চার ইনিংসে তিনটে সেঞ্চুরি, তার মধ্যে একটা ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্টে ওপেনার হিসেবে রোহিত শর্মার ব্যর্থতা নিয়ে চারপাশে গজিয়ে ওঠা সন্দেহের তিরগুলি এখন উবে গিয়েছে। বরং, তাঁকে এ জায়গায় খেলানোর পরিকল্পনা, অন্তত উপমহাদেশে মাটিতে, একটি মাস্টারস্ট্রোক বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
দৃষ্টিভঙ্গি
৫০ ওভারের ম্যাচেও রোহিতের খেলার ধরন এই রকমই- দেখেশুনে শুরু, তারপর রানের গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো, একেবারে শেষে তুবড়ি। এক ভাবে টেস্টের ক্ষেত্রেও এই দর্শনেই চলেছেন তিনি। এই রাঁচিতে, যে ডবল সেঞ্চুরিটি তিনি করলেন, তার প্রথম ৫০ বলে তিনি করেন ২০ রান। নতুন বল যথন বাঁক খাচ্ছে, সে সময়ে যে সব বল প্রয়োজন নেই, সেগুলি খেলার চেষ্টাই করেননি তিনি।
ফোর্থ কিংবা ফিফথ স্টাম্পের লাইনের কাছাকাছি বল তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। আগে ইনিংসের গোড়াতেও এ ধরনের বল তিনি ক্রিজে দাঁড়িয়ে ব্যাট বাড়ানোর চেষ্টা করতেন বটে, কিন্তু সেসব অভ্যেসের কথা পুরনো হয়ে গিয়েছে। শরীরের কাছে আসা সব বলই তিনি বলের লাইনে গিয়ে পিছনে ব্যাট নিয়ে গিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেন।
মজবুত রক্ষণ এবং টেম্পারামেন্টের উন্নতির মধ্যে দ্বিতীয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল রোহিতের কাছে। একবার ক্রিজে জমে যাওয়ার পর এখন তাঁর উইকেট পাওয়া শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন আর আগের মত নয়, ফিল্ডিং সাইডকে ক্যাচ প্র্যাকটিস দেওয়ার অভ্যেসও ছেডে়ছেন রো-হিট।
ডিসিপ্লিন, ডিসিপ্লিন, ডিসিপ্লিন
আগে বেশ কয়েকটি টেস্ট ইনিংসে রোহিতকে দেখা যেত শুরু করার পর একই স্ট্রোক বারবার খেলছেন। একদিনের ম্যাচে এই অভ্যাস খেটে গেলেও টেস্টের ক্ষেত্রে বহু ক্ষেত্রেই তা রোহিতকে ব্যর্থতার স্বাদ দিয়েছে। কিন্তু রোহিত খুব হিসেব করে তাঁর এই ত্রুটিটুকু পরিমার্জন করে নিয়েছেন। এর ফলে তাঁর স্ট্রোক খেলতে অসুবিধে হয়েছে এমন নয়, কিন্তু এখন আর তিনি খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্ট্রোক খেলেন না- এবং বোলারদের শেষ করে দেবার উদগ্র আকাঙ্ক্ষায় নিজেই বলি হয়েও যান না।
এখন তিনি লুজ বলের জন্য অপেক্ষা করেন, সে সামান্য লুজ বল হলেও তাকে রেহাই দেন না। তাঁর খেলার এই দিকটাও এসেছে ৫০ ওভার ম্যাচে তাঁর নতুন অ্যাপ্রোচ থেকেই। সামান্য ফুল লেংথ ডেলিভারিও তিনি ড্রাইভ করবেন, সামান্য শর্ট বল হলেই তিনি পুল করবেন। অফ স্টাম্পের বাইরের যে কোনও বল তিনি খতম করবেন, শরীরে বল এলে ডিফেন্স। পরিভাষায় যাকে বলে মার্জিন অফ এরর, তা তাঁর ব্যাটিংয়ে একন অতি, অতি সামান্য।
স্পিনারদের বিরুদ্ধে নির্মম
তাঁর মত নিখুঁত ভাবে ছক্কা হাঁকানোর মত অথবা তাঁর মত নিজেকে বদলাতে পারা ব্যাটসম্যান, প্রায় নেই বললেই চলে। রোহিতের খেলার ধরনের প্রতি ঈর্ষান্বিত স্বয়ং বিরাট কোহলিও। তাঁর মত ক্ষমতা বিশেষ করে স্পিনারদের বিরুদ্ধে, কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরই নেই। কোনও ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বল সীমার বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে স্পিনারদের পক্ষে মনোবল ভেঙে দেওয়ার মত এর চেয়ে বেশি আর কিছু নেই। স্পিনের বিরুদ্ধে চেতেশ্বর পূজারাও মত ব্যাটসম্যানরাও দারুন উপযোগী কিন্তু রোহিতের মত স্পিনারদের মনোবল চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেওয়ার মত আর কেউ নেই। ভাইজ্যাগে ডেন পিয়েট এবং কেশব মহারাজকে তিনি ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলার পর এ দুজন আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি।
হাতে অনেক স্ট্রোক
রোহিত শর্মার হাতে এত ধরনের স্ট্রোক রয়েছে যে বোলারদের পক্ষে তাঁর জন্য ফিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা করাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাঁর নিজের পছন্দের স্ট্রোক বা নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে খেলার প্রবণতা রয়েছে বৈকি। যেমন কভার দিয়ে কবার ড্রাইভ বা ফাইন লেগ ও মিড উইকেটের মাঝামাঝি পুল, কিন্তু একই বলে অন্তত দু রকম শট খেলতে পারেন তিনি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সে সংখ্যাটা দুয়েরও বেশি।