Advertisment

১০০ কিমি হেঁটে বাড়ির দোরগোড়ায় মর্মান্তিক মৃত্যু ১২ বছরের শিশু শ্রমিকের

আন্দোরাম (৩২) এবং সুকমতী মাদকামের (৩০) একমাত্র সন্তান জামালো। এই প্রথম কাজের খোঁজে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল জামালো।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india migrant workers crisis

জামালো মাকদামের মা-বাবা

জামালো মাদকাম, ১২ বছরের মেয়ে, দু'মাস আগে শেষবারের মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল, তেলঙ্গানার লঙ্কার ক্ষেতে কাজ করতে, কিছু আত্মীয়-বন্ধুর সঙ্গে। রবিবার শেষবারের মতো ফিরল জামালোর নিথর দেহ, করোনাভাইরাস লকডাউনের মধ্যে তার বাড়ি ফেরার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে।

Advertisment

সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আদিবাসী ওই ছোট মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট-এর ভারসাম্যহীনতা এবং অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে। তিনদিন ধরে আরও ১৩ জনের সঙ্গে মিলে ১০০ কিলোমিটারের ওপর পথ হেঁটেছিল সে। মৃত্যু যখন আসে, তখন ছত্তিসগড়ের বিজাপুর জেলায় আড়েড় গ্রামে তার বাড়ি আর মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে।

আন্দোরাম (৩২) এবং সুকমতী মাদকামের (৩০) একমাত্র সন্তান জামালো। জঙ্গল থেকে বেচার মতো যা পান, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে মা-বাবার। এই প্রথম কাজের খোঁজে বাড়ির বাইরে গিয়েছিল জামালো। আন্দোরাম বলেন, "গ্রামের কয়েকজন মহিলার সঙ্গে তেলঙ্গানা গিয়েছিল ও।" সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল জানান, জামালোর পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ছত্তিসগড়ের বহু সংখ্যক আদিবাসী প্রতি বছর তেলঙ্গানার লঙ্কার ক্ষেতে কাজ করতে যান কিছু উপরি আয়ের আশায়।

আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে করোনায় মৃত ডাক্তারের অন্ত্যেষ্টিতে বাধা, স্থানীয়দের মারে জখম ২ স্বাস্থ্যকর্মী

আন্দোরাম বলেছেন, তিনি শেষবার জামালোর খবর পান ১৬ এপ্রিল, যেদিন তেলঙ্গানার পেরুরু গ্রামে তার কর্মস্থল থেকে সে একটি দলের সঙ্গে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। "লকডাউন আরও বাড়ানো হয়েছে, ফলে তারা কাজ পাবে না বুঝতে পেরে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় সবাই।" জামালোর সঙ্গে ১৩ জন্যের মধ্যে ছিলেন আটজন মহিলা। ছিল তিনটি শিশুও।

সূত্রের খবর, ১৮ এপ্রিল সকাল আটটা নাগাদ মারা যায় জামালো, তার দল তখন বিজাপুর জেলার সীমানায় এসে পৌঁছেছে। তার পরিবারকে জানানো সম্ভব হয় নি কারণ দলের মাত্র একজনের কাছেই ফোন ছিল, যেটির ব্যাটারি চার্জ না পেয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত বিজাপুর জেলার ভান্দারপাল গ্রামে পৌঁছে জামালোর মা-বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন দলের সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান, "আমাদের ওঁরা জিজ্ঞেস করেন মেয়েটির গ্রামে একটা ফোন করা যাবে কিনা।" ভান্দারপাল গ্রামের বাসিন্দারাই খবর দেন পুলিশেও।

বিজাপুর জেলার মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ বিআর পূজারী বলেন যে খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে যান তাঁরা। "তেলেঙ্গানায় যেহেতু করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে দল পাঠাই, কিন্তু ওদের খুঁজে পাই নি," বলেন তিনি।

ছত্তিসগড়ে বর্তমানে ৩৬ জন করোনা আক্রান্ত, যাঁদের মধ্যে ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজ্যের বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করলেই তাঁকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। ওদিকে তেলঙ্গানায় ৮৭২ জন করোনা পজিটিভ ঘোষিত হয়েছেন।

শেষমেশ বিজাপুর থেকে পাঠানো একটি মেডিক্যাল টিম দলটির নাগাল পেতে সক্ষম হয়, ভান্দারপাল গ্রামের ঠিক বাইরে। জামালোর দেহ মর্গে চালান করা হয়, এবং দলের বাকি সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয় কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে।

রবিবার সন্ধ্যাবেলা মেয়ের দেহ নিতে আসেন আন্দোরাম ও সুকমতী।

ডাঃ পূজারী বলেন, "মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে সম্ভবত ইলেক্ট্রোলাইট-এর ভারসাম্যহীনতা এবং অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে, যেহেতু তিনদিন ধরে হাঁটছিল ওই দলটি। জঙ্গলের মধ্যে দিয়েও হাঁটতে হয় তাঁদের, এবং এক জায়গায় পড়েও যায় জামালো।"

মৃত্যুর একদিন পর জামালোর করোনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায়। রেজাল্ট নেগেটিভ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus Lockdown
Advertisment