Advertisment

গির্জার ধর্মীয় বোধ, বাঙালির ঈদ

"মসজিদে নয়, বার্লিনের একটি বড় গির্জার দ্বার উন্মুক্ত, ইফতারির আগে ও পরে রোজদার ঢুকছেন প্রার্থনার জন্য, অবশ্যই মুসলিম প্রার্থনা, সমাবেশ।" বার্লিন থেকে লিখলেন দাউদ হায়দার

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
berlin church eid prayers

ঈদের সাজে সজ্জিত মুম্বইয়ের গির্জা। ছবি: নির্মল হরিন্দ্রন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

মসজিদে নয়, বার্লিনের একটি বড় গির্জার দ্বার উন্মুক্ত, ইফতারির আগে ও পরে রোজদার ঢুকছেন প্রার্থনার জন্য, অবশ্যই মুসলিম প্রার্থনা, সমাবেশ। গির্জার প্রধান দরজায় দাঁড়িয়ে যাজক (গির্জার 'প্রিস্ট' তথা যাজক), তিনি নারী, স্বাগত জানাচ্ছেন, "আসুন। ঈশ্বরের সব ঘরই সব মানুষের জন্যে। আমরা আপনাদের। আমরা মানবসত্তায় এক, একক। মানুষ-মানুষে ভেদাভেদ নেই। মানবতায় ঈশ্বরের ভেদাভেদ নেই। ধর্ম যে নামেই হোক।"

Advertisment

এই ছবি জার্মান মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারিত (জার্মান বেতার তরঙ্গ 'ডয়েচ-ভেলে'তেও), দেখে বলছেন অনেকেই, "করোনার মাহাত্ম্য। করোনা জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে একত্রিত করছে, সাম্যবাদী দুনিয়ায় করোনার ভূমিকা নেপথ্যে। করোনাভাইরাস ধর্মাধর্ম বিচার করে না।" যাঁরা বলছেন, ধর্মের পরিচয়ে নয়, প্রত্যেকে মানুষ। কেউ খ্রিষ্টান, কেউ ইহুদী, কেউ মুসলিম, কেউ শিখ, কেউ হিন্দু, কেউ নাস্তিক, কেউ আস্তিক।

berlin church eid prayers গির্জার অভ্যন্তরে রোজার নামাজ। ছবি: ডয়েচ ভেলে'র ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট

"সব ধর্মের ঘরদুয়ার সব মানুষের জন্য খোলা রাখাই ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ, তাঁর কাছে মানব কল্যাণের প্রার্থনাই আমাদের আত্মচেতনার বিকাশ, আঁধার দূর হয়ে আলোকিত বিশ্ব এবং মানবতার সূর্য জাগ্রত, অমলিন।" গির্জার যাজকের 'বাণী' শুনতে অনেকের ভিড়, কথাগুলো যদিও খ্রিস্টীয় ধর্মীয় নেতা পোপের, কিন্তু করোনাকালে, রোজার সময় 'বাণীর' তাৎপর্য আরও বেশি বৈশ্বিক মানবতায় পূর্ণ। বার্লিনের ধর্মযাজক এখন মাতা মেরীর চেয়েও মা জননী। তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে ভিড়।

আরও পড়ুন: সেমাইয়ের পায়েস, ইদ-উল-ফিৎর, ও চারু মজুমদার

করোনার কারণে মসজিদে মুসলিমদের সমাগম কম, তারাবি নামাজেও জনসংখ্যা সামান্য। নামাজে দূরত্ব বজায় রাখা পয়লা শর্ত। সালাম দেওয়াও দুই মিটার দূর থেকে। কোলাকুলি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে দুটি মসজিদ, বাংলাদেশিদের। সমস্যা, ইফতারির আগে পরে, একত্রিত হওয়া আগের মতো নয়, করোনার কারণে। বাঙালিরা মানতে বাধ্য, না মেনে উপায় নেই।

বার্লিন সহ জার্মানি, ইউরোপে ভারত উপমহাদেশিয়দের দুটি ঈদ। মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকা সৌদি আরবের ঈদের দিনক্ষণ মানে, যেমন, আমাদের দেশে আজ সোমবার ঈদ, আরব-ইউরোপে রবিবার। সবটাই চাঁদ নির্ভরশীল। একমাসের রোজারও।

ইউরোপের বাঙালি তথা ভারত উপমহাদেশের মুসলিমদের দুই ঈদ সৌদি এবং দেশীয় কালচারে (তাও চাঁদ নির্ভরশীল) দুই দিনই চাঁদের অনুষ্ঠান, নামাজ বাদে। এখানেও ভিন্ন কালচার এবং দেশীয় কালচার। দুই কালচার একত্রে উদযাপিত নয়। আরবি ঈদ ধর্মীয়, দেশীয় কালচারে (দেশে ঈদ) ধর্ম ও আনুষ্ঠানিকতা যুগপৎ। সামাজিক সম্মিলন, মেলামেশা, খানাপিনা। এর-ওর বাড়িতে যাতায়াত, যেমন হয় দেশে।

এই ট্র্যাডিশনে লক্ষ্য করি, বাঙালির সামাজিক সম্পর্ক দেশীয় কালচারে নিবিড়, মাসের পর মাস দেখা না হলেও ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরোয়া। দেশকে কাছে পাওয়া, দেশীয় মানুষ, দেশীয় ভাষার একাত্মতা সঘন। নির্বাসনের কালচার, আইডেন্টিটির কালচার। দেশজ কালচার। নিজেকে ধর্ম-কালচারে প্রকাশ।

'বাঙালির কালচারে দুটি সত্তা, ধর্ম ও দেশীয় সত্তা', ডক্টর আহমেদ শরিফ এরকমই বলেছেন একটি লেখায়। এই দুই সত্তায় বাঙালি মুসলিম অবিভাজিত, ঈদেও প্রমাণিত। এই প্রমাণে নিজস্বতা যেমন, ধর্মেও। ঈদ উপলক্ষ্য। এখানে মানবিকতাও।

রোজার প্রার্থনা উপলক্ষে বার্লিনের গির্জার যাজক আরও বলেছেন, "সব ধর্মে, কালচারে মানবতাই আত্মিকতার জয়গান।" কে একজন বললেন, "যতই বলুক, ঈদে পোলাও-বিরিয়ানি-কোর্মা নেই, ধ্যেৎ। জার্মানরা খেতেও জানে না।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

ramzan eid eid
Advertisment