Advertisment

বুলন্দশহর মনে করাচ্ছে গার্ডেনরিচকে

"দায়িত্বে যে ক্ষমতাসীন দল, প্রধানত দায়িত্বটা তাঁদের। ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য তাঁরা যে কোনও রকম আইন বহির্ভূত, অনৈতিক কাজের আশ্রয় নিতে পারেন। ক্রমশ এই প্রবণতাটা বাড়ছে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নিহত পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধকুমার সিং

বুলন্দশহরের পুলিশ হত্যাকাণ্ড শহর কলকাতাকে নিয়ে ফেলছে ১৯৮৪ সালে। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু ও শিখ দাঙ্গার জন্য এ বছরটি চিহ্নিত হয়ে থাকলেও, সে ঘটনার আগে - ওই বছরেই আর এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। পুলিশ অফিসার বিনোদ মেহতা হত্যা।

Advertisment

আইপিএস অফিসার বিনোদ মেহতা সে সময়ে ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (বন্দর)। গার্ডেনরিচ থানা এলাকার ফতেপুরে তাঁকে ঘিরে ধরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৫। অত্যাশ্চর্য ভাবে সেদিন তিনি যখন দুষ্কৃতীদের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন, এক দেহরক্ষী কনস্টেবল ছাড়া গোটা পুলিশবাহিনীই তাঁর থেকে আলাদা হয়ে যায়, যেমনটা ঘটেছে বুলন্দশহরের সুধীরের ক্ষেত্রে। সেদিন খুন হয়ে যান বিনোদের সঙ্গী সেই কনস্টেবলও।

আরও পড়ুন: বুলন্দশহর হিংসা: নিহত ইনস্পেক্টরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন যোগী আদিত্যনাথ

১৮ মার্চ, ১৯৮৪-তে বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ বোমা, ইটপাটকেল এবং আরও প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে বিনোদ, তাঁর দেহরক্ষী মোক্তার আলি, ও পুলিশের দলের ওপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। মুখোমুখি সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সামনে পড়ে বিনোদ সহ গোটা পুলিশবাহিনী পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। সংখ্যায় ভারী দুষ্কৃতীরা চারদিক থেকে মসজিদ ঘিরে ফেলে। বোমা ছোড়া হতে থাকে। এক কনস্টেবল আহত হন। এর পর বিনোদ পালানোর চেষ্টা করেন গার্ডেনরিচ রোড ধরে। সেখানে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেও তাঁকে ধাওয়া করে দুষ্কৃতীরা। দেহরক্ষী মোক্তার আলি বিনোদকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করেছিলেন। দুষ্কৃতীরা তাঁর ওপর চড়াও হয়ে তাঁর চোখ উপড়ে নেয়, তাঁর রিভলভার ছিনিয়ে নেয়, তাঁর হাত কেটে ফেলে। এরপর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় মোক্তারের গায়ে। সৌভাগ্যক্রমে, ততক্ষণে মারা গিয়েছেন মোক্তার।

এরই মধ্যে আগের বাড়ি থেকে পালিয়ে অন্য আরেকটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিনোদ। কিন্তু সেখানেও তাড়া করে পৌঁছে যায় খুনীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর পোশাক, এমনকি জুতো খুলে নিয়ে তাঁর দেহ খালের জলে ফেলে দেওয়া হয়। পরে আটাবাগ এলাকার কাঁচা নর্দমা থেকে বিনোদ মেহতার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

তবে বুলন্দশহর এবং গার্ডেনরিচকে একই স্তরে ফেলা যায় না বলে দাবি করলেন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, এখন রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন যে পরিমাণে ঘটেছে, তা অভূতপূর্ব, যদিও বিনোদ মেহতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন শাসকদলের দায় অস্বীকার করেননি প্রাক্তন এই আইপিএস অফিসার। "দায়িত্বে যে ক্ষমতাসীন দল, প্রধানত দায়িত্বটা তাঁদের। ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য তাঁরা যে কোনও রকম আইন বহির্ভূত, অনৈতিক কাজের আশ্রয় নিতে পারেন। ক্রমশ এই প্রবণতাটা বাড়ছে।" পুলিশ রিফর্মস কমিশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সন্ধিবাবু বলেন, "কোনও রাজনৈতিক দলই তা লাগু করতে চায় না। অথচ আদালত বলেই দিয়েছে, আইনের শাসন পাওয়া মানুষের অধিকারের মধ্যেই পড়ে।"

সেই আইনের শাসন লাগু করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন গার্ডেনরিচে বিনোদ মেহতা, প্রাণ দিলেন বুলন্দশহরে সুবোধ কুমার সিং।

আরও একটা মিল আছে। তাঁদের দুজনেরই হত্যা-পূর্ববর্তী সাম্প্রতিক অতীত। সুবোধ কুমার সিং আখলাক গণপিটুনির ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। আর বিনোদ মেহতা হত্যার দিন দুয়েক আগে একটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনা সামলাতে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিনের পুলিশের গুলিতে দুজনের প্রাণ গিয়েছিল।

police Bulandshahr
Advertisment