/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/03/biman-basu-main.jpg)
বিমান বসুর সাংবাদিক সম্মেলন
নকশালপন্থীদের মধ্যে একদা একটা বিতর্ক খুব চালু ছিল, যার ভিত্তিতে দলীয় ভাগাভাগিও চলত। তর্কটা হলো, নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত। নির্বাচন কি রণনীতি না কি রণকৌশল, তা নিয়ে সুস্পষ্ট বিভাজন ছিল গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে। দু'পক্ষই লেনিনের ডুমায় অংশগ্রহণ এবং ডুমা বয়কটের উদাহরণ তুলে ধরত। সে সব নিশ্চয়ই এখনও চালু আছে।
এ প্রসঙ্গের অবতারণা বিমান বসুর সাংবাদিক সম্মেলন সূত্রে, যে সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ৩৮টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেন। যে কোনও সাংবাদিক সম্মেলনের দুটি ভাগ থাকে। একটি ভাগে নিজের প্রাথমিক বক্তব্য বলেন সম্মেলন যাঁরা ডেকেছেন তাঁরা। দ্বিতীয় ভাগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় অংশ অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন, জোটের রাজনীতি এবং রাজনীতির জট…
মঙ্গলবারের যে সাংবাদিক সম্মেলনে বিমান বসু নিজের বক্তব্য পেশ করলেন, সেই প্রথম ভাগে, অর্থাৎ প্রাথমিক বক্তব্যের অংশে দেখা গেল, বামফ্রন্টের তরফে রাগ-ক্ষোভ যা রয়েছে, তা সবই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রায় কোনও বক্তব্যই উচ্চারিত হল না। দ্বিতীয় ভাগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসুর তরফ থেকে যা বক্তব্য উঠে এল, তাতে দেখা গেল, তৃণমূল কংগ্রেসই তাঁদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। বিমানবাবুর কথামতো, এবং স্থানীয় সিপিএমের ভাবানুযায়ী, বিজেপি এবং তৃণমূল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
একান্ত-সিপিএম ছাড়া অবশ্য কেউই এখনও পর্যন্ত এ তত্ত্ব ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। সারা দেশের কাছেই তৃণমূল কংগ্রেস, অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি-বিরোধী অন্যতম মুখ বলে পরিচিত। ব্রিগেডে যেদিন মমতার ডাকে প্রায় সব বিরোধী দল এসে সভা করেছিল, সে সভা নিয়েও নাক উঁচু ভাব স্পষ্ট রেখেছিল সিপিএম। দলের তরফ থেকে এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছিল, যাঁরা ওই সভায় যোগ দিতে আসছেন, তাঁরা কেউ কেউ যে পরে বিজেপি-র সুবিধা করে দেবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়!
সেদিনের ব্রিগেডে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউই এখনও এমন রেকর্ড তৈরি করেন নি। তবে সিপিএম, যারা মতাদর্শগতভাবে অগ্রণী, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্য এগিয়ে থাকা স্লোগান দেওয়া, জনগণের থেকে এগিয়ে থাকা কর্মসূচি নেওয়াই হালাল। হালাল অর্থাৎ পবিত্র, এবং কখনও কখনও অবোধ্যও বটে। ইউপিএ ১-এর সময়ে প্রকাশ কারাতরা ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সরকার পতনে কাণ্ডারী হওয়ার মাধ্যমে সাংগঠনিক পবিত্রতা বজায় রাখার যে দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করেছিলেন, ভারতের ইতিহাসে তা নিঃসন্দেহে দেদীপ্যমান হয়ে থাকবে। সেই পথেই, সিপিএমের পক্ষে তৃণমূলকে বিজেপি-সঙ্গী হিসেবে দেগে দেওয়ার কাজ তাঁদের পক্ষে সম্ভবত নৈতিকভাবেও ঠিক। তবে রণকৌশলগত ভাবে তা কতটা যথাযথ, এ নিয়ে যে সাধারণ মানুষের একাংশ কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্ন, তাতেও সন্দেহ নেই।
শেষাবধি কংগ্রেসকে মিত্রশক্তি হিসেবে বেছে নেওয়া যে সিপিএমের পক্ষে একেবারেই কৌশলগত প্রশ্ন, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ের অবকাশ নেই। তবে সে কৌশলও শেষ পর্যন্ত কার্যকর হল না। মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে বিমান বসু বললেন, জোট না হওয়ার একমাত্র দায় কংগ্রেসের উপরেই বর্তাচ্ছে। জোট নিয়ে আলোচনা চলাকালীন কংগ্রেস তাদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করে দিয়ে জোটপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলে অনুযোগ করেছেন তিনি।
জনস্মৃতির উপর এখন প্রায় কেউই ভরসা রাখেন না বটে, তবে এত দ্রুত ভোলার নয় যে, শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৯-এ সিপিএমের তরফ থেকে ২৫ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তার দু'দিন পর, ১৮ মার্চ, ২০১৯। ফলে তালিকা প্রকাশের ব্যাপারেও সিপিএম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
আরও পড়ুন: আমাদের (রাজ)নীতি
৩৮ আসনের তালিকা প্রকাশের সাংবাদিক সম্মেলনে আরও একটা বিষয় চোখে পড়ল যা স্মৃতি উসকে দেওয়ার মত। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এদিন বিমান বসু অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেস যেখানে ১ শতাংশ ভোট পেয়েছে, সেসব আসনও দাবি করছে। বেশ দাপটের সঙ্গে বিমান বসু জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা নির্বাচনী বিশ্লেষণ খতিয়ে দেখেছেন। নম্বর এবং তৎ সংক্রান্ত উঁচু গলা আরেকজনের কথা মনে করিয়ে দিল। সেই বর্তমানে স্বেচ্ছা গৃহবন্দি মানুষটি, যাঁর আমলে মহীরূহ পতন ঘটেছিল, তিনি একদা আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ২৩৫-৩৫-এর হিসেব দিয়েছিলেন।