কেন অভিন্ন বাংলা গড়ার বিপক্ষে ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়?

নির্বাচনী সমাবেশে শুভেন্দু বলেন যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদান না থাকলে এই দেশটিও ইসলামিক দেশে পরিণত হত এবং আমরা বাংলাদেশে থাকতাম।"

নির্বাচনী সমাবেশে শুভেন্দু বলেন যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদান না থাকলে এই দেশটিও ইসলামিক দেশে পরিণত হত এবং আমরা বাংলাদেশে থাকতাম।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল

বঙ্গ বিভাজনের মুখ হিসেবে ইতিহাসে বারংবার যার নাম উল্লেখ করা হয় তিনি হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্বাধীন অবিভক্ত বাংলা সংগঠনের বিরুদ্ধে যার নাম উঠে আসে। শুভেন্দু অধিকারি যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তাঁর মুখেও শোনা যায় ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম। মুচিপাড়াতে সম্প্রতি একটি নির্বাচনী সমাবেশে শুভেন্দু বলেন যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদান না থাকলে এই দেশটিও ইসলামিক দেশে পরিণত হত এবং আমরা বাংলাদেশে থাকতাম।"

Advertisment

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা। বঙ্গ-বিভাজনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন তিনি, এমনটাই বলা হয়ে থাকে। আর এই উদ্যোগের কাণ্ডারী ছিলেন শরৎচন্দ্র বসু, হুসেন শাহিদ সুরাবর্দি ও আবুল হাশমি। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা সেইসময় ছিল অনেকটাই।

তবে ইউনাইটেড বেঙ্গল পরিকল্পনা কীভাবে ভাবা হয়েছিল? প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বাংলার বিধানসভায় পা রেখেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জিন্না, সোহরাওয়ার্দি, হকের মতো বিশিষ্ট মুসলিম নেতা-সহ প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা শরৎ বসুও চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষ থেকে গোটা বাংলা প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। ১৯৫১ সালে নেহরুর সঙ্গে মনোমালিন্য চরমে ওঠায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৬ জুন কট্টর হিন্দু সংগঠন আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) সহযোগিতায় জনসংঘ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওই জনসংঘই পরে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি নাম নেয়।

Advertisment

তখন হিন্দু মহাসভা কিন্তু অবস্থান বদলে বাংলা বিভাজনের দাবি তোলে। সেই সময়ে শ্যামাপ্রসাদ শুধু হিন্দু মহাসভার দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাই ছিলেন না, ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সভার জাতীয় সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাঁর বইতে লিখেছেন, নির্বাচনের পরে যখন কৃষক প্রজা পার্টি (কেপিপি) এবং মুসলিম লীগ বাংলায় জোট সরকার গঠন করেছিল, অনেক আইনসভা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল রাজ্যের মুসলমানরা। তিনি লিখেছেন, "মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অধীনে বসবাসকারী পরিস্থিতিতে পূর্বের অবস্থার উন্নতির যে কোনও প্রয়াস হিন্দুদের বিরোধিতা উস্কে দিতে বাধ্য করেছিল।"

সোহরাওয়ার্দী এবং আরও কয়েকজন শীর্ষ বাংলার রাজনীতিবিদ যেমন শরৎ বোস এবং কে.এস. রায় বিভাজনের বিকল্প নিয়ে এসেছিলেন। তারা ভারত ও পাকিস্তান থেকে স্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ বাংলার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দী বুঝতে পেরেছিলেন যে বঙ্গভঙ্গ হলে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে কারণ সমস্ত পাটকল, কয়লা খনি এবং শিল্প কেন্দ্রগুলি রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে যাবে। সোহরাওয়ার্দী যুক্তি দিয়েছিলেন যে বিপুল সংখ্যক অবাঙালি ব্যবসায়ী যারা তাদের নিজের সুবিধার জন্য এই অঞ্চলের মানুষকে শোষণ করেছিল। তাদের উপস্থিতির কারণে বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

কেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সংঘবদ্ধ বাংলার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন?

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ধারণা ছিল হিন্দুদেরকে মুসলিম আধিপত্যের অধীনে থাকতে বাধ্য করা হবে। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আগেও ছিল, পরেও আছে— কিন্তু ওই চল্লিশ দশকের মাঝের বছরগুলিতে সরকারি ক্ষমতার ইন্ধনে যে ভাবে বাংলার সমাজ দ্রুত দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল, তা বাঙালির ইতিহাসকে চিরতরে পাল্টে দেয়। এর পিছনে শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর দলের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে যেহেতু জিন্নাহ হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি হোক চেয়েছিলেন এবং মুসলমানদের অবশ্যই নিজস্ব রাজ্য থাকতে পারে এমন সুর চড়িয়েছিলেন অতএব বাংলা ভাগের প্রয়োজন হিন্দুদের ও মুসলিমদেরও। তাঁর সাফ বক্তব্য ছিল, ‘সার্বভৌম অবিভক্ত বাংলা ভার্চুয়াল পাকিস্তান হবে’। যদিও শ্যামাপ্রসাদকে সমর্থন করেনি কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ।

bjp