Advertisment

গান্ধীজীর সার্ধশতবর্ষে ব্রিটিশ মিউজিয়মের শ্রদ্ধাঞ্জলি, সৌজন্যে তিন বাঙালি

"এই প্রথম ব্রিটিশ মিউজিয়মে বাংলা গান শোনা যাবে। 'মিলে সুর মেরা তুমহারা' শোনা যাবে। 'জনগণমন' শোনা যাবে," বলছেন কণ্ঠশিল্পী সৌম্যজিৎ দাস

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mahatma gandhi 150 years

লন্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়মের সামনে সৌম্যজিৎ-সৌরেন্দ্র

কিংবদন্তী দক্ষিণী সঙ্গীতশিল্পী এম এস শুভলক্ষ্মীর গানের ভক্ত ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, একথা অনেকেরই হয়তো জানা। কিন্তু তাঁরা সবাই একথা হয়তো জানেন না যে গান্ধীজী একবার শুভলক্ষ্মীকে অনুরোধ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে 'রঘুপতি রাঘব রাজা রাম' গাইতে, এবং শুভলক্ষ্মী সেই অনুরোধ প্রথমে ফিরিয়ে দেন। কারণ তিনি গানটা জানতেন না। তাতে গান্ধীজী নাকি বলেছিলেন, "উনি যদি সুর ছাড়া শুধু আবৃত্তিও করেন, তাহলেও চাইব উনিই করুন, অন্য কেউ গানটা জেনে গাওয়ার চেয়ে।"

Advertisment

এমন আরও অনেক গল্পে এবং গানে আগামীকাল, ২ অক্টোবর, লন্ডনে বসতে চলেছে সভা। উপলক্ষ্য মহাত্মা গান্ধীর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী। কিন্তু এ কোনও প্রথাগত সভা নয়। প্রথমত, সভাস্থল হলো বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ মিউজিয়ম। দ্বিতীয়ত, মিউজিয়মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, অর্থাৎ প্রধান 'এট্রিয়ামে' অনুষ্ঠিত হবে এই গান-গল্পের আসর। এবং তৃতীয়ত, এই অনুষ্ঠানের কেন্দ্রে তিন বঙ্গতনয় - সৌম্যজিৎ দাস (কন্ঠ), সৌরেন্দ্র মল্লিক (পিয়ানো ও অন্যান্য), এবং বিশ্বজিৎ রায় (তবলা)। এর আগে অত্যন্ত সম্মানীয় এই মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন স্রেফ দুজন ভারতীয় - এক, অনুষ্কা শঙ্কর, যখন তিনি তাঁর প্রবাদপ্রতিম বাবা রবিশঙ্করের সেতার মিউজিয়মের হাতে তুলে দিতে আসেন, এবং দুই, বাংলার জনপ্রিয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী।

publive-image এই সেই ব্রিটিশ মিউজিয়মের এট্রিয়াম, যেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ

কীভাবে ঘটল এই যোগাযোগ? "কলকাতা সফরে এসেছিলেন ব্রিটিশ মিউজিয়মের ডিরেক্টর হার্টউইগ ফিশার। আমাদের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর ডঃ জয়ন্ত সেনগুপ্তর মাধ্যমে। তারপর দীর্ঘ আড্ডা হয় নানান ধারার ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে। সেখান থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সেই সংগ্রামে সঙ্গীতের অবদান, সেখান থেকে গান্ধীজীর ১৫০ বছর," জানাচ্ছেন সৌরেন্দ্র।

বলা বাহুল্য, সেই আলোচনা এবং উভয় পক্ষের উৎসাহ থেকেই উঠে আসে এই অনুষ্ঠানের ভাবনা। সৌরেন্দ্রর বক্তব্য, স্রেফ সঙ্গীতশিল্পী নয়, সঙ্গীত গবেষক হিসেবেও তাঁর এবং সৌম্যজিতের লক্ষ্য ছিল এমন একটি অনুষ্ঠান পরিবেশন করার, যাতে মহাত্মা গান্ধী প্রেরিত শান্তি এবং ভ্রাতৃত্বের বার্তার পাশাপাশি উঠে আসবে সেইসব সঙ্গীতজ্ঞের সৃষ্টি, যাঁরা এই বার্তা দিয়েছেন।

সৌম্যজিতের কথায়, "আমরা চেয়েছিলাম গান্ধীজীকে শুধু স্মরণ করতে নয়, উদযাপন করতে। এবং এটা বলতেই হয়, স্বাধীনতার এত বছর পরে একসময়ের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে বসে এমন একজনকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারা, যিনি সেই সাম্রাজ্যের পতনের কাণ্ডারি - নিশ্চিতভাবেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।" অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ব্রিটিশ মিউজিয়মের অ্যাডাল্ট প্রোগ্রামিং বিভাগের প্রধান ফ্রেডি ম্যাথ্যুজও। এবং সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ উভয়েই এই অভিনব মঞ্চে নিজেদের শিল্প প্রদর্শন করতে পেরে ব্রিটিশ মিউজিয়মের কাছে কৃতজ্ঞ।

publive-image অনুষ্ঠানের পোস্টার

অতএব আগামীকাল স্থানীয় সময় দুপুর তিনটেয় উপস্থিত শ্রোতা-দর্শক শুনবেন কবীর, রবীন্দ্রনাথ, ত্যাগরাজের গান, সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় কিছু গান, যেমন 'রঘুপতি রাঘব' অথবা 'বৈষ্ণব জনতো'-র মতো চিরকালীন সৃষ্টি। উপস্থিত থাকতে পারেন ব্রিটেনে ভারতের হাই কমিশনার রুচি ঘনশ্যাম, এবং বিভিন্ন ইন্দো-ব্রিটিশ সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু সম্ভবত তার চেয়েও বেশি যা উৎসাহিত করছে সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিতকে, তা হলো এট্রিয়ামে দুনিয়ার হরেক দেশ থেকে মিউজিয়ম দেখতে আসা দর্শনার্থীদের উপস্থিতি, যাঁরা স্বাভাবিকভাবেই এই অনুষ্ঠানের অংশ হয়ে যাবেন।

এছাড়াও, যেমন সৌম্যজিৎ বললেন, "এই প্রথম ব্রিটিশ মিউজিয়মে বাংলা গান শোনা যাবে। 'মিলে সুর মেরা তুমহারা' শোনা যাবে। 'জনগণমন' শোনা যাবে।" উল্লেখ্য, উপস্থাপিত গানগুলির মধ্যে থাকবে মহাত্মা গান্ধীর শান্তিনিকেতন সফর উপলক্ষ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের রচিত এবং পরিবেশিত 'আনন্দধ্বনি জাগাও', যা খুব বেশি শোনা যায় না। এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীতকেও পূর্ণাঙ্গরূপে পেশ করবেন সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ, অর্থাৎ গানটির পাঁচটি স্তবকই পরিবেশিত হবে।

ইতিমধ্যেই আয়োজন চলছে অনুষ্ঠানস্থল তেরঙ্গা দিয়ে সাজিয়ে তোলার। সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সৌম্যজিৎ বললেন, "কাল অনুষ্ঠানের শেষে সকলকে একসঙ্গে জনগণমন গাইতে অনুরোধ করব। যাতে এই বিশাল হলের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায় আমাদের স্বাধীনতার, আমাদের বন্ধুত্বের সুর।"

Advertisment