পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দু ও বিদেশিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট এই রীতি বদলের পরামর্শ দিয়েছিল। একই পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসনও। এবার ওড়িশার রাজ্যপাল গণেশি লালও ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দিরে বিদেশিদের প্রবেশের পক্ষে সওয়াল করেছেন। যার ফলে ফের এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ভুবনেশ্বরে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল গণেশি লাল বলেন, 'যদি একজন বিদেশি গজপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেন। সেবায়েতদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। জগৎগুরু শংকরাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তবে, তাঁকেও সরাসরি চকনয়না (জগন্নাথদেবের অপর নাম) দর্শনের অনুমতি দেওয়া উচিত। তবে, এটা আমার নিজস্ব দৃষ্টভঙ্গি। জানি না, এটা জনসাধারণ গ্রহণ করবে কি করবে না!' ১২০০ বছরের পুরোনো এই জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত এবং জগন্নাথ মন্দিরের গবেষকরা অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই ওড়িশার রাজ্যপালের প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। তাঁদের বক্তব্য, মন্দিরের ঐতিহ্য এবং রীতি মোটেও ভঙ্গ করা উচিত নয়।
জগন্নাথ মন্দির
জগন্নাথ মন্দির হিন্দুদের চার ধামের অন্যতম। এই মন্দিরে ভগবান জগন্নাথকে শ্রীবিষ্ণুর প্রতিরূপ বলে মনে করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরে জগন্নাথদেবের পাশাপাশি তাঁর দাদা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকেও পুজো করা হয়। কেবলমাত্র হিন্দুদের এই মন্দিরের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে তিন দেব-দেবীকে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হয়। মন্দিরের সিংহদরজায় (প্রবেশপথে) পরিষ্কার লেখা আছে, 'কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য'।
কেন অহিন্দুদের জন্য নয়?
এটা কয়েক শতাব্দীর পুরোনো রীতি। যদিও এর কোনও স্পষ্ট কারণ কোথাও উল্লেখ করা নেই। তবে, ইতিহাসবিদদের একাংশের ধারণা, মুসলিম শাসকরা বারবার এই মন্দিরের ওপর হামলা চালিয়েছিল। সেই কারণেই সম্ভবত সেবায়েতরা অহিন্দুদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আবার অনেকের মতে, নির্মাণের পর থেকে এটাই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রীতি।
পতিতপাবন দর্শন
ভগবান জগন্নাথের অপর নাম পতিতপাবন। যার অর্থ, 'পতিতদের উদ্ধারকারী'। সেই কারণে যাঁদের মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না, তাঁরা মন্দিরের সিংহদুয়ারে পতিতপাবনকে দর্শনের সুযোগ পান।
কখন দর্শনের সুযোগ মেলে?
জগন্নাথ বা জগতের নাথ বা বিশ্বের প্রভু 'বড় দণ্ড' বা রাজপথে বছরে একবারই নেমে আসেন। সেটা ৯ দিনের রথযাত্রার সময়। প্রতিবছর জুন-জুলাইয়ে এই রথযাত্রা হয়। সেই সময় জগন্নাথদেব তাঁর দাদা ও বোনকে নিয়ে জন্মস্থান মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে যান। সেই সময় অহিন্দু থেকে বিদেশি, সব বিশ্ববাসী জগন্নাথদেবকে দর্শনের সুযোগ পান।
আরও পড়ুন- বীরসেনার ‘আত্মত্যাগকে’ স্মরণ মোদীর, ‘পরমবীর চক্র’ প্রাপকদের নামেই ২১ দ্বীপের নামকরণ
অতীতের বিতর্ক
১৯৮৪ সালে সেবায়েতরা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রবেশের বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ, হিসেবে সেবায়েতরা জানিয়েছিলেন যে ইন্দিরা গান্ধী অহিন্দুকে বিয়ে করেছেন। বাধ্য হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কাছেই রঘুনন্দন গ্রন্থাগার থেকে জগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে পুজো দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
২০০৫ সালের নভেম্বরে, থাইল্যান্ডের রাজকুমারী মহাচক্রী শ্রীনিধর্ন ওড়িশা সফরকালে বাইরে থেকে মন্দির দর্শন করেছিলেন। তাঁকেও মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০০৬ সালে সুইডেনের নাগরিক এলিজাবেথ জিগলারকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি এই মন্দিরকে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। তারপরও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হওয়ায় এলিজাবেথকে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের পরামর্শদাতা প্যারীমোহন মহাপাত্র জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তিনি ওড়িশার পর্যটনে গতি আনতে এই সওয়াল করেছিলেন। প্যারীমোহনের এই সওয়ালের কথা জানার পর ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যার জেরে মহাপাত্রকে তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে হয়েছিল।
Read full story in English