Advertisment

করোনা আতঙ্কের জেরে ভারতের নানা জায়গায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা

হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু স্বাস্থ্য এবং পুর আধিকারিককে চিৎকার-চেঁচামেচি করে তাড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি দল। 

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
attack on doctors coronavirus

দিল্লিতে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে নিজামুদ্দিন মরকজ ভবনকে। ছবি: প্রবীণ খান্না, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে যাঁরা সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন, সেই ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি।

Advertisment

বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের তাতপট্টি বাখাল এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, ধৃতরা আরও অনেকের সঙ্গে মিলে COVID 19-এ মৃত এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসা আধিকারিকদের দিকে পাথর ছুড়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেয়। হামলার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু স্বাস্থ্য এবং পুর আধিকারিককে চিৎকার-চেঁচামেচি করে তাড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি দল।

তাতপট্টি বাখালের বাসিন্দাদের আচরণের সমালোচনা করে মুসলমান ধর্মযাজক গোষ্ঠী জনসাধারণের উদ্দেশে আবেদন করেছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী কর্মীদের সঙ্গে যেন সহযোগিতা করা হয়। ইন্দোর শহরের কাজী মহম্মদ ইশরাত আলি বলেছেন, "যে ডাক্তাররা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা থাকা উচিত। তাঁদের সঙ্গে কারোর দুর্ব্যবহার করা উচিত নয়।"

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের এক মুসলমান ধর্মযাজক অবশ্য বলছেন, করোনা আক্রান্তদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন তাঁরা 'অপরাধী'। এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

এই ধরনেরই আরেক ঘটনায় বুধবার হায়দরাবাদের গান্ধী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুই COVID-19 রোগী হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তারের ওপর হামলা চালায়। ওই ওয়ার্ডেই সেদিন মৃত্যু হয় তাদের এক আত্মীয়ের। ওই দুই রোগীর নামে মামলা দায়ের করে হায়দরাবাদ পুলিশ, এবং তাদের অন্য এক COVID-19 চিকিৎসা কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ওই দুই ব্যক্তির আত্মীয় ছিলেন এক ৪৯ বছরের COVID-19 আক্রান্ত, যাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল একাধিক মারণ রোগ। গান্ধী হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় তাঁর। ভর্তির পর থেকেই তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত তথ্য দেওয়া হয়েছে তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে।

হামলার নিন্দা করে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, "গান্ধী হাসপাতালের চিকিৎসকরা এমনিতেই নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস রোগীদের পরিচর্যা করছেন। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণ কোনও মূল্যেই বরদাস্ত করব না। এমন এক সঙ্কটের সময়, যখন গোটা রাজ্য এক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই ধরনের হামলা একেবারেই ভালো কথা নয়। রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে দিনরাত চেষ্টা করছেন ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের সমর্থন করার সময় এটা।"

পড়শি রাজ্য কর্ণাটকে বৃহস্পতিবার এক ASHA (Accredited Social Health Activist) বা 'স্বীকৃত সামাজিক স্বাস্থ্যকর্মী' দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েন তিনি। কৃষ্ণাবেণী নামের ওই কর্মী বলেছেন, শহরের ব্যাতারায়ানপুরা এলাকায় হামলা হয় তাঁর ওপর। এক ভিডিও বার্তায় কৃষ্ণাবেণী বলেন, "স্থানীয় মসজিদ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা আসার পরই দেখা দেয় সমস্যা। ওই ঘোষণা যেই করে থাকুক, তাকে গ্রেফতার করা উচিত। উত্তরপ্রদেশের মীরাট শহরেও কিছুদিন আগে একই ধরনের হামলার সম্মুখীন হন ASHA কর্মীরা, বলে অভিযোগ।

দিল্লিতে তবলিঘি জামাতের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন যেসব ব্যক্তি, যাঁদের আপাতত কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে দক্ষিণপূর্ব দিল্লিতে রেলের একটি ভবনে, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা নাকি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে "দুর্ব্যবহার" করেছেন, এমনকি "গায়ে থুথুও" দিয়েছেন তাঁদের। নর্দার্ন রেলওয়ের মুখপাত্র দীপক কুমার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, "কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে তাঁরা কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাঁদের যে খাবার দেওয়া হয় তা নিয়েও আপত্তি করেন। ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের গায়ে থুথু পর্যন্ত দেন তাঁরা, এবং নিষেধ করা সত্ত্বেও কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করতেই থাকেন।"

Advertisment