Advertisment

জোটের রাজনীতি এবং রাজনীতির জট...

গত বিধানসভা ভোটে বামেদের ভোট কংগ্রেস পেয়ে যথেষ্ট উল্লেখ্য আসন বিধানসভায় দখল করেছিল, কিন্তু কংগ্রেসের নিচুতলার ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ গিয়েছিল শাসকদলের দিকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
cpm-congress ally

West Bengal Lok Sabha Election 2019: জোট না হলে বাম এবং কংগ্রেস, দুই পক্ষেরই অংকের হিসেবে আসন জেতার সম্ভাবনা কমার কথা

কেন্দ্রে বিজেপি কে পরের দফায় ক্ষমতায় আসা থেকে আটকাতে প্রস্তাবিত বাম-কংগ্রেস জোট আপাতত বিশ-বাঁও জলে। জাতীয় কংগ্রেসের জেতা চারটি আসন ছেড়ে এরাজ্যে বামেরা ২৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ,কংগ্রেসের জন্য ছাড়া হয়েছিল ১৭টি আসন। রায়গঞ্জ আসনে খুব সামান্য ব্যবধানে গতবার জিতেছিলেন মহম্মদ সেলিম। আর মুর্শিদাবাদে বাম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান। সোমবার রাতে ১১ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে কংগ্রেস। রায়গঞ্জে দাঁড়াচ্ছেন দীপা দাশমুন্সি এবং মুর্শিদাবাদে আবু হেনা।

Advertisment

বাম এবং কংগ্রেস, দুই পক্ষই এই জোট ভাঙার দায় একে অপরের উপর চাপাতে ব্যস্ত। কংগ্রেসের বক্তব্য বামেরা তাদের উপর ‘দাদাগিরি’ করার চেষ্টায় ছিল আর উল্টোদিকে বামেরা জানাচ্ছে জোট রাখার ব্যাপারে কংগ্রেসের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল। সুতরাং, রাজনীতির চরম অনিশ্চয়তার শর্ত মেনেই আগামী সময়ে যে নতুন কোনো সমীকরণ উঠে আসবে না তা এখনই বলা যাচ্ছেনা। সবমিলিয়ে জোটের জট নিয়ে বাংলার রাজনীতি এই মুহূর্তে সরগরম।

আরও পড়ুন, আমাদের (রাজ)নীতি

বাম-কংগ্রেস জোট না হলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি, দুই দলেরই খুশি হবার কথা। বাম-কংগ্রেস একত্রিত ভোট হলে বেশ কয়েকটি আসনে তৃণমূলের কড়া প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভবনা ছিল। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ আর মালদায় অন্য দল ভাঙ্গালেও নিজের প্রতীকে জেতা আসন তৃণমূলের উল্লেখযোগ্য নয়। শুভেন্দু অধিকারী পাখির চোখ করেছেন এই দুই জেলাকে। বাম-কংগ্রেস জোট না হলে বিরোধী ভোট বিভাজনের রাজনীতিতে এই দুই জেলাতেই লাভবান হবে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোট হলেও কংগ্রেসের তৃণমূল ভোটব্যাঙ্ক কতটা বামেদের দিকে আসবে তা নিয়ে সংশয়ে আছেন অনেকে। গত বিধানসভা ভোটে বামেদের ভোট কংগ্রেস পেয়ে যথেষ্ট উল্লেখ্য আসন বিধানসভায় দখল করেছিল, কিন্তু কংগ্রেসের নিচুতলার ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ গিয়েছিল শাসকদলের দিকে। বাম নেতৃত্ব সেই অভিজ্ঞতাতেই কংগ্রেসি ভোট তাদের দিকে কতটা আসবে তা নিয়ে সন্দিহান। আবার বিজেপির ক্রমবর্ধমান ভোটের বড় অংশই বাম এবং কংগ্রেস থেকে আসছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ থাকে। জোট না হলে বাম এবং কংগ্রেস, দুই পক্ষেরই অংকের হিসেবে আসন জেতার সম্ভবনা কমার কথা। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধী মুখ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বিজেপির এবং তৃণমূল-বিরোধী ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ বিজেপির দিকে যেতে পারে।

যদিও এই জোট রাজনীতির জটের সুবিধা বিজেপি কতটা নিতে পারবে তা নিয়েও সংশয় থাকছে। রাজ্য বিজেপির মূল সমস্যা রাজ্যস্তরে গ্রহণযোগ্য মুখের অভাব যা সম্প্রতি বিজেপির রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষও একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন। তার উপরে তৃণমূল থেকে বেরিয়ে আসা লোকজনেদের যেভাবে দলের সামনের সারিতে নিয়ে আসা হচ্ছে তাতে বিজেপির নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। মুকুল রায় এবং তার হাত ধরে বেরিয়ে আসা তৃণমূল নেতারা, কেউই দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত নন এবং সৌমিত্র খান ও অর্জুন সিং বাদে এদের কারুরই উল্লেখ্য জনভিত্তি নেই। আরএসএসের সংগঠনের জোরে বিজেপি উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করার আশায় আছে। এর মধ্যেই সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা খগেন মূর্মূ’র বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে সাধারণ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নাম করে। এই রাজ্যে বিজেপির মূল ভোট অস্ত্র চোরা ধর্মীয় মেরুকরণ এবং তারা কতটা সফল তার অ্যাসিড টেস্ট এই লোকসভা নির্বাচন। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব প্রায়ই জানাচ্ছেন যে তাদের প্রার্থী তালিকায় একাধিক চমক থাকবে। সংবাদমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে শাসক দলের নেতা থেকে প্রখ্যাত টলিউড অভিনেত্রী নাম। যদিও এতে কোনো অফিসিয়াল শীলমোহর বিজেপি এখনও দেয়নি। এবং এই প্রার্থী তালিকা প্রকাশে দেরি হওয়াটা নিঃসন্দেহে ভোটের ময়দানে বিজেপিকে তার প্রতিপক্ষদের তুলনায় পিছিয়ে দিচ্ছে।

রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধুত্ব বা শত্রুতা বলে কিছু হয়না। আজ যারা একে অপরের মুখ অব্দি দেখতে চান না, তারাই আগামিকাল চেয়ার দখলের জন্য গলাগলি ভাব করতে দ্বিধাবোধ করেন না। কাজেই বঙ্গরাজনীতির রঙ্গমঞ্চে এরপরে দুইয়ের সঙ্গে দুই যোগ করলে যে চারই হবে এমনটা বলা শক্ত। আমরা, ভোটযুদ্ধের নিরীহ দর্শকেরা, বরং অপেক্ষায় থাকি পরের পর্বের চমকের জন্য।

lok sabha 2019
Advertisment