২ জুন মেঘালয় স্বাস্থ্য দফতর নতুন এক হেলথ প্রটোকল জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে ধরে নেওয়া হচ্ছে সমস্ত রাজ্যবাসীই নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গবিহীন বাহক। এ ভাবেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরছেন তাঁদের মাধ্যমে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যাবে বলে এই প্রটোকলে বলা হয়েছে।
নির্দেশে বলা হয়েছে “যেহেতু গোষ্ঠী সংক্রমণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে, ফলে রাজ্যের উচিত নিজেকে সক্রিয় ভাবে প্র্স্তুত করা”। এই ঘোষণার পিছনে চতুর্স্তরীয় পরিকল্পনা রয়েছে যেখানে শুধু রাজ্যে যাঁরা প্রবেশ করছেন তাঁদের সকলের টেস্টিং ও আইসোলেশনের কথাই বলা নেই, একই সঙ্গে একটি মনস্তাত্ত্বিক মডেলের কথাও বলা হয়েছে যাতে ব্যবহারে বদল ও ট্রেনিং মডিউলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে ধারণাটা কী?
মেঘালয়ের স্বাস্থ্য কমিশনার তথা সচিব সম্পত কুমারের কথায়- “এই অতিমারীর জেরে দু ধরনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে - প্রথম জীবনহানির আশঙ্কা, দ্বিতীয়ত জীবনধারণের উপায় হারানোর আশঙ্কা। সে জন্যই আমরা চাইছি এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে যাতে আপনার সুরক্ষার সঙ্গে আপনার জীবনযাপনের উপায়ের সুরক্ষাও দেওয়া যায়- কারণ সত্যি কথাটা হল আপনাকে কোভিডের সঙ্গেই বাঁচতে হবে।”
কোভিড-১৯ উপসর্গবিহীন সংক্রমণ কতটা গুরুতর, তথ্যপ্রমাণ কী বলছে
সম্পৎ কুমার গ্রামোন্নয়ন ও স্বাস্থ্য দুই বিভাগের দায়িত্বেই রয়েছেন। তিনি বললেন, “নিজেদের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ কতদূর, এ নিয়ে একজন কতটা অনুভব করেন, তার উপর বিষয়টি নির্ভর করছে।”
তিনি বলেন, “বিষয়টা হল সমস্যাটা যে ভিতরের সেটা বোঝা, যে সময়ে আপনি ভাববেন যে আপনি করোনা পজিটিভ, তখন থেকেই আপনার পুরো আচরণ পাল্টে যাবে- আপনি আরও সাবধান হয়ে যাবেন এবং নিজের কাজকর্মের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে পড়বেন, এবং তার ফলে গোষ্ঠী সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।” এই আইডিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিড-১৯-এর সঙ্গে বাঁচার আচরণগত পরিবর্তন মডেল’ (Behaviour Change Model for living with COVID-19)।
এর প্রয়োগ হবে কীভাবে?
নির্দেশ অনুসারে “যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্রমাগত পরীক্ষা করা হচ্ছে, ততক্ষণ রাজ্যের সকলেই ক্যাটিগরি এ রোগী।”
সম্পৎ কুমারের কথায় “এর ফলে ধরে নেওয়া হল প্রত্যেক ব্যক্তিই কোভিড১৯ ভাইরাসের উপসর্গবিহীন চলমান বাহক, যিনি অন্যদের মধ্যে অজ্ঞাতে ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারেন। এ ক্যাটিগরি রোগীদের তিনটি আচরণ বাধ্যতামূলক ভাবে মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরা, হাতের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।”
এ জন্য বিভাগের তরফ থেকে গোটা রাজ্যবাসীকে তিন ভাগে ভাগ করে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, প্রথম ৬৫ ঊর্ধ্ব নাগরিক, দুই, যাঁদের অন্য অসুস্থতা রয়েছে এবং তিন, চলমান গোষ্ঠী, যাঁরা ক্রমাগত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদেরও ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর উঁচু মানের প্রশিক্ষকদের সহযোগিতায় এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবে। যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষ করবেন, তাঁদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সম্পৎ কুমার জানালেন, “এখন আমরা প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এঁদের মধ্যে গ্রামপ্রধান যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছে বেসরকারি এজেন্সি (ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন, মার্কেট ইউনিয়ন, স্কুল শিক্ষক)।” বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের পেশার উপর নির্ভর করে নিয়মের তারতম্য থাকবে।
হোম কোয়ারান্টিনের সেরা অভ্যাস
প্রশিক্ষণের মূল বিষয়গুলি কী কী?
দুটি মূল বিষয় হল চেক লিস্ট ও সেলফ হেলপ ডায়েরি। সম্পত বলেন, বয়স্ক নাগরিক ও যাঁদের অন্য অসুস্থতা রয়েছে তাঁরা নিজেদের উপর নজর রাকার জন্য সেলফ হেলপ ডায়েরি ব্যবহার করতে পারেন। এঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। চলমান কর্মিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ আসলে মনোযোগী হবার মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের উপর নজর দেওয়ার জন্য- মূলত এখন তাঁরা কী করছেন, এবং যেহেতু তাঁরা প্রত্যেকেই কার্যত উপসর্গবিহীন বাহক, ফলে প্রতিটি পদক্ষেপের উপর নজর রাখা। এই তিন ভাগের মানুষদের কাছেই চেক লিস্ট থাকবে - যার মধ্যে থাকবে হাতের স্বাস্থ্য, সামাজিক দূরত্ব, হাঁচি-কাশির নিয়মাবলীর মত মডেল প্রশ্ন। ট্রেনিংয়ের সময় তা দেওয়া হবে।
ফলাফলের নিশ্চয়তা কী?
সম্পৎ বলেন, “প্রথমত আমাদের মনে রাখতে হবে যে আচরণগত বদল মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে ঘটানো সম্ভব নয়। আমাদের আশা বারংবার অভ্যাসের ফলে, সেলফ হেলপ ডায়েরি ও চেক লিস্টের ব্যবহার ও নজরদারির ফলে পরিবর্তন আসবে।”
চেকলিস্ট এমন করে বানানো হয়েছে যাতে একদিনের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তি নিজেকে ১০-এর মধ্যে নম্বর দিতে পারেন। যেমন প্রশ্ন থাকতে পারে, “আমি কি বাড়ি ফিরে স্নান করেছি বা ভাল করে হাত পা ধুয়েছি?” উত্তর হ্যাঁ হলে নম্বর মিলবে। সম্পৎ বললেন স্থানীয় স্তরে এই বদল ঘটানোর বিষয়টি গ্রামপ্রধানের উপর বিশেষ করে নির্ভর করছে।
সরকার সামাজিক পুরস্কারের কথাও বিবেচনা করছে - যেমন এই পয়েন্ট দোকানে রিডিম করার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানালেন সম্পৎ। তিনি আশা প্রকাশ করেন দায়িত্বের বদলের ফলে “এমন একটা সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে যাতে আতঙ্ক কাটবে এবং অন্যদের প্রতি সহানুভুতিশীল মনোভাবে উৎসাহ বাড়বে।”