Advertisment

সঙ্গে থাকুন, গোল করবেই বাংলার ফুটবল

ফুটবলে যত খুশি লাথি মারুন ক্ষতি নেই কিন্তু ফুটবলার-কোচ-কর্মকর্তাদের লাথি মারবেন না। আপনার কটূ কথায় ওঁরা নিরুৎসাহিত হবেন। কাজের লোক কিন্তু খুব কম। সমালোচনা বন্ধ হোক। আগামী কুড়ি বছর ফুটবলের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

আজকাল বড় গোল শোনা যায় যে বাংলার ফুটবল প্রায়-মৃত। ভেন্টিলেশনে আছে। ভারতীয় ফুটবলে বাংলার ফুটবলারদের সংখ্যাগত উপস্থিতির কথা সবিস্তারে বর্ণনা করে এই চিত্র তুলে ধরছে মিডিয়ার একাংশ। মিথ্যা চিত্র বলা যাবে না, কারণ পরিসংখ্যান কথা বলে। ভারতের সিনিয়র টিমে বাংলার ভাগ তেতাল্লিশে চার। বয়সভিত্তিক দলগুলোতে এক দুই বা শূন্য। এরপর আর বাংলার ফুটবল নিয়ে লেখার কী-ই বা থাকে? সহজভাবে বললে, থাকে না। কিন্তু সহজে নয়, একটু তলিয়ে দেখলে, গভীরে গেলে, অবশ্যই বলার থাকে। শুরুতেই একটি ডিসক্লেমার, প্রধানত পুরুষদের ফুটবল নিয়েই এই আলোচনা।

Advertisment

সব খেলার সেরা বাঙালির ফুটবল এখন কারা খেলে

এখন ফুটবল কোচিং ক্যাম্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এইসব কোচিং ক্যাম্পে অনেক বাচ্চা মাসিক মাইনে দিয়েও খেলা শিখছে। যদিও ক্যাম্প পরিচালনার ব্যয়ভারের তুলনায় এই আয়ের অংশ খুবই কম, তবু মানসিকতার একটা বদল ঘটে গেছে। পয়সা দিয়ে ফুটবল শিখছে বাঙালি! এটাও তো কম কথা নয়!

মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এখন প্রায় আর কেউই ফুটবল শিখতে আসে না। আসে মূলত নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা গরিব ঘরের ছেলেরা। ফুটবল মাঠে নামতে প্রাথমিক খরচই ৫০০ টাকা। বুট, সকস, জার্সি, সিন গার্ড। কষ্টে-সৃষ্টে জোগাড় করে তারা মাঠে নেমে পড়ে। জার্সি-প্যান্টের আয়ু অনেক দিন। কিন্তু বুট? বুটের আয়ু তিন মাস মেরেকেটে। না ছিঁড়লেও খাটো হয়ে যাবে। বাড়ন্ত বয়স যে। বাবা-মায়ের আর দ্বিতীয় বুট কিনে দেবার ক্ষমতা নেই। ক্যাম্পগুলোর যা আয়, কাকে ছেড়ে কাকে সাহায্য করবে! অতএব ফুটবলারটি মাঠ থেকে হারিয়ে যায় ও তার খেলোয়াড় জীবনের অপমৃত্যু ঘটে।

এই মুহূর্তে শহর-মফঃস্বলে খেলাধুলোর কোচিং ক্যাম্পের পরিসংখ্যানে এক নম্বরে ক্যারাটে। ফুটবল তিন নম্বরে। ক্রিকেট দুইয়ে। সবাই আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে। ক্যারাটে শেখার মাসিক দক্ষিণা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ফুটবল শিখলে যে শরীরটাও মজবুত হয়, আলাদা করে ক্যারাটে শিখতে লাগে না, কে বলবে এইসব আজকালকার মা-বাবাদের। মেয়েদের ক্যারাটে শেখার একটা মানে আছে। কিছু কৌশল শিখে রাখলে অন্তত পাতি লুম্পেনগুলোকে দু’ঘা দিতে পারবে।

ক্রিকেটের খুব পাতি ক্যাম্পেও দক্ষিণা মাসে ৩৫০ টাকা। ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, জামা-প্যান্ট, জুতো মিলিয়ে একলপ্তে খরচ ৭০০০ টাকা কমপক্ষে। ভলিবলের কোর্ট আকারের মাঠেও সিএবি অ্যাফিলিয়েশন দিয়ে দিচ্ছে। সিএবি অ্যাফিলিয়েশন না দিলেও জেলা আছে। কেউ না দিলেও, নিজেরাই শেখাচ্ছে। সারা বছর। মে মাসের রোদ, জুলাই- আগস্টের বৃষ্টিতে টুর্নামেন্ট চলছে। ইন্টার কোচিং ক্যাম্প টুর্নামেন্ট বা ইন্ট্রা কোচিং ক্যাম্প। কেন ভয়ানক গ্রীষ্ম্যে বা জলকাদার বর্ষায় ক্রিকেট হচ্ছে? দুর্ঘটনা ঘটে গেলে? প্রশ্ন করা যাবে না। চোপ! ক্রিকেট ক্যাম্প চলছে! গত কুড়ি বছর বাংলায় প্রচুর ক্রিকেট উন্মাদনা তো হল, কিন্তু জাতীয় দলে বাংলার প্রতিনিধিত্ব কোথায়? ক্রিকেটে তো সৌরভ এখন কর্তা। অনেক প্রভাব প্রতিপত্তি। তাও এমন অবস্থা কেন? শিবরাত্রির সলতের মতো একা ঋদ্ধিমান সাহা টিমটিম করছেন ভারতীয় দলে। অথচ ক্রিকেট নিয়ে মিডিয়ার একাংশের কিন্তু কোনও অভিযোগ নেই।

ক্রিকেট বা ক্যারাটে নিয়ে বলতে হল আজকের সামগ্রিক চিত্রটা তুলে ধরার জন্য, খেলা দুটো নিয়ে কোন বিতর্ক তৈরির জন্য নয়।

কর্মকর্তাঃ কোন খেলা যে খেলব কখন

এই মুহূর্তে যাঁরা কর্তা হয়ে আসছেন বা যাঁদের নিয়ে আসা হচ্ছে, তাঁরা বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। ক্লাব চালানোর জন্য কিছু টাকা পাওয়া যায় এঁদের থেকে। আর বিনিময়ে এঁরা এই প্ল্যাটফর্মটাকে কাজে লাগান ব্যবসা বাড়ানোর জন্য। প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী খুব কম। যাঁরা খেলে কিছু পেয়েছেন মানে তখনকার সময়ে ভালো চাকরি, তাঁদের কিন্তু ক্লাব সংগঠনে বা কোচিং ক্যাম্পে বা জেলার কর্মকর্তা পদে, কোনোখানেই দেখা যায় না। বেশি দেখা যায় প্রধান অতিথি হিসেবে। অবশ্যই প্রণামী নিয়ে। ব্যতিক্রমী দু'-একজন হয়ত আছেন। কিন্তু তা ব্যতিক্রমই।

বরং তুলনামূলকভাবে অসফল যাঁরা, যাঁরা চোট আঘাত, অভাব অনটন, সঠিক গাইডেন্সের অভাব বা কিছুটা নিজের ইগোতে হারিয়ে গিয়েছিলেন খেলা থেকে, ভালো চাকরি পাননি, কোনোক্রমে জীবনযুদ্ধে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন, তাঁদেরই আমরা দেখতে পাই ক্লাব সংগঠনে বা কোচিং ক্যাম্পে বা জেলার কর্মকর্তার পদে। অবশ্য বড় ক্লাবে পাওয়া যায় অনেককেই। প্রাক্তন খেলোয়াড়দেরও। কারণ, বড় ক্লাবে টু-পাইস আয় আছে। খেলার সামগ্রী সরবরাহ বা ফুটবলারের এজেন্ট সেজে পড়তি মাল দিয়ে ঝটতি কমিশন লুটে নেওয়াও খুব সহজ!

এঁদের বাইরেও কি কেউ নেই? আমি একজনকে চিনি। ফুটবল জগতে পরিচিত নাম। এক ডাকে সবাই জানে। মন দিয়ে ফুটবলটা করেন। অনেকটাই গাঁটের পয়সা খরচ করে। গ্রাম-বাংলা থেকে গরিব ঘরের ফুটবলারদের তুলে এনে যত্নে গড়ে তোলেন। বিশেষত আদিবাসী ছেলেদের। গ্রামের হাট থেকে সস্তায় চাল-ডাল কিনে গাড়িতে চাপিয়ে বাড়ি ফেরেন। নিজের কোম্পানীতে প্রচুর ফুটবলারকে চাকরি দিয়ে রেখেছেন। চেষ্টা করছেন বাংলার তথা ভারতীয় ফুটবলকে কিছু দেওয়ার। বিনিময়ে কী পাবেন জানা নেই। ক্লাব করেন স্রেফ ভালোবেসেই।
আমার জানার পরিধির বাইরেও বহু এমন ক্লাবকর্তা নিশ্চয় আছেন। তাঁরা আছেন বলেই ফুটবলটা আজও বাংলায় টিকে আছে।

দ্রোনাচার্যের এখন লাইসেন্স লাগে

লাইসেন্স ছাড়া এখন কোচিং চলবে না। এমনি-এমনি ফুটবল শেখানো যাবে না। ফিফা বলে দিয়েছে। আসলে সব দেশের একটা ফুটবল ঘরানা আছে। ইতালির কাতানেচ্চিও বা প্রতি-আক্রমণমূলক খেলা, হল্যান্ডের টোটাল ফুটবল, স্পেনের তিকিতাকা। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, সাউথ কোরিয়া, ইংল্যান্ড সব দেশের নিজস্ব স্টাইল আছে, সিস্টেম আছে। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের কোনো ঘরানা নেই। কোনো সিস্টেম নেই। সেটা তৈরির লক্ষ্যেই কোচিং লাইসেন্স। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোচেরা একভাবে সারা দেশে খেলা শেখাবে।

ডি লাইসেন্স, সি লাইসেন্স, বি লাইসেন্স, এ লাইসেন্স, ক্রমান্বয়ে অর্জন করতে হয়। ফলত জেলায়-জেলায় সবাই লাইসেন্স নিতে নেমে পড়েছেন। ২২-২৪ বছরের ছেলেও ডি লাইসেন্স করে রাখছে। যেমনভাবে এমএ-বিএড করে রাখে। যদি কোনোদিন কাজে লাগে। কিন্তু কোচিং একটা চর্চার বিষয়। চর্চা না-করলে মরচে পড়ে যায়।

তবুও ক্লাবের সংখ্যায় তুলনায় নির্দিষ্ট বি বা এ লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোচ এখনও অনেক কম। ফলত একই কোচ ৬-৭ টা টিম চালাচ্ছেন। কোনো ক্লাবেই কোচেদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতিই চলে। উপরন্তু পুওর পেমেন্ট স্ট্রাকচার। পেট চালানোই দায়। যাতায়াতের খরচ, খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগের খরচটাও কম নয়। যে সব কোচেদের হাতে খেলোয়াড়দের বড় স্টক আছে তাদের কদর বেশি। অতএব কোচেদের নীতি, যত পার ফুটবলারকে ক্লাবে নিয়ে নাও।

কোচিং লাইসেন্স কোর্সটা কিন্তু খুব সহজ নয়। ফুটবলারদের পক্ষে প্র্যাক্টিক্যালটা সহজ হলেও থিওরিটা কিন্তু যথেষ্টই কঠিন। পুরো বিষয়টা ইংরেজিতে করায়ত্ত করাই সমস্যার। কারণ, ফুটবলারদের লেখাপড়ার দিকটা যথেষ্টই দুর্বল। বাংলার কোচেদের কাছে ডি লাইসেন্সটা সহজ হলেও, সি, বি বা এ টপকানো অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে প্রাক্তন বড় ফুটবলারদের লাইসেন্স নিতে ব্যাপক অনীহা। ভাবটা এমন, আমার আবার লাইসেন্সের কী দরকার!

খেলব কোথায়, মাঠ গিয়েছে চুরি

গত কয়েক বছরে জেলাতে প্রচুর ভালো মাঠ হয়েছে। অনেক পুরসভা মাঠ তৈরি করেছে। একটা সময় খবরের কাগজে কমন হেড লাইন ছিল, এই খাটালের মতো মাঠে ভালো ফুটবল অসম্ভব। এখন এমন ম্যাচ রিপোর্টিং চোখে পড়ে না। সে সময় ভালো মাঠ বলতে ছিল মোহনবাগান মাঠ। অনেক পরে যুবভারতী এল। ব্যস আর নেই। এখন কল্যাণী, বিধাননগর, বারাসাত, নৈহাটী, ব্যারাকপুর, গয়েশপুর, মধ্যমগ্রাম, হাওড়াতে তো ভালো মাঠ আছেই, বহরমপুর, বালুরঘাট, হুগলী, খামারগাছি, কোচবিহার, চাকদহ, ঝাড়গ্রাম, সিউড়ি, মেমারী, কাটোয়াতেও ভালো মাঠ আছে।

এখন প্রশ্ন, ভালো মাঠ তো আছে, কিন্তু সেখানে ফুটবল হচ্ছে ক’দিন? সমস্ত ভালো মাঠ, সে ক্লাব হোক বা প্রাইভেট স্কুলের, সিএবি নিয়ে নিয়েছে। নতুন মাঠ হলেও নিয়ে নিচ্ছে। মোটা টাকা দিচ্ছে তারা। মাঠ তৈরি করলেই তো হয় না, তার রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। প্রচুর টাকার দরকার। আইএফএ-র টাকা নেই। কিন্তু, সিএবি’র ভাঁড়ারে প্রচুর টাকা। ফলত টাকার জন্যই সিএবির হাতে তুলে দিতে হচ্ছে নিজস্ব মাঠ। এছাড়া, ফ্ল্যাট করার জন্যও থাবা পড়ছে বড় মাঠের বুকে। ফুটবলের মাঠ এইভাবে চলে যাচ্ছে ক্রিকেটের হাতে অথবা প্রোমোটারের হাতে।

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে ফুটবল কোচিং চালুর জন্য কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তর নির্দেশ দিয়েছে। স্কুলগুলো কোচ রাখতেও শুরু করে দিয়েছে। মজার বিষয়, ৯৯ শতাংশ স্কুলের নিজস্ব মাঠই নেই। তাহলে খেলবে কোথায়?

ক্লাব ফুটবল কতটা বল দেয়

ক্লাব আমাদের ফুটবল সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু মাত্র ফুটবল খেলার জন্য রাজ্যে হাজারেরও বেশি ক্লাব আছে। কিন্তু সারা বছর সিনিয়রদের ফুটবল প্র্যাকটিস চলে এমন ক্লাব কুড়িটা আছে কিনা সন্দেহ। কলকাতা লিগে পঞ্চম ডিভিশন পর্যন্ত দুশো আটষট্টিটা ক্লাব আছে। এরমধ্যে একটিতেও সারা বছর প্র্যাকটিস চলে না। লিগের শুরুতে, মেশিনের স্পেয়ার পার্টস জোগাড় করে মেশিন চালানোর মতো, প্লেয়ার জোগাড় করে নেওয়া হয়। আগেই বলেছি, যে সব কোচেদের হাতে খেলোয়াড়ের স্টক বেশি, তাঁদের কদরও বেশি। বাজেট ৭০-৮০ হাজার থেকে ৫০ লাখ। বড় তিনটে টিম বাদ দিয়ে। ঐ সব কোচেদের কাছে সব ডিভিশনেরই একটা- আধটা টিম থাকে। তিনি টিম বানিয়ে দেন। শুরু হয় খেলা। কিন্তু প্র্যাকটিস ও ফুটবলারদের দায়িত্ব? বেশিরভাগ কর্তাই তো বলে দিয়েছেন, টিমকে ওপরে ওঠানোর দরকার নেই। শুধু টিকিয়ে রাখবে। কারণ, সবাইকে টিকে থাকতে হবে তো। তাই টেবিলেই খেলা হয়ে যায় মানে সেটিং হয়ে যায়। বছরের পর বছর ক্লাবও টিকে থাকে, কর্তাও টিকে থাকেন। ওপরে উঠে গেলে খরচ বেশি। আবার নীচে নেমে গেলে সম্মানহানি। তাই স্থিতাবস্থা।

ভাঁড়ানো বয়স ও ফুটবল ভাঁড়ামো

পুরনো দিনের আন্ডার-হাইট ফুটবল টুর্নামেন্টের বদলে এখন সব জেলায় আন্ডার-এজ ও পয়েন্টভিত্তিক (হাইট-ওয়েট মিলিয়ে) ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়। আর এখানেই লুকিয়ে আছে আসল ব্যাধি। বাংলার ফুটবল তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে বয়স-ভাঁড়ানো। এতে সবাই যুক্ত। কোচ, কর্মকর্তা, ফুটবলার, অভিভাবক সবাই। এক-একজন ফুটবলারের কাছে তিন-চারটে জন্ম-শংসাপত্র। তিন-চারটে আধার কার্ড। সবই আসল বা আসলের মতো। বোঝার উপায় নেই। এতেও কাজ না-হলে অন্যের পরিচয়পত্রে ছবি ট্যাম্পার করে খেলা তো আছেই।

ব্যারাকপুরে একটি ফুটবল ক্যাম্পের সঙ্গে আমি যুক্ত। গত আট বছর ধরে ক্যাম্পটি চলছে। ভালোভাবে নয়। কোন রকমে। অভিজ্ঞতা বলে, ১২ বছরে বাঙালি ছেলে একটু খেলতে শেখে। পায়ে ঠিকঠাক জোর আসে ১৪ বছরের পর। কিন্তু সাধারণ টুর্নামেন্টে আন্ডার-টুয়েলভে প্রায় ত্রিশ গজ দূর থেকে গোলার মতো শট মেরে গোল করছে ‘কচি’ ফুটবলার। তখন সন্দেহ তো জাগেই।

এখন অবশ্য এআইএফএফ-স্বীকৃত টুর্নামেন্টে মেডিক্যাল টেস্ট হচ্ছে। কনুই পরীক্ষা করা হয়। আগে দাঁত দেখে হত। নামী প্রাইভেট হাসপাতালে করা হচ্ছে এই টেস্ট। তবে যা খরচ, তা বহন করা ছোট ক্লাবগুলোর পক্ষে অসম্ভব। আর আমাদের বড় দলগুলো বয়স-ভাঁড়ানোকে গা-জোয়ারির বিষয় করে ফেলেছে। বারো ক্লাসে-পড়া ছেলে অনুর্দ্ধ তেরো খেলেছে। বাঙালিদের তো তাও চেহারা দেখে বোঝা যায়। কিন্তু নর্থ ইস্ট? কী করে বুঝবেন? চেহারা দেখে? সকলেরই ছোটখাটো চেহারা। দাড়ি-গোঁফের বালাই নেই। মিডলনেমটাই নাম। ফার্স্টনেম আর সারনেম সব ভাইয়ের এক। ছোট ভাইয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে বড় ভাই খেললে ধরে কার সাধ্যি!

স্কুল টুর্নামেন্টের অবস্থা আরও শোচনীয়। একসময় সুব্রত কাপ জেতা ছিল বেশ সম্মানের। এখন আর সুব্রত কাপ নিয়ে কেউ খোঁজ রাখে না। মিডিয়াও না। তলিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণ একটাই, বয়স-ভাঁড়ানো। রিলায়েন্স কাপ-সহ অন্যান্য টুর্নামেন্টেও এখন স্কুলগুলো অন্য স্কুলের ছেলে খেলাচ্ছে। কলেজ-আউট ছেলেরা স্কুলের হয়ে খেলে দিচ্ছে। জিতলে স্কুলের ম্যাগাজিনে ওদের রঙিন ছবিও ছাপা হচ্ছে। কোনো নৈতিকতা নেই। শিক্ষকরা যদি এমন তঞ্চকতা করেন তাহলে, কী ভবিষ্যত হবে আমাদের!

খেপ খেপ খেপ

খেপ খেলেছে শুনলেই কর্মকর্তারা এমন একটা ভাব করেন যেন মনে হয় ফুটবলারটি নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েছিল। যাতায়াতের খরচটুকুও সে ক্লাব থেকে পায় না, খেপ না-খেললে ফুটবলারটি খাবে কী? খেপ খেলে ওডাফা ওকোলি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেন। ক্রোমা ক্লাব থেকে যা পান, খেপ খেলে তার তিনগুন টাকা রোজগার করেন। আর বাঙালি ফুটবলারটি খেললেই ফুটবল রসাতলে! এ কেমনতর ব্যাখ্যা!

তবে ফুটবলারদের লোভও কম নয়। একই দিন-রাতে তিন-চারটে ক্লাবের হয়ে নেমে পড়ছে। একটা মোটর সাইকেলে তিনজন করে এ-মাঠ সে-মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। খেলার পোশাকটা পর্যন্ত খোলে না। এই খেপ খেলেই বহু প্লেয়ার গাড়ি-বাড়ি অবধি করেছে!

আবার খেপ খেলতে গিয়ে বহু প্লেয়ার এমন চোট পেয়েছে যে আর মাঠেও ফিরতে পারেনি। ছোট থেকে প্রোটিন-ভিটামিন জোটে না। বড় হয়েও পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত জোটে না। এত ধকল মাসল নেবে কী করে! বিশ্রামের বালাই নেই! সেই এক পরিণতি। ধীরে ধীরে ফুটবলারটি ‘খেলছে’ থেকে ‘খেলতো’ হয়ে যায়। বর্তমান থেকে নিমেষে অতীত।

যেভাবে ইলিশ-ধরা নিষিদ্ধ থাকে বছরে ছয় মাস, যেভাবে অরণ্যে-ঢোকা নিষিদ্ধ থাকে জুন থেকে সেপ্টেম্বর, সেভাবে মে থেকে অক্টোবর সমস্ত ওয়ান ডে, টু-ডেজ খেপ টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখা হোক। ক্লাবের খেলার বিঘ্ন না-ঘটিয়ে নিজেকে চোটমুক্ত রেখে নভেম্বর থেকে এপ্রিল খেলুক খেপ। ক্ষতি কী! এটা তো সম্মিলিত চেষ্টায় করাই যেতে পারে।

ফুটবল ট্রায়াল আসলে কার ট্রায়াল

ট্রায়াল দিয়ে ফুটবলার নেয় অনেক ক্লাব। কিন্তু ট্রায়াল একটা গালভরা নাম ছাড়া আর কিছুই নয়। ট্রায়ালে ডাকলে একটু ক্লাবের নাম-টাম বের হয় মিডিয়ায়। ট্রায়ালের দিনে ২০০, ৩০০ ছেলে আসে। ফুটবলাররা দুর-দুরান্ত থেকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে আসেন! দুটো টিম করে খেলানো হয়। মিনিট পনেরো।

তারপর পাঁচ-ছ’জন কোচ, হাফ-কোচ দু’চার জনকে ডেকে নেয়। প্রথম প্রশ্ন, তোকে কে পাঠিয়েছে? উত্তর চেনা হলে, তুই থাক। সুপারিশ না-থাকলে সে ছেলে চলবে না। যুক্তি তৈরি থাকে। ছোটখাটো চেহারা। নর্থ ইস্টের ছেলেদের সাথে গায়ের জোরে পারবে না। হাফ-কোচ হয়ত বললেন, দাদা ছেলেটার গেমসেন্স যথেষ্ট ভালো, ডিস্ট্রিবিউশন ভালো, কভারিং ভালো, বল হোল্ড করে খেলতে পারে। দাদা বলবেন, "শোনো আমার গুরু প্রদীপদা। উনি সব সময় বলতেন, আধুনিক ফুটবলে বড় চেহারা ছাড়া অচল"।

পেছন ফিরে তাকালে দেখব, প্রদীপদার প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে গৌতম সরকার, সুধীর কর্মকার, হাবিব, সুনির্মল চক্রবর্তী-সহ আরও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা সবাই চেহারায় ছোটখাটো হলেও দীর্ঘদিন চুটিয়ে খেলেছেন। আজকের মেহতাব হোসেন, সুনীল ছেত্রী, জেরি, অনিরুদ্ধ থাপা, জেজেরা ছোটখাটোই। মুশকিল হচ্ছে, প্রদীপদা বলেছেন বললে তো আর কথা চলে না। ওদিকে আমেরিকার বিখ্যাত বাস্কেটবল লিগ এনবিএ-তে ৫ফুট ৩ ইঞ্চি’র বাস্কেটবলারও চুটিয়ে খেলছেন।

আধুনিক ফুটবলে বড় চেহারা প্রয়োজন, এ তো কেউ অগ্রাহ্য করতে পারে না। কিন্তু ট্রায়ালে সব সময় যদি বড় চেহারার দিকেই কোচের চোখ থাকে, তাহলে দেখা যাবে তার টিমে অচিরেই মাঝারিমানের বড় চেহারার ফুটবলারে ভর্তি হয়ে যাবে, আর সে টিম অনিবার্য মুখ থুবড়ে পড়বে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, বাইচুং, বিজয়নও কিন্তু টিএফএ’র ট্রায়ালে সুযোগ পাননি।

বাংলা ফুটবলে নতুন টার্ম- স্কাউট। কয়েক মাস আগেও শব্দটা বাংলা ফুটবলে চালু ছিল না। এখন মিডিয়ায় তো ব্যবহৃত হচ্ছেই, ছোটখাটো আলোচনাতেও হরদম শোনা যাচ্ছে। কথায় কথায় যে প্রাক্তন ফুটবলাররা সমালোচনা করেন, তাঁরা আর কিছু না-করুন, স্কাউটিং-এর দায়িত্বও তো নিতে পারেন। বিনা-স্বার্থে, বিনা-পারিশ্রমিকে ছ’টা মাস, সপ্তাহে একদিন ঘুরে বেড়ান না! ফুটবল তো আপনাদের গাড়ি দিয়েছে, বাড়ি দিয়েছে, সম্মান দিয়েছে। নিজেদের অতীতে ফিরে যান। মনে করে দেখুন, আপনাকেও কেউ হাত ধরে তুলে এনেছিল। কথায় কথায় সমালোচনা না-করে একটু নীচে নামুন না। ছয় মাসে কুড়িটা ছেলে স্কাউট করতে পারবে। নিশ্চিত।

আগে কী সুন্দর বল খেলিতাম

অতীতচারিতা আমাদের স্বভাব। আগে-সব-ভালো-ছিল আমাদের মুদ্রাদোষ। কিন্তু এটা অনস্বীকার্য ফুটবল খেলা আগের থেকে অনেক কঠিন হয়েছে, মানও আগের থেকে অনেক ভাল।

অতীতের জন্য দুঃখ হয়। কোচ এসেই ২৫ পাক দৌড় করাতেন। একঘেয়ে। কোনো নতুনত্ব নেই। বাঁধা-ধরা কিছু ড্রিল। এখন অসংখ্য নতুনত্ব। পাড়ার ক্যাম্পেও। ইউটিউবে ‘হাও টু ড্রিবল’ বা ‘হাও টু টেক শট’ বা ‘হাও টু হেড’ সব মেলে। সেটাই প্রয়োগ করতে হয় মাঠে। বিশ্বের সব লিগের খেলাও মুঠোবন্দী। বর্তমান সত্যিই এদিক থেকে ভাগ্যবান।

আধুনিক বল, বুট, মাঠ, কোচিং পদ্ধতি খেলাটাকেই বদলে দিয়েছে। খুব ছোট থেকেই অনেক বেশি আধুনিক ফুটবল দেখার ফলে খেলার মানেরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। একথা স্বীকার না করে উপায় নেই।

অতীত গৌতম সরকারের ফ্রি কিক, শ্যাম থাপার ব্যাক ভলি, পিন্টু চৌধুরীর গোল বা মিহির বসুর ভলি মনে রেখেছে। এখন একটু ভালো টুর্নামেন্টে ওইরকম গোল আকছার দেখা যায়। কিন্তু বড় দলগুলো তাদের সুযোগ দিচ্ছে কই? কলকাতার দলগুলো অনুর্দ্ধ ১৮, অনুর্দ্ধ ১৫-তেও একই মানের মনিপুর-মিজোরামের খেলোয়াড় খেলাচ্ছে, বাঙালি খেলোয়াড়কে সুযোগ দিচ্ছে না। তাহলে বাংলায় ফুটবলার উঠছে না-বলে হতাশার চিত্র তুলে ধরে লাভ কী!

আর্থিক দিক থেকে আজ সর্ব্বোচ্চ স্তরের ফুটবলারদের রোজগার যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, বহু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার- আইএএস-অ্যাডভোকেটদের কাছে সেটা স্বপ্ন। হয়ত সৌরভ বা মনোজ তেওয়ারি বা ঋদ্ধিমান সাহার মতো রোজগার-করা খেলোয়াড় নেই, কিন্তু বাংলায় এইমুহূর্তে খেলছে, আইএসএল এবং আই-লিগ মিলিয়ে, জনা ত্রিশ খেলোয়াড়ের রোজগার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। চিত্রটা আজকের সমাজব্যবস্থায় খুব হতাশার কি?

আমরা কি আদৌ সমর্থক হতে পেরেছি

আমরা বাঙালিরা ভালো সমালোচক হতে পেরেছি কিন্তু ভালো সমর্থক হতে পারিনি। মাচা আর লোটাতে বিভক্ত হয়ে গেছে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার ফুটবলভক্তরা। একদল গত বারো বছর আই-লিগ এক বার জিতেছে। আর এক দল তাও পারে নি। তবু পরস্পরকে গালাগালের সময় দু-দলের আনন্দ আর ধরে না। মাঠে খেলা দেখতে গিয়ে জঘন্য নোংরা গালাগাল শুনলে খেলা দেখার ইচ্ছেটাই চলে যায়। তার সাথে আছে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি। রেফারির উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষা প্রয়োগ। পরিস্থিতি এমন যে মাঠে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে সাপোর্টারদের ভালবাসা ও ভাষায়, সেই বাচ্চার মানসিক বয়স অন্তত পাঁচ বছর বেড়ে যাবেই। মহিলারা কেউ মাঠমুখো হন না, এদের সমর্থনের ঠ্যালায়!

আইএসএলে দর্শক হচ্ছে না। অতএব দু’হাত তুলে নাচো। ওখানে ইস্ট-মোহন নেই। তাই ওটা উঠে যাক। ওখানে বুড়ো-বুড়ো প্লেয়াররা খেলে। কর্পোরেট দলগুলো টিকিট বিলিয়ে মাঠ ভরায়। অতএব নীতা আম্বানীর আইএসএল নিপাত যাক। অথচ ফুটবলটা যদি ভালবাসতাম আমরা, তাহলে আইএসএলের খেলা উপভোগ করতাম। এবারের আইএসএলের গড় বয়স আগের থেকে অনেকটাই কম। আইএসএল উৎসব থেকে ধীরে ধীরে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। ভারতীয় ফুটবলাররা বিশ্বমানের গোল করছে। গোলকি’রা বিশ্বমানের সেভ করছে। বাংলার বেশ কিছু নতুন ছেলে আইএসএলে খেলছে। এটা কি সমর্থনের বিষয় নয়?

তবে বাংলার নেক্সট জেনারেশনের মধ্যে ইস্ট-মোহন নিয়ে আর সে আবেগ নেই। আর কয়েক বছরের মধ্যে এই সাপোর্ট-বেস ধাক্কা খাবেই। বার্সা, রিয়্যালের সাপোর্ট-বেস তৈরি হচ্ছে এই বাংলায়। এই সমর্থন যে এটিকে-তে ঘুরে যাবে না, সেই গ্যারান্টি কোথায়!

ময়দান মার্কেট থেকে একশ টাকার জার্সি কিনে, মুখে দশ টাকার রঙ আর দশ টাকার ফেট্টি বেঁধে সস্তা সমর্থকের দল যায় সস্তা সমর্থন করতে। জুভেন্টাস রোনাল্ডোর ৭ নং জার্সি বেচে ট্রান্সফার ফি তুলে নিল! অথচ এই বাজারে অ্যডিডাস বা নাইকে ইস্ট-মোহনের জার্সি বানানোর সাহস পেল না, যদি বিক্রি না হয়! আমরা তবে কেন সমর্থনের বড়াই করি!

মিডিয়া তুমি কী দিয়া খবর বানাও

এখন মিডিয়াতে খেলার পাতা একাধিক। আগের মতো শুধু শেষ পাতা নয়। অনেক খেলার অনেক খবর। কিন্তু বাংলার ফুটবলের খবর দেখতে পান? পান না। গত কুড়ি বছর ধরে এটা চলছে। ইস্ট-মোহনের খবর থাকে। আর থাকে কেচ্ছা-কেলেংকারী আবিষ্কৃত হলে তার খবর। কিন্তু নির্ভেজাল বাংলা ফুটবলের খবর পাবেন না। জেলার ফুটবল? জেলার টুর্নামেন্ট? তার ছবি? এগুলো ছাপা হয় না। অথচ বাংলা ফুটবল রসাতলে গেল বলে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করার সময় নিউজপ্রিন্ট ঠিক জুটে যায়!

সারা ভারতে অসংখ্য ফুটবল স্কুল হয়েছে। অ্যাকাডেমি হয়েছে। তাদের সাথে প্রতিনিয়ত লড়তে হচ্ছে। আগে এই লড়াইটাই ছিল না। ভারতীয় ফুটবলে এটা স্বাস্থ্যের লক্ষণ। এআইএফএফ সঠিক পথেই এগিয়ে চলেছে। ঠিক এখানেই বাংলার চ্যালেঞ্জ। মনে রাখবেন ক্রিকেটে মুম্বই, পরবর্তীকালে বেঙ্গালুরু কারও আর আগের সেই রমরমা নেই। ওখানকার মিডিয়া ক্রিকেটের করুণ দশা বলে ক্রিকেট সংস্থা ও ক্রিকেটারদের তুলোধোনা করে না।

kolkatafootball.com বলে একটা অনলাইন পেজে বাংলার ফুটবলের সামান্য কিছু খবর পাওয়া যায়। প্রিন্ট মিডিয়া কিছুই করে না, অগভীর সমালোচনা ছাড়া!

কোন পথে মুক্তিঃ চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা!

১. বেবি লিগ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করতে হবে এবং তা করতে হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে। সমস্ত প্লেয়ারদের সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে আনতে হবে, হ্যাঁ বেবি লিগ থেকেই। মিজোরাম ইতিমধ্যে চালু করে দিয়েছে। ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চারা মানে ছেলে ও মেয়েরা একসাথে খেলবে।
২. সমস্ত জেলা স্তরের ফুটবল টুর্নামেন্টেও সমস্ত প্লেয়ারদের সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে রেজিস্টার্ড করতে হবে।
মহকুমা স্তরে যে সব স্কুল বা কলেজের নিজস্ব মাঠ আছে তাদের মধ্যে থেকে একটা স্কুল আর একটা কলেজ বেছে নিতে হবে। সেখানে হোস্টেলের ব্যবস্থা করে ফুটবলারদের ট্রেনিং দিতে হবে। মহকুমার ফুটবলারদের স্কাউটিং করতে হবে যথাযথ। এভাবে ৬৬টা মহকুমায় বিভিন্ন বয়সের ৬০০০ ফুটবলারকে ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব।
৩. সরকার খড়দহে ফুটবল অ্যাকাডেমি করেছে। এইরকম অ্যাকাডেমি আরো করতে হবে।
৪. ব্লক স্তরে নিয়মিত ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা দরকার। প্রত্যেক পুরসভা ও প্রত্যেক ব্লকে ফুটবল টিম আবশ্যিক করতে হবে।
৫. প্রতিভাবান ফুটবলারদের স্টাইপেন্ড চালু করতে হবে। জেলাস্তরে-খেলা সমস্ত ফুটবলারদের বীমার আওতায় আনতে হবে।
৬. সরকার এখন বহু ক্যাজুয়াল কর্মী নিয়োগ করেছে। সঠিক তত্ত্বাবধানের জন্য, পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থায় ত্রিশোর্ধ ফুটবলার নিয়োগ করা যেতে পারে।

পরিশেষে বলি, ফুটবলে যত খুশি লাথি মারুন ক্ষতি নেই কিন্তু ফুটবলার-কোচ-কর্মকর্তাদের লাথি মারবেন না। আপনার কটূ কথায় ওঁরা নিরুৎসাহিত হবেন। কাজের লোক কিন্তু খুব কম। সমালোচনা বন্ধ হোক। আগামী কুড়ি বছর ফুটবলের। পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা থাকলে, নিশ্চিত থাকতে পারেন বাংলা-ফুটবলের করুণ দশা কাটবেই।

Football Kolkata Football
Advertisment