যমুনা সম্প্রতি তার তির লঙ্ঘন করেছে। দিল্লি শহরের বড় অংশ প্লাবিত করেছে। কারণ, ভারী বৃষ্টিপাত আর হরিয়ানার হথনিকুণ্ড ব্যারাজের ছাড়া জল। এই জলের স্তর গত ২০ জুলাই ২০৮.৬৬ মিটারে উন্নীত হয়েছিল। দিল্লির রেকর্ড অনুযায়ী যা সবচেয়ে খারাপ। বন্যার জলে রিং রোড ডুবিয়ে দিয়েছে। কাশ্মীরে গেট, সিভিল লাইন, আইটিও এবং রাজঘাট জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দিল্লির সমস্যা
তিনটি প্রাথমিক সমস্যা রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী বন্যার কারণ হচ্ছে– জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন এবং নদীর খাত অগভীর হয়ে যাওয়া এবং বন উজাড় হয়ে যাওয়া। দিল্লিতে, বিশেষত আমরা কয়েক দশক ধরে নদীর তীরে নিচু অঞ্চলের উন্নয়ন দেখে আসছি। তা সেতুই হোক বা আন্ডারপাস অথবা ফ্লাইওভার। উদাহরণ স্বরূপ, উত্তর-পূর্ব দিল্লির দিকে সিলামপুরে, দিল্লি মেট্রো নদীর ধারে ৬৫ একরের বেশি জায়গা উদ্ধার করেছে। পরবর্তীকালে কমনওয়েলথ গেমস গ্রাম, অক্ষরধাম মন্দির এবং দিল্লি মেট্রো হাউজিং-সহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর কাজ হয়েছে। এগুলো নদীর তলদেশে চাপ সৃষ্টি করেছে। জলপ্রবাহের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।
উপায়
স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা সাহায্য করবে না। একটি বিস্তৃত জল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা থাকতে হবে। যা যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে দ্রুত কাজ করবে। পাশাপাশি শহরের দারিদ্র এবং নদীগর্ভের দিকেও নজর দিতে হবে। সর্বোপরি, জল নিয়ে কাজ করা উচিত। জলের বিরুদ্ধে কাজ করলে চলবে না। দিল্লি মাস্টার প্ল্যানে বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, পানীয় জলের সরবরাহ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য জলের ব্যবস্থার কথা আছে। এবার বন্যা রোখার নিয়েও প্রশাসনের কাজ করা উচিত। শতবর্ষ পুরোনো বন্যা রোখার ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করার সময় এসেছে।
বেঙ্গালুরু
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাত দিনের ব্যবধানে, বেঙ্গালুরু দু'বার ডুবেছে। তার মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি যা দক্ষিণের এই শহরকে ডুবিয়েছিল, হয়েছিল অস্বাভাবিক বেশি। দেখা গিয়েছে যে এই শহর অনেক কম বৃষ্টিতেও থমকে গিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে, প্রায় একঘণ্টা স্থায়ী একটি ভারী বর্ষণ বেঙ্গালুরু শহরের বিভিন্ন অংশে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। মহিলার জীবনহানি ঘটিয়েছিল। তাঁর গাড়িটি কেআর সার্কেল আন্ডারপাসে ডুবে যাওয়ায় তিনি মারা গিয়েছিলেন।
সমস্যা
বেঙ্গালুরু একটি শৈলশিরার শীর্ষে রয়েছে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯২৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এই ভূমিটি বিস্তৃতভাবে দু'দিকে ঢালু হয়ে কাবেরী এবং পালার নদীর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। প্রযুক্তিগতভাবে, জলের সেদিকেই প্রবাহিত হওয়া উচিত। গোটা সমস্যাটি দুর্বল কারিগরি প্রক্রিয়ার জন্য হচ্ছে। যেমন, বেঙ্গালুরুর জল সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন বোর্ড বছরের পর বছর ধরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আপগ্রেড করেনি। অথবা একটি সঠিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেনি।
আরও পড়ুন- মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অনাস্থা, কী এই প্রস্তাব?
যে পলি অপসারণ করা হয়, তা ড্রেনের পাশেই ফেলে দেওয়া হয়। একবার বৃষ্টি হলে, সেই পলি আবার ড্রেনে চলে যায়। যদি ড্রেনটি ১০ ফুট গভীর হয়, তাতে প্রায় দুই-তিন ফুট পলিই থাকে। যা রীতিমতো ড্রেনের মধ্যে এঁটে থাকে। আর, বৃষ্টির জল নিষ্কাশনের জন্য নর্দমার ক্ষমতা এক-চতুর্থাংশ কেড়ে নেয়। তাই ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে সব ভাসিয়ে দেয়। আবার কিছু নাগরিক আছেন, যাঁরা বারবার বলার পরও ড্রেনের মধ্যে প্লাস্টিকের মত জিনিসপত্র ফেলেন। যাকে রীতিমতো সাধারণ বোধ-বুদ্ধির অভাব বলে কঠোর সমালোচনা করেছে প্রশাসন।