২০২২-এর নভেম্বরে, দুই সমকামী দম্পতি সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে যুক্তি দিয়েছিলেন যে তাঁরা ভারতীয় পারিবারিক আইনে বিয়ে করতে পারছেন না। ফলে, তাঁদের সাম্য, জীবন এবং স্বাধীনতা, মর্যাদা, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ১০ দিন ধরে শুনানির পর আদালত ২০২৩ সালের মে মাসে তার রায়দান স্থগিত রেখেছিল। ১৭ অক্টোবর চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি পিএস নরসিমহা সমলিঙ্গে বিয়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তবে, প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল এই ইস্যুতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছেন।
বিয়ে করার অধিকার কি মৌলিক অধিকার?
আদালতের সামনে মূল ইস্যুটি ছিল, ভারতীয় সংবিধানের অধীনে কি বিবাহ করার অধিকার আছে? যদি থাকে, তাহলে কি সমকামী/ অ-বিষমকামী দম্পতিদের এই অধিকার ভোগ করতে পারা থেকে বাধা দেওয়া কি বৈষম্যমূলক? উভয় প্রশ্নের উত্তর দৃঢ়ভাবে এবং সর্বসম্মতভাবে নেতিবাচকভাবে দেওয়া হয়েছে। আদালতের মতে বিবাহ হল আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। সমকামী দম্পতিদের এতে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই, যদি না আইন তাঁদের অনুমতি দেয়। আদালতের মতে, এই মুহুর্তে আইন তাঁদের অনুমতি দেয়নি। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৪, বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে বিবাহকে স্বীকৃতি দিতে তৈরি হয়েছিল। তবে, সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে একজন পুরুষ ও নারীকে। পরিশেষে আদালত বলেছে যে, বিবাহ করা কোনও মৌলিক অধিকার নয়। যদিও সংখ্যালঘু বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ হল যে বিয়ের অধিকার অন্যান্য মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সংযুক্ত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং স্বায়ত্তশাসনের অধিকার-সহ বিভিন্ন অধিকারের সঙ্গে যুক্ত।
যদি বিয়ে না-হয়, তাহলে অ-বিষমকামী দম্পতিদের কি একটি একসঙ্গে থাকার অধিকার আছে, যেখানে তাঁরা দম্পতির মত আইনি অধিকার এবং সুরক্ষা ভোগ করতে পারবেন?
এক্ষেত্রেও সংখ্যাগরিষ্ঠের উত্তর এসেছে নেতিবাচক। সলিসিটর জেনারেলের যুক্তি মেনে আদালত দেখেছে যে শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত আইনসভাই এই ধরনের হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম। এর কারণ হল, সমকামী দম্পতিদের বিয়ে করার বা একসঙ্গে থাকার অধিকার প্রদানের সঙ্গে, 'আইনগত কাঠামো' এবং নীতির এক বিশাল পরিসরে পরিবর্তন দরকার। যখন দু'জন ব্যক্তি একটি বিবাহ বা সেই জাতীয় কোনও অধিকারে প্রবেশ করেন, তখন তাঁদের জন্য বিমা, ব্যাঙ্কিং, দত্তক নেওয়া, উত্তরাধিকার, পেনশন, স্বাস্থ্যসেবার মত অনেকগুলি অধিকারের বিষয় চলে আসে। যে অধিকার সম্পূর্ণ বিষমকামী দম্পতিদের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে। আদালত দেখেছে যে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কোনও নির্বাচিত আইনসভাই হস্তক্ষেপ করতে পারে। বিচারপতি নরসিমহার এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ যে, বিষমকামী দম্পতির জন্য এই আইনি কাঠামোর পরিবর্তন এবং তার প্রভাব আইনসভার দ্বারা পর্যালোচনা করা দরকার। কারণ, সেটাই 'সাংবিধানিক' রীতি।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল-হামাস সংকটে ইরানের ভূমিকা ঠিক কেমন? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ?