ভারতজুড়ে চলছে ট্রাক চালকদের প্রতিবাদ। চারদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব। শুরু হয়েছে প্রমাদ গোনা পর্ব। টানা দু'দিন ট্রাক, লরির চাকা না গড়ানোয় পাম্পগুলোতে জ্বালানি সরবারহ ব্যাহত হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অন্তর্গত কঠোর ‘হিট অ্যান্ড রান’ আইনের প্রতিবাদ করছেন ট্রাক চালকরা।
'হিট অ্যান্ড রান' আইন কতটা কঠোর? কেন প্রতিবাদ? ট্রাক চালকদের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রভাব কতটা? রইল বিশ্লেষণ...
'হিট অ্যান্ড রান' আইনে কী রয়েছে?
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৪ নম্বর ধারা মোতাবেক, কোনও চালকের গাফিলতির জন্য মৃত্যু ঘটলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা 'হিট অ্যান্ড রান' আইনে বলা হয়েছে। এই আইনের ধারা অনুযায়ী, কারও গাফিলতিতে যদি কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হয়, সেই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে জরিমানাও করা যেতে পারে। আর যদি ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর, চালক সেখান থেকে পালায় বা পুলিশ কিংবা প্রসানের আধিকারিককে ঘটনার পরই খবর না দেয়, তাহলে শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়বে। সেই ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
পূর্ববর্তী আইনে কী ছিল?
পুরোনো আইন বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এর 'ক' ধারায় বর্তমানে 'হিট অ্যান্ড রান' সংক্রান্ত বিষয় ও শাস্তির কথা বলা ছিল। সেই অনুযায়ী, একই অপরাধে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান ছিল।
অর্থাৎ শাস্তির পরিমাণ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 'হিট অ্যান্ড রান' আইনে কঠোর করা হয়েছে।
কেন ট্রাক, বাস ও ট্যাঙ্কার চালকদের প্রতিবাদ?
এএনআই-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যক্তিগত পরিবহন অপারেটররা দাবি করেছে যে- আইনটি চালকদের নিরুৎসাহিত করে এবং তাদের অন্যায়ভাবে শাস্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সংগঠনগুলোর আরও দাবি যে, চালকরা যখন আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তখন তারা জনতার রোষের শিকার হতে পারে।
অল ইন্ডিয়া মোটর অ্যান্ড গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন্দ্র কাপুর, এএনআইকে বলেছেন, 'সরকারের কাছে আমাদের একমাত্র দাবি হল আমাদের মত সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি, কাউকে জিজ্ঞাসাও করা হয়নি। আগে মিটিং এবং পরামর্শ করা উচিত ছিল।' তাঁর সংযোজন, 'অল ইন্ডিয়া মোটর অ্যান্ড গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা এই প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। এখন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষ নতুন আইন সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়।'
আরও পড়ুন- ২০২৪ কি লিপ ইয়ার? কেন প্রতি চার বছর অন্তর লিপ ইয়ার হয় না?
ট্রান্সপোর্ট সংগঠনগুলোর দাবি, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যারই অপরাধ হোক, প্রায় সবসময়ই বড় গাড়ির চালকদের কাঠগড়ায় তোলা হয় এবং মামলা করা হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে হিট অ্যান্ড রান আইনের এই সংশোধনকে অন্যায়। দুর্ঘটনায় চাসকরাও জখম হন, কিন্তু তাদের হয়ে বলার মতো কেউ থাকে নেই। এই পরিস্থিতিতে শাস্তি বাড়িয়ে তৈরি নতুন বিধানকে 'কালো কানুন' বলে দাবি করা হয়েছে।
ট্রাক চালকদের অবরোধের প্রভাব-
সোমবার (১ জানুয়ারি) থেকে বিক্ষোভকারীরা গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য জুড়ে রাস্তা ও মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। এতে যানবাহন চলাচল ও জ্বালানি সরবরাহ প্রভাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতার খিদিরপুরে বন্দর এলাকা অবরোধ করেন প্রতিবাদীরা।
মঙ্গলবার একটি পরিবহন সংস্থা দাবি করেছে যে, ধর্মঘট মধ্যপ্রদেশে প্রায় পাঁচ লাখ যানবাহনের চলাচলকে প্রভাবিত করেছে। হিমাচল প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র সহ রাজ্য জুড়ে পেট্রোল পাম্পগুলিতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। সোমবার, বিক্ষোভকারীরা খেদা, ভালসাদ, গির সোমনাথ, ভরুচ এবং মেহসানা সহ গুজরাটের বেশ কয়েকটি জেলায় রাস্তার উপর যানবাহন থামিয়ে অবরোধ করেছিল, ফলে মহাসড়কে গাড়ির গতি থমকে যায়।