মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার শহর জোহানেসবার্গে ব্রিকস দেশগুলোর সমাবেশে পাঁচ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর তালিকায় সম্প্রসারণ এজেন্ডার শীর্ষে রয়েছে। সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা এবং ইথিওপিয়া সহ মুষ্টিমেয় কিছু আশাবাদী দেশ (সংখ্যাটা ২৩) এই গোষ্ঠীতে যোগ দিতে আগ্রহী। ব্রিকস-এ দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ প্রতিনিধি অনিল শুকলাল মার্কিন আর্থিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে বলেছেন যে গোষ্ঠীর নেতারা ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে গোষ্ঠীর সম্প্রসারণকে মাথায় রেখেছেন। এনিয়ে বিবৃতি দেবেন। বড় পরিবর্তন হতে পারে। যাতে বদলে যেতে পারে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, সেই সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থায় ডলারের ভূমিকা, আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য- এই ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা। যা অনেক উন্নয়নশীল এবং মধ্যম আয়ের দেশের পশ্চিম থেকে মুখ ফেরানোর পর মূল আলোচ্য বিষয়। আর, সেই কারণেই ব্রিকসভুক্ত হতে বিভিন্ন দেশ আরও বেশি করে চাইছে।
চিন এবং রাশিয়ার কাছে ব্রিকস
এশিয়ান সুপার ইকোনমি চিনের কাছে এই সম্মেলন 'আমেরিকানদের বিরুদ্ধে' নিজেদের তুলে ধরার মঞ্চ। রাজনৈতির বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স লি সংবাদমাধ্যমকে এই প্রসঙ্গে বলেন, 'ব্রিকস দেশগুলোর আমেরিকা বিরোধিতা থেকে চিন উপকৃত হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক দক্ষিণের অনেক দেশকে চিনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। আর, এই জন্যই চিন ব্রিকসকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে।' লির মতে, গ্রুপ অফ সেভেন নেতৃস্থানীয় শিল্প দেশগুলোর মতো একটি কার্যকরী, বিশ্বস্ত জোট হতে পাঁচটি দেশের এই গোষ্ঠীকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। তবে বেজিংয়ের জন্য, এটি মূলত মার্কিন-বিরোধী বিশ্বমঞ্চ। বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটির গুন্থার মাইহোল্ডের মতে, রাশিয়াও তার নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ এই মঞ্চে অনুসরণ করছে। মস্কো চায় ব্রিকসে তার মিত্র দেশ বেলারুশ এবং ভেনিজুয়েলাকে আনতে। কারণ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে, ব্রিকস হল রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ।
আরও পড়ুন- ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি! ধনীদের চাপেই আরও দরিদ্র হচ্ছে পিছিয়ে পড়া দেশগুলো?
সবাই সম্প্রসারণ চায় না
পুতিন ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য অংশ নেওয়া ৭১টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে নেই। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে তাঁর এই অনুপস্থিতি। তবে, ব্রিকসভুক্ত সব দেশ যে সম্প্রসারণ চায়, তা কিন্তু নয়। সেই তালিকায় আছে পাঁচ সদস্য গোষ্ঠীর দুই দেশ ব্রাজিল এবং চিনও। মাইহোল্ডের মতে, ভারত, ব্রাজিল এবং চিন তাদের প্রভাব হ্রাস করতে এবং নতুন সদস্যদের নিয়ে নতুন সমস্যায় জড়াতে আগ্রহী নয়। যদি প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠীর বন্ধুদের এই গোষ্ঠীতে আনার চেষ্টা করে, তবে ব্রিকসে ভিন্নমত এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে বলেই মাইহোল্ড মনে করছেন। তাঁর ধারণা, সেক্ষেত্রে সমস্যাটি টেবিলে সংঘাতের অতিরিক্ত সম্ভাবনা বয়ে আনবে। তার মধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিদেশমন্ত্রী নালেদি পান্দর এপ্রিলে বলেছিলেন যে নতুন সদস্যদের ভর্তির মানদণ্ড নিয়ে প্রথমে আলোচনা করতে হবে। তাঁর এই দাবি সম্ভবত ব্রিকসে সংযুক্ত হতে চলা দেশগুলোর কাছে একটা সীমারেখা টেনে দেবে। যে সীমারেখা অনেক দেশই নানা কারণে অতিক্রম করতে পারবে না। এমনটাই ধারণা মাইহোল্ডের।