Advertisment

করোনা চিনিয়ে দিচ্ছে ভারতের অনেক গোপন মহামারী

প্রতি বছর টিবি (টিউবারকিউলোসিস) বা যক্ষ্মা রোগেই মৃত্যু হয় গড়ে ৪ লক্ষ ভারতীয়ের। দৈনিক গড়ের হিসেবে সংখ্যাটা দাঁড়ায় আন্দাজ ১,২০০

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
coronavirus infection deaths

ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

নভেল করোনাভাইরাসের মতো মহামারী কখনও দেখে নি এই বিশ্ব। বা বলা ভালো, ইতিহাসে আর কোনও মহামারী এভাবে থামিয়ে দেয় নি পৃথিবীর সদা ঘূর্ণিয়মান চক্র, যেভাবে গত কয়েক মাসে থামিয়ে দিয়েছে করোনা মহামারী। তবে বাস্তব কথা হলো, পৃথিবীতে এমন অনেক রোগ বর্তমান, যেগুলি করোনার চেয়ে আরও অনেক গুণ বেশি প্রাণঘাতী। ভারতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর আক্রমণে প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যু হলেও, ভারত কোনও ব্যতিক্রম নয়।

Advertisment

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারকে পরিপ্রেক্ষিতে বসাতে গেলে, বছরে টিবি (টিউবারকিউলোসিস) বা যক্ষ্মা রোগেই মৃত্যু হয় গড়ে ৪ লক্ষ ভারতীয়ের। দৈনিক গড়ের হিসেবে সংখ্যাটা দাঁড়ায় আন্দাজ ১,২০০-তে, যার ধারেকাছেও এখনও আসে নি দেশে COVID-19 এ মৃতের সংখ্যা।

শেষতম সংশোধিত ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে যক্ষ্মায় প্রাণ হারান ৪.৪ লক্ষ ভারতীয়, যা সারা বিশ্বে মৃত ১৫ লক্ষ রোগীর প্রায় ২৯ শতাংশ। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি টিবি-আক্রান্ত দেশগুলির তালিকায় প্রথম আটের মধ্যে স্থান ভারতের।

এর পাশাপাশি রয়েছে "প্রতি বছর অন্তত ১০ লক্ষ হারিয়ে যাওয়া কেস, যেগুলির খবর পাওয়া যায় না, এবং অধিকাংশই থেকে যায় হয় অধরা, নাহয় স্পষ্টভাবে চিহ্নিত না হয়েই", বলছে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর টিউবারকিউলোসিস এলিমিনেশন ২০১৭-২৫।

এই মুহূর্তে COVID-19 আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৩.৩ শতাংশ, যা যক্ষ্মায় ২০.২৩ শতাংশ মৃত্যুহারের তুলনায় অনেকটাই কম। সোজা কথায়, যে কোনও সময় যক্ষ্মায় আক্রান্ত ১০০ জন রোগী পিছু ২০ জন মারা যাবেন।

publive-image টিবি-র রাজ্যওয়ারি হার, শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ

একইভাবে ঋতুকালীন H1N1 (influenza A ভাইরাসের একটি প্রজাতি) ইনফ্লুয়েঞ্জায় দেশে মারা যান গড়ে অন্তত ১,০০০ মানুষ। এক্ষেত্রেও মৃত্যুর হার ৪.২৫ শতাংশ। COVID-19 মহামারীর মতোই H1N1 ফ্লু-এর উপসর্গ হলো জ্বর, গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, এবং কাশি। গত বছর দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ২৮,৭৯৮, মৃতের সংখ্যা ১,২১৮।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization বা WHO) মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা জনিত কঠিন রোগের কবলে পড়েছেন ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ মানুষ, যাঁদের মধ্যে ২৯০,০০০ থেকে ৬৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায়। ইতিমধ্যেই মার্চ মাস পর্যন্ত ভারতে ছোঁয়াচে H1N1 ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১,৪৬৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের, জানাচ্ছে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-এর তথ্য।

আরও পড়ুন: হারানো যক্ষ্মা রোগীদের খুঁজে বের করতে পারে করোনা অতিমারী

২০০৯ সালের H1N1 মহামারীর পর থেকে ভারতে প্রতি বছর ক্রমপর্যায়ে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা - ২০১৫ সালে আক্রান্ত হন ৪২,৫৯২, মৃত্যু হয় ২,৯৯১ জনের; একইভাবে ২০১৭ সালে ৩৮,৮১১ জন আক্রান্ত হন, মৃত্যু হয় ২,২৭০ জনের।

করোনাভাইরাস সঙ্কটের ফলে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার আসল রূপটা আমরা দেখতে পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে প্রতি বছর হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, পেটের রোগ এবং কিডনির অসুখে মারা যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, করোনাভাইরাসে মৃতদের মধ্যে ৮৬ শতাংশেরই কোনও পার্শ্বরোগ ছিল, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির অসুখ ইত্যাদি।

আরও কিছুটা পরিপ্রেক্ষিতের প্রয়োজনে বলতে হয়, দেশে আনুমানিক ৫ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষ হৃদরোগের শিকার, যাঁদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রাণ হারান ৪,০০০ জন, বলছে 'গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ'-এর তথ্য। এছাড়াও রয়েছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, অ্যাকিউট এনকেফালাইটিস সিন্ড্রোম (acute encephalitis syndrome বা AES) এবং জাপানি এনকেফালাইটিস-এর মতো ভেক্টর-বাহিত রোগ, যেগুলি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নিত্য চ্যালেঞ্জ জানায়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুতে ভোগেন, এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই দুই রোগে দেশে মৃতের সরকারি সংখ্যা যথাক্রমে ১,০৫৫ এবং ১,০৯৪।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে বিশ্বে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন আনুমানিক ২১.৯ কোটি মানুষ, এবং মৃত্যু হয় ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষের। এই পরিসংখ্যানে ভারতের অবদান চার শতাংশ, যদিও সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা।

উপসর্গ-বিহীন ফ্যালসিপ্যারাম ম্যালেরিয়ার নির্ণয় এবং চিকিৎসা এখনও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ৭৪ শতাংশ কেসই আসে ওড়িশা, ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ড থেকে। AES এবং জাপানি এনকেফালাইটিস-এর মৃত্যুহার ৯.০৭ শতাংশ, যা করোনার বর্তমান মৃত্যুহারের প্রায় তিন গুণ, যদি ২০১৫ থেকে ২০১৯-এর সময়সীমা ধরা হয়। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬,৫৭৮, এবং মৃতের সংখ্যা ৯৬৩, বলছে সরকারি হিসেব।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

coronavirus
Advertisment