রাহুল দ্রাবিড় তখন ভারতের অধিনায়ক। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যুবরাজ সিংয়ের খারাপ কনভার্সন রেট নিয়ে। বলা হয়েছিল যুবরাজের তত বেশি ওয়ান ডে সেঞ্চুরি নেই। দ্রাবিড় ভদ্রলোক, শিষ্টাচারী। তিনি সে সাংবাদিককে কোনও খারাপ কথা বলেননি। তবে শ্লেষও লুকিয়ে রাখেননি তিনি। দ্রাবিড় বলেছিলেন, "৫, ৬, ৭ নম্বরে ব্য়াট করতে নেমে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তত বেশি বল খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। একজন ব্য়াটসম্য়ানের বিচার করা উচিত তিনি যে প্রভাব খেলার উপর বিস্তার করছেন তার দিকে তাকিয়ে, সেটা হল স্ট্রাইক রেট।"
সোমবার যুবরাজ কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। প্রায় দু দশকের এই কেরিয়ারে ৩০৪টি একদিনের আন্তর্জাতিকে মোট ১৪টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৮৭, যা এই পর্যায়ের ক্রিকেটের পক্ষে চমৎকার। শর্ট বল খেলার ক্ষেত্রে তাঁর দুর্বলতার কারণে ওয়ান ডে-র মত সাফল্য় যুবি টেস্টে পাননি। সাদা বলের খেলায় কিন্তু যুবরাজ অন্য়তম ম্য়াচ উইনার।
নিজের দ্বিতীয় ওয়ান ডে খেলেছিলেন ২০০০ সালের অক্টোবরে। চ্য়াম্পিয়নস ট্রফির সেই ম্য়াচে ১৯ বছরের যুবরাজ ম্য়াচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন। স্টিভ ওয়ার নেতৃত্বাধীন অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্য়াচে যুবি করেছিলেন ৮০ বলে ৮৪ রান। সে ম্য়াচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল শচীন তেণ্ডুলকরের। তিনি করেছিলেন ৩৮। কিন্তু যুবি তারকা হয়ে উঠলেন আরও বছর দুয়েক পর। ইংল্য়ান্ডে ন্য়েটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে, লর্ডসে, ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে। ৩২৬ রান করতে হবে জেতার জন্য় এ অবস্থায় যুবরাজ সিং যখন ব্য়াট করতে নামেন তখন ভারত ৫ উইকেটে ১৪৬ রান করে ধুঁকছে। এর পর যা ঘটে তা ভারতীয় ক্রিকেটের রূপকথায় ঢুকে পড়েছে। ষষ্ঠ উইকেটে ১২১ রান তোলে ভারত। যুবরাজের সঙ্গে জুটি ছিল মহম্মদ কাইফের। ৬৩ বলে ৬৯ রান করে যুবি যখন আউট হন তখন ভারতের জয়ের ভিত পাকা। কাইফ শেষ পর্যন্ত ব্য়াট করে ভারতের জয় ছিনিয়ে আনেন।
এক্স ফ্য়াক্টর যুবরাজের সঙ্গ দিয়েছিল ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। চারটি ম্য়ান অফ দ্য় ম্য়াচ এবং ম্য়ান অফ দ্য় টুর্নামেন্ট খেতাব জেতেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চিপকে শতরান করেন। তবে তাঁর সেরা ব্য়াটিং ছিল মোতেরায়, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে। অপরাজিত ৫৭ করেছিলেন যুবরাজ। ২৬২ রান তাড়া করতে গিয়ে ৫ উইকেটে ১৮৭ রান তুলে টুর্নামেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হাতছানি তখন ভারতের সামনে। যুবি ঘুরে দাঁড়ালেন। ২০০৭ সালের টি ২০ বিশ্বকাপের শুরু ম্য়াচে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ৬টি ৬-এর কথা ভুললেও চলবে না।
২০১১ সালের বিশ্বকাপের শেষে জার্ম সেলের ক্য়ানসার ধরা পড়ে তাঁর। মঙ্গলবার তাঁর বিদায়ী সাংবাদিক সম্মেলনে যুবরাজ বলেলন, "এ যেন আকাশ ছোঁয়ার পরে আলোর গতিতে নেমে এসে মাটিতে আছড়ে পড়া।" সে রোগকে হেলায় ছক্কা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন যুবরাজ। মারণ রোগ থেকে ফের ভারতের হয়ে খেলার জন্য় মাঠে ফেরা তাঁর জীবনের সেরা ট্রফি। সে প্রত্য়াবর্তন দুটো বিশ্ব খেতাবের চেয়েও বেশি।
অবসর নেওয়ারই ছিল যুবরাজের। তবে এও তো যুগাবসানই। সৌরভ গাঙ্গুলির ছেলেরা, যাঁরা ম্য়াচ ফিক্সিংয়ের অন্ধকার থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে আলোর দিশা দেখিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্য়ে আর বাকি কেবল হরভজন সিং।