হাতে গড়া চাপাতি বা রুটি, খাখরা (গুজরাটের জনপ্রিয় নোনতা খাবার), এবং পরোটার মধ্যে সম্প্রতি তফাৎ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে অথরিটি অফ অ্যাডভানস রুলিং (AAR)। তাদের রায়, তথাকথিত 'রেডি-টু-ইট' পরোটাকে যেহেতু খাওয়ার আগে গরম করতে হয় বা আরও কোনও প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, সেহেতু তার ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি বসবে।
কী মামলা ছিল?
বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত আইডি ফ্রেশ ফুডস নামক একটি সংস্থা, যারা বিভিন্ন 'রেডি-টু-কুক' খাদ্যসামগ্রী, যেমন ইডলি বা দোসা মিক্স, পরোটা, চাপাতি, ইত্যাদি প্রস্তুত করে, তারা AAR-এর দ্বারস্থ হয়ে জানতে চায় যে আটার তৈরি পরোটা এবং মালাবার পরোটা (কিছুটা বাঙালিদের ঢাকাই পরোটার মতো) ১৯০৫ নং অনুচ্ছেদের আওতায় আনা যায় কিনা, যাতে পাঁচ শতাংশ জিএসটি বসানো যায়।
এখানে উল্লেখ্য, দক্ষিণ ভারতীয় পরোটা কিন্তু মূলত আটার তৈরি, উত্তর ভারতীয় ময়দার 'পরাঠা' বা বাঙালি পরোটার সঙ্গেও এর খুব একটা মিল নেই।
রায় কী হলো?
কর্ণাটকের AAR বেঞ্চের মতে, পরোটা HSN (Harmonized System of Nomenclature) কোডের কোনও বিভাগের আওতায় পড়ে না, এবং তাকে খাওয়ার যোগ্য করে তুলতে পরিশোধনের প্রয়োজন, অতএব এটি ২০১৬ নং অনুচ্ছেদের আওতায় আসবে, ১৯০৫ নয়, যার আওতায় পড়ে সম্পূর্ণ রান্না করা খাবার, যেমন কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি, যেগুলি তৎক্ষণাৎ খাওয়া যায়।
AAR-এর বক্তব্য, "খাখরা, প্লেন চাপাতি, বা রুটি হলো সম্পূর্ণ রান্না করা খাদ্য, যা খাওয়ার আগে আর কোনও প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সুতরাং এগুলিকে 'রেডি-টু-ইট' খাদ্য বলা যায়। কিন্তু সেদিক থেকে বিচার্য খাদ্যবস্তু (আটার পরোটা এবং মালাবার পরোটা) শুধু যে খাখরা, প্লেন চাপাতি বা রুটির চেয়ে আলাদা তাই নয়, খাদ্যের চরিত্রগত দিক থেকে এবং লোকমুখেও আলাদা। এগুলিকে মানুষের খাওয়ার যোগ্য করে তুলতে গেলে আরও কিছু প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।"
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ: কিছু খুচরো, উদ্বেগজনক মাইলফলক
খাদ্যের শ্রেণীবিভাগ
অধিকাংশ খাদ্যবস্তু, বিশেষত সেগুলি অত্যাবশ্যকীয় এবং অপরিশোধিত হলে, কোনোরকম জিএসটি-র আওতায় আসে না। কিন্তু পরিশোধিত খাদ্য বা 'প্রসেসড ফুড'-এর ওপর লাগু হতে পারে পাঁচ, ১২, বা ১৮ শতাংশ জিএসটি, যা নির্ভর করে খাদ্যবস্তুর ধরনের ওপর। যেমন ধরুন, পাঁপড় এবং পাউরুটি (ব্র্যান্ডেড বা সাধারণ) জিএসটি ছাড়াই বিক্রি হয়, কিন্তু পিৎজা ব্রেড-এর ওপর পাঁচ শতাংশ জিএসটি লাগু হয়। HSN-এর ১৯০৫ নং অনুচ্ছেদের আওতায় একই আসনে বসানো হয় পিৎজা ব্রেড, খাখরা, প্লেন চাপাতি/রুটি, রাস্ক, এবং টোস্ট করা পাউরুটিকে, যার ওপর বসে পাঁচ শতাংশ জিএসটি।
একইভাবে, তৎক্ষণাৎ খাওয়া যায়, এমন খাদ্যের তালিকায় রয়েছে ব্র্যান্ড-বিহীন নোনতা খাবার, ভুজিয়া বা তার মিশ্রণ, এবং ওই জাতীয়, যেগুলিতে বসে পাঁচ শতাংশ জিএসটি, তবে এই একই জিনিসের গায়ে যদি ব্র্যান্ডের তকমা আঁটা হয়, তবে জিএসটি-র হার বেড়ে হয়ে যায় ১২ শতাংশ।
পক্ষে এবং বিপক্ষে
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রেণীর সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে ট্যাক্সের হারে সমতা আনলে এই বিভাজন জনিত বিতর্ক এড়ানো যেতে পারে, তবে সরকারি আধিকারিকরা দাবি করেছেন, এটি বিভিন্ন সামগ্রীকে শ্রেণীভুক্ত করার সাধারণ প্রক্রিয়া, যা অন্যান্য দেশেও অনুসৃত হয়। তাঁদের আরও বক্তব্য যে জমাট বাঁধা বা 'ফ্রোজেন' পরোটাকে সংরক্ষণ করে, সিল করে, প্যাকেটে ভরে, ব্র্যান্ড করে বেশি দামে বিক্রি করা হয়, এবং যেহেতু এটি প্রধান খাদ্য নয়, সেহেতু সেই শ্রেণীর মানুষই এটি খান, যাঁদের কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। যেমন দুধের মপ্ত খাদ্যের ওপর ট্যাক্স বসে না, কিন্তু সেই দুধই টেটরাপ্যাকে বিক্রি হলে পাঁচ শতাংশ, এবং 'কন্ডেনসড মিল্ক' হিসেবে বিক্রি হলে ১২ শতাংশ কর বসে।
ওই আধিকারিকদের আরও বক্তব্য, FMCG বা 'ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস' সংস্থাগুলি পরিশোধিত খাদ্য শিল্পের সংগঠিত ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে, এবং বেশি দামে 'প্যাকেজড ফুড' বিক্রি করে তা থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ করে। সুতরাং বেশি পরিমাণ কর এ ক্ষেত্রে অন্যায্য নয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন