কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মালয়ালম সংবাদ চ্যানেল মিডিয়া ওয়ানসের সম্প্রচার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে অস্বীকার করেছিল। এর বিরুদ্ধে কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই মিডিয়া সংস্থা। কিন্তু, কেরল হাইকোর্টও ২০২২ সালের ২ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের নির্দেশই বহাল রাখে। এর বিরুদ্ধে মিডিয়া সংস্থাটি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। বুধবার ৫ এপ্রিল, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এবং কেরল হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে মিডিয়া সংস্থাটির লাইসেন্স প্রাপ্তির পক্ষে রায় দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে
এই রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ জানিয়েছে,'কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক (এমআইবি) এই রায়ের প্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারী মধ্যমম ব্রডকাস্টিং লিমিটেডের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের ব্যাপারে অগ্রসর হবে। সঙ্গে, অন্য সমস্ত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এটা আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ। নতুন নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত মিডিয়া সংস্থাটি কাজ চালিয়ে যাবে।'
মামলার সময়সূচি
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মালয়ালম চ্যানেল মিডিয়া ওয়ান (Media One) -এর সম্প্রচার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে অস্বীকার করেছিল। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের অনুরোধ বিবেচনা করার সময় এটিকে নিরাপত্তার ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করেছিল। মিডিয়া ওয়ানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র খারিজ করার সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চ্যানেলের প্রচারক মধ্যমাম ব্রডকাস্টিং লিমিটেড এবং জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের মধ্যে সম্পর্ক সূত্রের উল্লেখ করেছিল। এর পরই চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কেরল হাইকোর্টের ভূমিকা
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চ্যানেলটি কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টে শুনানির সময়, বলেছিল যে লাইসেন্স প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তটি জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে হয়েছে। আর, সেই যুক্তি দেখিয়ে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কেরল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ চ্যানেলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে আবেদন জানালে, সেই আবেদনের ক্ষেত্রে কেরল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০২২ সালের ২ মার্চ সিঙ্গল বেঞ্চের আদেশই বহাল রেখেছিল।
আরও পড়ুন- অপ্রত্যাশিত! কেন রেপো রেট বাড়াল না রিজার্ভ ব্যাংক?
সংস্থাটির যুক্তি
এই রায়ের প্রেক্ষিতে এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সংস্থাটি। তার জেরে গত বছরের ১৫ মার্চ, সুপ্রিম কোর্ট কেরল হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। একইসঙ্গে চ্যানেলটিকে পুনরায় কাজ শুরু করার অনুমতি দেয়। সুপ্রিম কোর্টের সামনে শুনানিতে, চ্যানেলটির প্রচারকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগই দেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ অস্বীকার করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তার কারণগুলো হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে জমা দেওয়া হয়েছিল।
আগেও ছাড় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টে সংস্থাটি আরও দাবি করেছিল যে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার, যার মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও রয়েছে, সেটা শুধুমাত্র ১৯(২) অনুচ্ছেদের অধীনে বিবেচনা করা যেতে পারে। তাকে আটকানো যেতে পারে। পাশাপাশি, ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কিং (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংস্থাটি অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপন চালানোর ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করেছে, এমন কোনও অভিযোগও নেই। এইসব যুক্তির প্রেক্ষিতেই ২০২২ সালের মার্চে, সুপ্রিম কোর্ট এসসি ওয়ান চ্যানেলকে সাময়িক স্বস্তি দেয়। আর, পুনরায় কাজ শুরু করার অনুমতি দেয়। আর এবার ১৩৪ পাতার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুটি পদ্ধতিগত কারণে আবেদনকারী সংবাদমাধ্যমের পক্ষে থাকল। তার একটি কারণ হল স্বাভাবিক ন্যায়বিচার ও আনুপাতিকতার নীতি।