিয়ে উঠবেই। কখন যে সে সব ফড়িংয়ের মতো উড়ে হারিয়ে যাবে, কেউ জানে না।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন