Advertisment

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা, কতটা প্রস্তুত ভারত?

আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে ফল হতে পারে মারাত্মক, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বস্বাথ্য সংস্থার তরফে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা, ভারত কী পারবে এই ঢেউ সামাল দিতে?

প্রস্তুতি শেষ এবার ঝাঁপিয়ে পড়ার পালা, লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ওমিক্রন। কপালে চিন্তার ভাঁজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে প্রশাসনের। সারা বিশ্বে ওমিক্রন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ইটালিতে একদিনে সংক্রামিত প্রায় ৯৮ হাজার। ব্রিটেনের চিত্রটাও একই। নতুন করে ওমিক্রন ত্রাসে রাতের ঘুম উড়েছে সকলের। এর মাঝেই বর্ষবরণের প্রস্তুতি! ওমিক্রন আতঙ্কে একাধিক দেশে বাতিল করা হয়েছে বর্ষবরণ উৎসব। ভারতের একাধিক রাজ্যও একই পথে হেঁটেছে। একাধিক রাজ্যে বাতিল করা হয়েছে বর্ষবরণের জমায়েত।

Advertisment

করোনা তৃতীয় ঢেউ রোখা এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন তথা সরকারের কাছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে বারবার মিলেছে সাবধানবানী। কিন্তু কিছু মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফল ভুগতে হচ্ছে সমগ্র বিশ্বকে।

ইতিমধ্যেই বঙ্গে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার সংক্রমিত হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। হাসপাতাল গুলিকে সকল প্রস্তুতি সেরে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। গত কয়েক মাসে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমতেই, নিউ নর্মালে ফিরছিল জনজীবন। কিন্তু ওমিক্রনের হাত ধরে আবারও সব হিসেব ওলটপালট হওয়ার জোগাড়।

যখন ওমিক্রন জ্বরে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ এখন পর্যন্ত মহামারীর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। তখন ভারতেও তার আঁচ পড়েছে। দেশের ৬ রাজ্য ও ৯ শহরে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে করোনা। ঘোর দুশ্চিন্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১৮.৪৯ % বেড়ে নতুন করে ৪ হাজার ৪৪২ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এসবের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দ্বিগুণ বাড়ল বাংলায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ। একই হারে আক্রান্ত কলকাতাও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, একদিনে রাজ্যে সংক্রমিত ২১২৮ জন, মৃত ১২।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ভারত কী পারবে ওমিক্রনের তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে, কতটা প্রস্তুত ভারত?

প্রায় দুবছরের অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে ভারত তথা বিশ্ব আজ ওমিক্রনের সঙ্গে লড়াইয়ে কিছুটা হলেও বিগত বছরগুলি থেকে এগিয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালীন করোনা সম্বন্ধীয় অনেক তথ্যই অজানা ছিল চিকিৎসকদের কাছে। একে একে প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিক্ষা নিয়ে ওমিক্রন পরিস্থিতি যথাযথ ভাবেই সামলে উঠতে পারবেন বলেই আশাবাদী চিকিৎসক মহল। সেই সঙ্গে রয়েছে করোনা টিকা। ইতিমধ্যেই ভারত ১০০ কোটির মাইক ফলক অতিক্রম করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার ফলেও ওমিক্রনের উপসর্গ ডেল্টার থেকেও অনেক মৃদু। ইতিমধ্যেই দেশের প্রবীণ বা ষাটোর্ধ্ব নাগরিক যাদের কোমর্বিডিটি আছে, তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, আইসিএমআর প্রধান বলরাম ভার্গব। ছোট দের টিকা দানের ফলে পরিস্থিতি আরও কিছুটা সামাল দেওয়া যেতে পারে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বেডের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি মজুত রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কালে অক্সিজেন সংকটের যে ছবি দেখা দিয়েছিল, তা এবার হবে না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্ব টিকার ওপর ভর করে কিছুটা হলেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের করোনা পরিস্থিতি ঠেকাতে অনেক সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে ফল হতে পারে ,মারাত্মক এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বিশ্বস্বাথ্য সংস্থার তরফে।

আমাদের সকলেই মনে রাখতে হবে, ডেল্টা ভাইরাসের থেকেও প্রায় ৫ গুন বেশি সংক্রামক, করোনার এই নয়া প্রজাতি। বর্ষবরণের রাতে এবং আগামী কয়েকটা দিনে আমাদের পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখতে হবে বলেই মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যথাযথ কোভিড প্রটোকল মেনে আমাদের সকলকে চলার পরামর্শ দেওয়া দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে। ভ্যাকসিনের পাশাপাশি, নতুন বছরে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার মূলধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ওষুধকে করোনা চিকিৎসায় জরুরী ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ফাইজার-মার্ক-সিনোগি— তিনটি কোম্পানির ওষুধই কোভিড নিরাময়ে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। বহুজাতিক সংস্থা মার্ক, রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের সহায়তায় কোভিডের যে ওষুধটি বাজারজাত করতে চলেছে সেটির নাম ‘মলনুপিরাভির’। কোভিডের গুরুতর উপসর্গ প্রকাশের পাঁচদিনের মধ্যে মলনুপিরাভির সেবনে যথেষ্ট ভালো ফল মিলছে।

এর সঙ্গেই বিজ্ঞানীদের ধারণা ওমিক্রণের হাত ধরেই, মহামারী শেষের শুরু হতে চলেছে। এর মানে এই নয় যে করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হবে! তবে ভ্যাকসিন এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্বারা এটিকে রোখা সম্ভব হবে। তার আগে ওমিক্রনকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এপ্রসঙ্গে ধনকুবের বিল গেটসের সেই টুইটটি সকলের মনে রাখা দরকার, 'আরও একটি ভবিষ্যদ্বাণী করা অনেকের কাছেই বোকামি বলে মনে হতে পারে, তবে আমি মনে করি ২০২২ এর কিছু সময়ের মধ্যেই এই মহামারী শেষ হয়ে যাবে।'

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

India Third Wave Omicron
Advertisment