scorecardresearch

Explained: পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রণাম করলেন, কেন এই দ্বীপরাষ্ট্র অতি গুরুত্বপূর্ণ?

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র।

Modi and Papua
পাপুয়া নিউ গিনির পোর্ট মোরেসবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রণাম করছেন পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে।

পাপুয়া নিউ গিনিতে বিরাট সমাদর পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে নীচু হয়ে নরেন্দ্র মোদীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। এই দ্বীপরাষ্ট্র ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোদীই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পাপুয়া নিউ গিনি সফর করলেন। সন্ধ্যার পর কোনও নেতা এলে, পাপুয়া নিউ গিনিতে সাধারণত আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয় না। সেটাই সেখানকার রীতি। কিন্তু, মোদীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটল। আর, এসবের মধ্যেই চিনকে কার্যত কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৪টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের নেতাদের সোমবার বলেছেন, ভারত উন্নয়নের এক ‘নির্ভরযোগ্য’ অংশীদার হবে। এর আগে যদিও বিশ্বস্ত বলে বিবেচিতরা ‘প্রয়োজনের সময় আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

পাপুয়া নিউ গিনির পোর্ট মোরেসবিতে ফোরাম ফর ইন্ডিয়া-প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কোঅপারেশন (এফআইপিআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা করে মোদি বলেন, ‘যাদের আমরা বিশ্বস্ত বলে মনে করতাম, দেখা গেল তারা প্রয়োজনের সময় আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে, একটি পুরনো কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বন্ধু প্রকৃতপক্ষে একজন বন্ধু। আমি আনন্দিত যে ভারত এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে (কোভিড অতিমারি) তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের বন্ধুদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেটা ভ্যাকসিন হোক বা প্রয়োজনীয় ওষুধ, গম হোক বা চিনি- ভারত তার সামর্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমস্ত অংশীদার দেশকে সহায়তা করেছে।’ প্রশ্ন হল, পাপুয়া নিউ গিনি ভারতের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

কৌশলগত কারণ
পাপুয়া নিউ গিনি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে অবস্থিত। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে চীন তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মোকাবিলা করতে চাইছে। চীন পাপুয়া নিউ গিনিতে বড় বিনিয়োগ করেছে। পরিকাঠামো এবং স্কুলে অর্থদান করেছে। যা, অনেকের মতে সামরিক ও কূটনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা। গত বছর চিন একই অঞ্চলে অবস্থিত সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তারপর সোমবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাপুয়া নিউ গিনি একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যা প্রশান্ত মহাসাগরে ‘সামরিকীকরণের’ বিরোধিতাকারী দ্বীপের বাসিন্দাদের প্রতিবাদকে আরও জোরদার করেছে।

ভারত ইতিমধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। এই সব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, কিরিবাতি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ প্রজাতন্ত্র, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, নিউ, পালাউ, সামোয়া, টোঙ্গা, টুভালু এবং ভানুয়াতু। FIPIC শীর্ষ সম্মেলন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক ফিজি ও পাপুয়া নিউগিনি সফর ভারতের বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ২০১৪ সালে মোদির ফিজি সফরের সময় FIPIC শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালে, দ্বিতীয় FIPIC শীর্ষ সম্মেলন জয়পুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি হল তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন।

জনসংখ্যা ও অর্থনীতি
পাপুয়া নিউ গিনি হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপরাষ্ট্র। এটি একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে প্রধানত গ্রামীণ জনসংখ্যা রয়েছে। এই দ্বীপরাষ্ট্র ভাষাগতভাবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় দেশগুলোর একটি, যেখানে ৮০০টিরও বেশি ভাষায় কথা বলা হয়। সিআইয়ের দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী, এই দ্বীপরাষ্ট্রে জনসংখ্যা ৯,৮১৯,৩৫০। অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় পাপুয়া নিউ গিনিতে বাস করে। তারা কৃষিনির্ভর জীবিকায় বেঁচে থাকে। তবে, দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় বাইরের বিশ্বের সঙ্গে পাপুয়া নিউ গিনির যোগাযোগ বেশ কম। ১৮৮০-র দশক থেকে ১৯৭৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত না-হওয়া পর্যন্ত এই দ্বীপরাষ্ট্রের কিছু অংশ জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেন দ্বারা শাসিত হয়েছে।

আরও পড়ুন- কর্ণাটকের হারেও নীতিতে অনড় মোদী-শাহরা, পরাজয়ের দায় চাপাচ্ছেন রাজ্য নেতাদের ঘাড়ে

ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, ‘পাপুয়া’ শব্দটি মালয় ‘পাপুয়াহ’ থেকে এসেছে। যা মেলানেশিয়ানদের কুঁচকে যাওয়া চুলকে বর্ণনা করে। স্প্যানিশ অভিযাত্রী Ynigo ORTIZ de RETEZ ১৫৪৫ সালে আফ্রিকার গিনির উপকূলের মানুষের সঙ্গে স্থানীয়দের সাদৃশ্য লক্ষ্য করার পর নিউ গিনি দ্বীপকে ‘নুয়েভা গিনি’ নাম দিয়েছিলেন।

পাপুয়া নিউ গিনি কমনওয়েলথের অংশ। ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় চার্লস সরকারিভাবে এই দ্বীপরাষ্ট্রের রাজা। রাজার প্রতিনিধিত্ব করেন গভর্নর-জেনারেল। যিনি সংসদ কর্তৃক মনোনীত হন। প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। জেমস মারাপে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর-জেনারেল হলেন বব দাদা। যার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীও তাঁর সাম্প্রতিক সফরে দেখা করেছেন।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Explained news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Why papua new guinea island country is important for india