২০২৫ সালের মধ্যে কি সত্যিই 'অদৃশ্য' হয়ে যাবে শনির বলয়? বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনা কী প্রভাব ফেলবে? ভয়ঙ্কর কিছুর আভাস? কী জানাচ্ছে নাসা? পুরো সত্যিটা জেনে নিন।
আপনি যদি মহাকাশে মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন তবে সূর্যাস্তের কিছু সময় পরেই সন্ধ্যার আকাশে শনির বলয় আপনাকে মুগ্ধ করবে। পৃথিবী থেকেও এই বলয় দৃশ্যমান। তবে নাসা জানাচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে শনির এই বলয়।
কেন অদৃশ্য হবে শনির বলয়?
গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক পোস্ট। সেখানে দাবি করে যে শনির বলয় দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে শনির বলয়। আপাতত পৃথিবী থেকে ৯ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে শনি ঘুরছে৷ ২০২৪ সালের মধ্যে এটি কমে হবে তিন ডিগ্রির কাছাকাছি৷ তারপর এটি পৌঁছে যাবে একেবারে শূন্য ডিগ্রিতে৷
ঠিক চোখের সামনে একটা সমান্তরাল ভাবে কাগজকে ধরে রাখার মত। কাগজটিকে যেমন দেখাবে, শনির বলয়টিও ঠিক তেমনই দেখাবে। কাজেই সমান্তরালে অবস্থান করার জন্য সেটি অদৃশ্য হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আবার অ্যাঙ্গেল বদলের সঙ্গে সঙ্গে শনির এই বলয়ও দৃশ্যমান হবে। তাহলে পরের কয়েক মাস সন্ধ্যার আকাশে শনির বলয় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে, এই বলয় দেখার শেষ সুযোগ হতে পারে? সংক্ষিপ্ত উত্তর হল 'না'।
ফের কবে মিলবে দেখা?
তবে এতে কোনও আশ্চর্য বা আতঙ্কের কারণ নেই। কিছু সময় পরে বলয়গুলি 'পুনরায় আবির্ভূত হবে'। বিজ্ঞানীরা বলছেন মহাকাশ ঠাট্টা করবে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে৷ অনেকটা অপটিক্যাল ইলিউশানের মতই। আদতেই এই বলয় আপাতত অদৃশ্য হয়ে গেলেও আবার আট বছর বাদে অর্থাৎ ২০৩২ সালে এই বলয়টিকে নিজের স্থানেই দেখা যাবে।
আমাদের সৌরজগতের সমস্ত গ্রহের মধ্যে শনি সবচেয়ে অনন্য। যা এটিকে অনন্য করে তোলে তা হল এর রিং, যাকে শনির বলয়ও বলা হয়। এই বলয়গুলো বরফের কণা এবং ছোট ছোট পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি। শনিকে ঘিরে থাকা এই বলয়গুলো দেখতে বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। অনেক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে শনির বলয়গুলি ভবিষ্যতে অদৃশ্য হয়ে যাবে। যাইহোক, এটি ঘটতে এখনও লক্ষ লক্ষ বছর বাকি আছে। কিন্তু একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ২০২৫ সালেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে শনির বলয়। এই রিংগুলি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হবে না।
যারা পৃথিবী থেকে শনির বলয়ের ছবি তুলতে চান তাদের জন্য এটি হতাশাজনক তথ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। শনির বলয় হারিয়ে যাওয়ার কী কারণ? রিপোর্ট অনুসারে, শনি গ্রহ আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে সমান্তরাল নয়। এটি প্রায় ৯ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ, শনির কোণ প্রায় ৩.৭ ডিগ্রি কমে যাবে। এক বছর পরে, পৃথিবী থেকে আরও দূরে সরে যাওয়ার কারণে, শনির বলয়গুলি পৃথিবীর সমান্তরালে একটি পাতলা ‘অনুভূমিক স্ট্রিপের’ মতো দেখাবে। তার মানে পৃথিবী থেকে তাদের দেখা অসম্ভব হবে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনাটি ২০৩২ সাল পর্যন্ত চলবে।
কবে চিরতরে ভ্যানিশ হবে শনির বলয়?
শনির বলয় তার গ্রহ থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন বলয়গুলি ১০০ মিলিয়ন বছর পুরানো। শনির এই বলয়গুলি লক্ষ লক্ষ পাথর এবং বরফের টুকরো দিয়ে তৈরি এবং ক্রমাগত গ্রহের চারপাশে ঘুরছে। এই বলয়গুলো পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমেও দেখা যায়। শনির বলয়গুলি শতাব্দী ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মহাকাশ গবেষকদের আকৃষ্ট করছে। এখন এরই মধ্যে, একটি নতুন গবেষণা প্রকাশ করেছে যে তারা অদৃশ্য হয়ে যাবে, তবে তাদের অদৃশ্য হতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, শনির বলয় ২ লাখ ৮২ হাজার কিমি চওড়া হলেও সেগুলো প্রায় এক কিলোমিটার পুরু। পৃথিবী থেকে ৯ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরছে শনি। ২০২৪ সালের শেষে তা কমে হবে ৩.৭ ডিগ্রি। এরপর তা শূন্য ডিগ্রিতে এসে ঠেকবে। ফলে পৃথিবীর সঙ্গে সমান্তরালে থাকার জন্য শনির এই বলয় অদৃশ্য হতে চলেছে।
শনির প্রধানত সাতটি বলয় রয়েছে। শনি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে, এর অক্ষটি তার হেলে থাকা অবস্থা থেকে উল্লম্ব অবস্থানে চলে যাবে। এই পরিবর্তনের কারণে, শনির বলয়গুলি পৃথিবীর সমান্তরালে একটি পাতলা অনুভূমিক স্ট্রিপের মতো দেখাবে। এই কারণে পৃথিবী থেকে বলয়গুলি দেখা কঠিন হবে। সূর্য থেকে শনির দূরত্ব ৮৮৬ মিলিয়ন কিমি, আর পৃথিবী থেকে শনির দূরত্ব ৭৯৩ মিলিয়ন কিমি। আকারের দিক থেকে শনি গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে সাড়ে নয় গুণ বড়।