দক্ষিণ মেরুর শ্বেত ভল্লুক, উত্তর মেরুর অরোরা বোরিয়ালিস, অ্যামাজন জঙ্গল, দেরিদা, কার্ল মার্ক্স, ডোনাল্ড ট্রাম্প-পুতিন-মোদী-মমতা কিংবা অমিতাভ বচ্চন-প্রসেনজিত বা সদ্য প্রয়াত উদয়শঙ্কর জায়া অমলাশঙ্কর, কার খবর জানতে চান আপনি? বিশ্বের ভার্চুয়াল লাইব্রেরিতে প্রখ্যাতদের সব খবর যেখানে এক ক্লিকে পাওয়া যায় তার নাম উইকিপিডিয়া। জনপ্রিয়তায় এই নাম তুঙ্গে। অনেকে তো আজকাল সোশাল মিডিয়ায় মজা করে শিক্ষক দিবসের দিন ‘হ্যাপি টিচার্স ডে’ পোস্ট করে শ্রদ্ধা জানান উইকিপিডিয়াকে। কিন্তু জনপ্রিয় এই সাইটকে ঘিরেই এবার তৈরি হল বিতর্ক।
২০০১ সালে যখন ইন্টারনেট এসেছে সেই সময় উইকিপিডিয়ার জন্ম। কিন্তু এবার সেই উইকিপিডিয়াই অনুদান চাইছে? আজ্ঞে হ্যাঁ। অবাক হওয়ার কিছু নেই। সম্প্রতি উইকির (সংক্ষেপে নেটিজেনরা এই নামেই ডাকেন) যে কোনও পেজ খুললেই একটি মেসেজ ভেসে আসছে যেখানে বলা হচ্ছে, “আমরা আপনাকে খুব বিনীতভাবে জানাচ্ছি যে স্ক্রল করে পেজ থেকে বেরিয়ে যাবেন না। আমরা ব্যতিক্রমী পাঠকদের থেকে অনুদান চাইছি। কিন্তু মাত্র ২ শতাংশ সেই কথা রেখেছেন। আপনি যদি আপনার সাধ্যমত ১৫০ টাকাও দেন তাহলে এই ওয়েবসাইটটি চালাতে খুব সুবিধা হবে। ধন্যবাদ।”
স্ক্রিনে এই বার্তাটি ফুটে উঠতেই একাধিক প্রশ্ন উঠছে। নেটিজেনদের একাংশ প্রশ্ন করেছেন বিশ্বের জনপ্রিয় এবং এত বড়ো ওয়েবসাইটের কি আদপেই অনুদানের প্রয়োজন রয়েছে? না এটা ভুয়ো কোনও ব্যবসা? একটু ইতিহাসে ফেরা যাক। উইকিপিডিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল যাতে তারা যেকোনও বিষয়ে জ্ঞান এবং তথ্য সহজেই বিনামূল্যে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আর ‘বিনে পয়সায় জ্ঞান বিলোবে’ না উইকি। কড়ি ফেললে তবেই তথ্যের তেলে মগজ পুষ্ট করতে পারবেন ভারতীয় উইকি ব্যবহারকারীরা।
এই ওয়েবসাইটেরই আরেকটি পেজ উইকিমিডিয়ার মুখ পাত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “উইকিপিডিয়া বাকিদের মত ফ্রি ওয়েবসাইট হিসেবে প্রাথমিকভাবে চালু হলেও এখন তারা তাঁদের বিজনেস মডেল বদলাতে চাইছে। অর্থনীতির কঠিন দুনিয়ায় নিজের জায়গা ধরে রাখতে কিন্তু বিজ্ঞাপন নয় পাঠকেই চাইছে তারা। আর এই পেজ বেঁচেই রয়েছে পাঠকদের জন্য। তাই তাদের অনুদানকেই পাথেয় করতে চাইছে উইকি কর্তৃপক্ষ।”
সিমিলার ওয়েব একটি পেজ থেকে জানা গিয়েছে ২০২০ সালের জুলাই মাসে উইকিপিডিয়ার ভিউয়ার্স সংখ্যা ৫.২ বিলিয়ন। বিশ্বের আটটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের মধ্যে একটি হল উইকি।
কেন এই অনুদানের প্রয়োজন হচ্ছে?
ভারতের উইকিপিডিয়ার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি সম্যক ধারণা দেওয়া হয়। বলা হয়, “উইকিপিডিয়াকে বিশ্বের সকলের কাছে বাঁচিয়ে রাখতে এই অনুদান প্রয়োজন। পাঠকের প্রয়োজনীয়তাও বোঝা যাবে। সে কারণে এটির সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এই অনুদান জরুরি।” প্রসঙ্গত অ-লাভজনক সংস্থা হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছিল এই জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। কন্ট্রিবিউটার, এডিটর, ইঞ্জিনিয়াররা স্ব ইচ্ছায় এই সাইটকে চালিয়ে যেতেন। উইকিপিডিয়ার লোগো বসানো জামা-কাপড়, পেনসিল, খাতা ইত্যাদি বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন চলত। তবে বিজ্ঞাপন ‘নৈব নৈব চ’। গত বছর অ্যামাজন যেমন ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিল উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনকে। আসলে তথ্য সুরক্ষা এবং ওয়েবসাইটটিকে পাঠকের মনোগ্রাহী করে রাখতে একটা বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন হয়। প্রায় ২৫০ জন কর্মী কাজ করেন এই সংস্থায়। এছাড়াও ২ লক্ষ ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকও রয়েছেন।
পাঠকদের অনুদান নেওয়া কতটা প্রয়োজন?
কম্পিউটার স্ক্রিন হোক বা স্মার্তফোন উইকি খুললেও ফোনে ভেসে আসছে এই অনুদান দেওয়ার একটি পপ আপ মেসেজ। তবে এতে অনেকে রাজি থাকলেও অনলাইন প্রতারণা এবং ব্যাঙ্কলুটেরও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু ওয়েবসাইটের ব্যালেন্স শিট কিন্তু অন্য কথা বলছে। ফান্ডরাইসিং বলছে ২০১৮-১৯ সালে ২৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৫৬ ডলার তুলেছে সংস্থাটি। ২০০৩ সাল থেকেই কিন্তু এই ফান্ডরাইজিংয়ের বিষয়টি ছিল। উইকিমিদিয়ার তরফে বলা হয়েছে, “আমরা মনে করছি ভারতের এবং অন্যান্য দেশ আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সাহায্য করবে। আর ঠিক সেই কারণেই এই মেসেজ আসছে স্ক্রিনে।”
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন