করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট XE পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছিল বৃহম্মুম্বই কর্পোরেশন। যার ফলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। কারণ, এই প্রথম ভারতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলল। এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কিন্তু, ভারতে তা পাওয়া যায়নি। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, ফের কি লকডাউনের পথে হাঁটতে হবে এই দেশকেও। যেমনটা চলছে চিন এবং অন্যান্য দেশগুলোয়?
এই প্রশ্নে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক অন্য কথা বলল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, বৃহম্মুম্বই পুরসভার দাবির প্রমাণ এখনও মেলেনি। এখনও দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মেলেনি। যে করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সে যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টেই আক্রান্ত তার কোনও প্রমাণ এখন অবধি পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই বক্তব্যে স্বভাবতই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। সবচেয়ে বড় কথা, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ফলাও করে জানিয়ে দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারও
মহারাষ্ট্র সরকার সূত্রে খবর, বছর ৫০-এর মহিলা ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন। তাঁর করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ পুরোপুরি নেওয়া আছে। সেই মহিলা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর দেহে সংক্রমিত করোনাই নতুন ভ্যারিয়েন্ট বলে দাবি করছিল বৃহম্মুম্বই পুরসভা। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার ওই মহিলা ১০ ফেব্রুয়ারি ভারতে পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি বেশ কয়েকটি শ্যুটিংয়ের অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের আতঙ্কের কারণ, নতুন ভ্যারিয়েন্ট XE অত্যন্ত দ্রুত ছড়াচ্ছে। তবে, করোনার ডোজ থাকায় এখনও পর্যন্ত তা মারাত্মক বা ক্ষতিকারক হয়ে ওঠেনি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও বেশিরভাগ মানুষই করোনার ডোজ পেয়েছেন। ইতিমধ্যেই নাবালকদেরও করোনার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কী এই XE ভ্যারিয়েন্ট?
আবারও নতুন স্ট্রেনের সন্ধান! আবারও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবধানবাণী। ওমিক্রনের চেয়েও কয়েকগুণে সংক্রামক ভাইরাসের হদিশ মিলেছে যুক্তরাজ্যে। নয়া এই ভ্যারিয়েন্টের নাম ‘XE’। এযাবৎ যে কটি করোনা প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সংক্রামক এই ভাইরাস জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই করোনায় কাবু এশিয়া-ইউরোপের একাধিক দেশ। তার মাঝেই নয়া স্ট্রেনের খবরে কপালে চিন্তার ভাঁজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
তাদের অনেকের ধারণ অনেক দেশেই করোনা সংক্রান্ত নিয়মকানুন শিথিল করা হয়েছে ফলে নয়া স্ট্রেন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের মধ্যে। আর এই নয়া স্ট্রেনের হাত ধরেই আসতে পারে পরবর্তী করোনা ঢেউ। BA’1 এবং BA.2 একসঙ্গে চরিত্র বদল করেই করোনার নয়া রূপ ‘XE’-র সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে হু। সেই সঙ্গে হু এর তরফে জানান হয়েছে নয়া এই প্রজাতির সংক্রমণ ক্ষমতা বি.এ.২ প্রজাতির থেকেও ১০ গুণ বেশি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে নয়া এই প্রজাতির সন্ধান মেলে। প্রথম এই প্রজাতির ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে ব্রিটেনে। ইতিমধ্যেই এই নয়া প্রজাতিতে প্রায় ৬০০ এর বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন মিউটেশনের ফলে একের পর এক চরিত্র বদল করবে করোনা ভাইরাস।
ঠিক যেমন টা হয়েছে ডেল্টা, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে। তবে তার সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা এটাও জানাচ্ছেন যত বেশি মিউটেশনের মাধ্যমে চরিত্র বদল করবে এই ভাইরাস তত বেশি সংক্রামক হবে এই ভাইরাস তবে সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে কমবে এই ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা। XE ভেরিয়েন্টকে 'রিকম্বিন্যান্ট' ভাইরাস বলা হচ্ছে।
XE ভেরিয়েন্ট কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে "XE ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ এবং তার প্রভাব আগের ওমিক্রনের থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত না ফারাক দেখে দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্কের কণ কারণ নেই"। তবে এটাও লক্ষ করা গেছে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা বি.এ ২ ভ্যারিয়েন্টের থেকেও প্রায় ১০ গুণের বেশি। ফলে একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে দ্রুত এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা।
তবে XE ভেরিয়েন্টের ক্লিনিকাল রিপোর্ট অনুসারে দেখা গিয়েছে এই ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গগুলি একেবারেই ওমিক্রন প্রজাতির মতই। সেই সঙ্গে আমাদের দেশে একটা বিরাট জনসংখ্যার মানুষকে ইতিমধ্যেই টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন প্রায় দু'বছরের বেশি সময় ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই করার ফলে মানুষের শরীরে ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। ফলে অযথা আতঙ্কের কোন কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজেশন, সহ কোভিড বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে দেখা গিয়েছে প্রায় তিন মাস আগে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। ফলে এই নয়া স্ট্রেন নিয়ে অযথা আতঙ্ক না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে দ্রুত গতিতে চলছে শিশুদের টিকাকরণের কাজ।
XE ভেরিয়েন্ট ভারতেও হানা দিতে পারে?
এটা খুবই স্বাভাবিক নয়া এই ভ্যারিয়েন্ট যে কোন সময়ে ভারতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভারতে এই ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। এর কারণ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। বিশ্বের একাধিক দেশেই উঠে গেছে সকল প্রকার কোভিড বিধি। মানুষ এখন আবার আগের মতই এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবাধে চলাচল করতে পারছে। ফলে এই নয়া প্রজাতি যে কোন সময়েই থাবা বসাতে পারে ভারতের মত বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে। তবে এখন ও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন প্রমাণ ভারতে মেলেনি।
ভারতীয়রা কতটা নিরাপদ?
বেশিরভাগ ভারতীয় ইতিমধ্যেই ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষকে ইতিমধ্যেই টিকার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ফলে বিশেষ প্রভাব ফেলবে না এই ভাইরাস এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর যদি এই ভাইরাস কোন কারণে ভারতে ছড়িয়ে পড়ে তবে তার প্রভাব ডেল্টার মত তীব্র হবে না, এমনই ধারণা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
Read in English