রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) সমস্ত নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোকে (অর্থাৎ ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক সংস্থাগুলোকে) স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির আসল নথিগুলো সম্পূর্ণ পরিশোধ বা ঋণগ্রহীতাদের দ্বারা ঋণের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার একমাসের মধ্যে তা ফেরত দিতে বলেছে। এক্ষেত্রে বিলম্ব হলে, ঋণদাতাকে বিলম্বের দিনে ৫,০০০ টাকা হারে ঋণগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও জানিয়েছে আরবিআই। এই নির্দেশিকা ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
আরবিআই কী বলেছে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার সমস্ত নিয়ন্ত্রিত (ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো (এনবিএফসি), গৃহঋণদাতা সংস্থাগুলো, ছোট আর্থিক ব্যাংক (এসএফবি), আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক (আরআরবি) এবং সমবায় ব্যাংক) সংস্থাগুলো (আরই)-কে নির্দেশ দিয়েছে দায়িত্বশীল ঋণদান ব্যবস্থার অংশ হিসেবে, মূল স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির নথিপত্র, ঋণগ্রহীতার সম্পূর্ণ পরিশোধ বা ঋণ অ্যাকাউন্ট নিষ্পত্তির ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে। একইসঙ্গে ঋণদাতার থেকে যে চার্জ কাটা হচ্ছিল, তা-ও বন্ধ করতে।
কোথায় নথি পাওয়া যাবে?
আরবিআই বলেছে যে একজন ঋণগ্রহীতার কাছে তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাংকের শাখা বা যে শাখায় ঋণ পরিশোধের অ্যাকাউন্ট আছে অর্থাৎ গ্রাহক পরিষেবা পেয়েছেন, সেখান থেকে বা ঋণদাতা সংস্থার অন্য কোনও অফিস থেকে আসল সম্পত্তির নথি সংগ্রহ করার সুযোগ থাকবে। ঋণদাতাকে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর বা তার পরে জারি করা ঋণ অনুমোদনপত্রগুলোতে মূল সম্পত্তির নথি ফেরত দেওয়ার সময়সীমা এবং স্থান উল্লেখ করতে হবে।
ঋণগ্রহীতার উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে
ঋণগ্রহীতারা আর বেঁচে নেই এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঋণদাতাদের অবশ্যই আইনি উত্তরাধিকারীদের কাছে আসল সম্পত্তির নথি ফেরত দেওয়ার জন্য একটি সুসংহত পদ্ধতি থাকতে হবে বলে জানিয়েছে আরবিআই। এই নথি ফেরত পাওয়ার পদ্ধতি কী, তা গ্রাহকদের জানানোর জন্য ঋণদানকারী সংস্থাকে তাদের ওয়েবসাইটে পদ্ধতিটি লিখে রাখতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক।
নতুন নির্দেশ কেন?
আরবিআই বলেছে যে এটা লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে ঋণদানকারী সংস্থাগুলো সম্পত্তির নথি ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে গ্রাহকদের। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য এবং দায়িত্বশীল ঋণ প্রদানের পদ্ধতি ঠিক করতে এমন নির্দেশ জারি করা হল বলে জানিয়েছে আরবিআই। এটি ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে, যেমন উপভোক্তা ঋণ, শিক্ষাঋণ, স্থাবর সম্পদ (যেমন আবাসন) তৈরি বা বৃদ্ধির জন্য দেওয়া ঋণ এবং অন্যান্য প্রদত্ত ঋণ। এছাড়াও শেয়ার এবং ডিবেঞ্চারের মত আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগের জন্য গৃহীত ঋণের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।
যদি সম্পত্তির নথি দিতে বিলম্ব হয়?
আরবিআই বলেছে যে মূল স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির নথি দিতে বিলম্ব হলে বা ঋণের সম্পূর্ণ নিষ্পত্তির ৩০ দিন পরে প্রাসঙ্গিক রেজিস্ট্রিতে সন্তুষ্টির ফর্ম ঋণদাতা দাখিল করতে ব্যর্থ হলে, ঋণদাতাকে যোগাযোগ করতে হবে ঋণগ্রহীতার সঙ্গে। আরবিআই বলেছে, 'এই ফর্ম দাখিলের বিলম্ব যেহুতু ঋণদানকারী সংস্থার কারণেই ঘটবে, তাই প্রতিটি বিলম্বিত দিনের জন্য ঋণগ্রহীতাকে ৫,০০০ টাকা হারে ক্ষতিপূরণ দিতে ঋণদাতা বাধ্য থাকবেন।' আরবিআই বলেছে যে এই নিয়মগুলো সেই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যেখানে মূল নথিগুলো ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর বা তার পরে ঋণগ্রহীতার হাতে তুলে দেওয়ার কথা।
আরও পড়ুন- জঙ্গিদের প্রত্যাঘাত! বাহিনীর তিন কর্তা হত, পুজোর আগে কী পরিস্থিতি কাশ্মীরের?
সম্পত্তির মূল দলিল নষ্ট বা হারিয়ে গেলে কী হবে?
মূল সম্পত্তির নথির ক্ষতি হলে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে, ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে সম্পত্তির নথির নকল বা প্রত্যয়িত কপি পেতে সহায়তা করবে এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট খরচও বহন করবে। নির্ধারিত ৩০ দিনের সময়সীমার বাইরে বিলম্বের প্রতিটি দিনের জন্য প্রতিদিন ক্ষতিপূরণ দেবে ৫,০০০ টাকা করে। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য ঋণদানকারীর কাছে অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় থাকবে। বিলম্বিত সময়ের জরিমানা তারপরে অর্থাৎ মোট ৬০ দিন পরে গণনা করা হবে।