Advertisment

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় যা নিয়ে উত্তপ্ত, বেলুড় মঠে তাই 'স্বাভাবিক'

সংস্কৃতে ডক্টরেট ফিরোজ খানকে নিয়ে যখন উত্তাল বিএইচইউ, ঠিক সেই সময়ই বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃত পড়ানোর নিয়োগপত্র পৌঁছে যায় রমজান আলির হাতে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট

ফিরোজ খান মুসলিম, তাই সংস্কৃত পড়াতে পারবেন না, এমনই দাবি জানিয়ে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ধর্নায় বসেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিদ্যা ধর্ম বিজ্ঞান (এসভিডিভি)-এর শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংস্কৃত বিদ্যা বিভাগে নিয়োগ করা হয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রমজান আলিকে। কলেজ সার্ভিস কমিশন তাঁর নাম প্রস্তাব করে, এবং কলেজ কর্তৃপক্ষও যথানিয়মে নিয়োগপত্র দেন তাঁকে।

Advertisment

এটি খুবই সাধারণ ঘটনা বলে মনে করেন রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিক্ষকমহল। সংস্কৃতে ডক্টরেট ফিরোজ খানকে নিয়ে যখন উত্তাল হয়ে ওঠে বিএইচইউ, ঠিক তার পরেই সংস্কৃত পড়ানোর নিয়োগপত্র পৌঁছে যায় রমজান আলির হাতে। রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতে, "কোনো মানুষকে শুধুমাত্র ধর্মের নিরিখে দেখা যায় না। একজন শিক্ষক ও মানুষ হিসাবে দেখতে হয়। ছাত্রদেরও একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। বেলুড় মঠে শিক্ষকদের ভালো পড়ানো মন্দ পড়ানো নিয়ে চর্চা করা হলেও ধর্ম নিয়ে হয় না। বেলুড় মঠে ধর্ম শব্দটি একেবারেই গৌণ।"

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুভিরানন্দ বলেন, "আমাদের সংস্থা প্রকৃতপক্ষে বহুত্ববাদী। শ্রী রামকৃষ্ণ সর্বস্তরে সম্প্রীতির প্রচার করেছেন। সেখানে এমন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক এবং গর্বের বিষয়।" রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ শিক্ষামূলক ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপাচার্য্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ বলেন, "আমরা সহনশীলতা এবং সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা মেনে চলি। স্বামীজি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে কথা বলে গেছেন। আমরা বর্তমানেও তা মেনে চলি।"

বেনারস কাণ্ড সম্পর্কে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়, "এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ভারতবর্ষে যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস, সেখানে এটা কখনই কাম্য নয়। লেখাপড়ার বিষয়ের সঙ্গে জাত-পাত-ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা একেবারেই উচিত নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটি একটা ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়  এর সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগাযোগ নেই। যদি কেউ এমনটা মনে করেন, তাহলে জোর করে বলতে চাইছেন। আসলে এর পিছনে যে রাজনীতিটা রয়েছে তা হলো, অব্রাক্ষণরা বৈদিক শাস্ত্র পড়াতে পারবেন না। হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপার নয়।"

এর আগে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে ফিরোজ বলেন, “সারা জীবন ধরে আমি সংস্কৃত পড়ে এসেছি। কোথাও মনে হয়নি, আমি মুসলিম বলে সংস্কৃত পড়তে পারব না। এখন যখন সংস্কৃত পড়াতে গেলাম, তখন বিষয়টিতে ধর্মে নিয়ে আসা হলো।” প্রসঙ্গত, জয়পুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রী (স্নাতক), শিক্ষাশাস্ত্রী (বি.এড), আচার্য (স্নাতকোত্তর) এবং ২০১৮ সালে পিএইচডিও সম্পূর্ণ করেছেন ফিরোজ খান। ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট) এবং জুনিয়র রিসার্চ ফেলো (জেআরএফ)-এর যোগ্যতাও অর্জন করেন কৃতী ছাত্র ফিরোজ। তিনি বলেন, “আমি ক্লাস টু থেকে আমার মহল্লাতেই সংস্কৃত পড়া শুরু করি। সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিমের বাস। কোনও দিন আমাদের সমাজ কিংবা মৌলবীরা বাধা দেননি আমায়। আমি কোরানের থেকে সংস্কৃত অনেক বেশি জানি। আমি মুসলিম জেনেও আমার সংস্কৃতের জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন হিন্দুরা।” ফিরোজের বাবা রমজান খানও ছিলেন সংস্কৃতের ছাত্র।

ধর্নায় শামিল ছাত্রদের মধ্যে এবিভিপি, কেন্দ্রীয় ব্রাক্ষ্মণ মহাসভা এবং আরএসএস-এর সদস্য শশীকান্ত মিশ্র, শুভম তিওয়ারী এবং চক্রপানি ওঝাদের বক্তব্য, “যদি কেউ আমাদের ধর্মের না হন, তাহলে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি বুঝবেন? কীভাবে তিনি আমাদের ধর্মকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন?”

প্রসঙ্গত, কলেজে যে পদ খালি থাকে, সেই পদেই মেধার বিচারে প্রার্থী নিয়োগ করাই নিয়ম। 'ওবিসি এ' শ্রেণীতে মূলত মুসলিম প্রার্থীই নিয়োগ করা হয়। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হোক বা রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সব ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে বেদান্ত পড়ানোর জন্য নিযুক্ত হন শামিম আহমেদ।

Advertisment