সোমবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রোজগার মেলা (কর্মসংস্থান মেলা)-র অংশ হিসেবে নতুন ৫১,০০০ নিয়োগপ্রাপ্তকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়োগপত্র বিতরণ করেছেন। গত অক্টোবর থেকে, সরকার ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সব ধরনের সরকারি চাকরিতে বর্তমান ১০ লক্ষ (বা ১ মিলিয়ন) শূন্যপদ পূরণের জন্য এই মেলার আয়োজন করছে। কিন্তু, এই রোজগার মেলা কি ভারতের বেকারত্ব সংকটের সমাধান করবে? বেকারত্ব কি পুরানো সমস্যা, নাকি নতুন সংকট? সাম্প্রতিক অতীতে দ্রুত কর্মসংস্থানের অভাবকে কী বলা যায়? ভারতের বেকারত্ব সমস্যার সমাধানই বা কোথায়?
বছরের পর বছর ধরে, নিয়মিতভাবে কর্মসংস্থান বা বেকারত্ব রোধের ইস্যুতে প্রশাসন নজর দিয়েছে। তা বিভিন্ন দিক দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে এক সরকারি রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ভারতে বেকারত্ব সমস্যা গত ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সরকার প্রথমে এই রিপোর্টগুলোকে মানতে চায়নি। এমনকী, পুনরায় নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত এই রিপোর্টগুলোকে গুরুত্বই না-দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ২০১৯ সালে পুনঃনির্বাচনের পরে সেই সরকার বেকারত্ব নিয়ে ওই সরকার রিপোর্ট মেনে নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মোট কর্মসংস্থান কমেছে ৬ বছরে ৯ মিলিয়ন বা ৯০ লক্ষ। আরও খারাপ বিষয় হল, রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে শুধুমাত্র যুবকদের বেকারত্বই যে তীব্রভাবে বেড়েছে তা নয়। শিক্ষা অর্জনের সঙ্গেই তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতও কোভিড অতিমারির শিকার হয়। তাতে অনুমান করা যায় যে দেশের বেকারত্ব আরও খারাপ পর্যায়ে গিয়েছে। তারপর থেকে বিশেষজ্ঞরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে জিডিপি নয়, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
বেকারত্ব সংকট যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তার দুর্ভাগ্যজনক দিক হল, এই সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকার ওপরও কুপ্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বারবার সরকারকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ভারতে পুরুষ বেকারের সংখ্যাই চরমে। আর, নারীর অবস্থা তো বোঝাই যায়। কিন্তু, তারপরও রোজগার মেলা ছাড়া সরকারের বিশেষ কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। উলটে, বিভিন্ন জায়গায় কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
আরও পড়ুন- বিজ্ঞানীদের চিন্তা বাড়িয়ে আন্টার্কটিকায় বিপুল সংখ্যক পেঙ্গুইনের মৃত্যু, কারণটা কী?
এমন বহু জায়গা আছে, যেখানে কর্মীরা অবসর গ্রহণের পর ওই শূন্যপদ আর পূরণ করা হয়নি। ফলে, বেকারের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। সরকার অবশ্য বছরে ২ কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারেনি। যার ফলে, এই সামান্য সংখ্যক বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করে দেশের বিপুল সংখ্যক বেকারত্ব দূরীকরণ কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।