Advertisment

দিল্লি লাইভলি: দূষণ ও স্নানাগার

যত শীত বাড়বে ততই শুকনো পাতা পোড়ানো, খড় পোড়ানো, নির্মাণ সম্পর্কিত ধুলোময়লার পরিমাণ বাড়বে আর জানুয়ারি আসতে আসতে বোঝাও যাবে না এটা ধোঁয়াশা না কুয়াশা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পনেরোদিনের উৎসব পর্বের শেষে বাঙালি যখন সবে একটু থিতিয়ে বসে তখন উত্তর বা দক্ষিণ ভারতে আলোর উৎসব শুরু হয়। রোশনাইয়ের সঙ্গে বাজি পটকা। যদিও আজকাল পরিবেশ সংক্রান্ত চাপ শব্দবাজির উপর পড়তে শুরু করেছে। তবু মানুষের স্বভাব একদিনে তো যায় না। তারই মধ্যে এসে পড়েছে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ফরমান।

Advertisment

এই কমিটিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৭তে। কিন্তু হালের হালতে গুরুত্ব পেয়েছে যথেষ্ট। আধা বিচারবিভাগীয় এই কমিটির ফরমান কিন্তু নির্দেশিকার মতো হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি সরকার মাথা খুঁড়ে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারে নি, জোড়-বিজোড় নিয়ম পনেরো দিন ধরে চালিয়ে হয়রান করা ছাড়া।

আরও পড়ুন, দিল্লি লাইভলি: পক্ষ অন্তর (৫)

এবার মঞ্চে এসেছে ইপিসিএ। তাদের প্রধান ভুরেলাল দিল্লি সরকারের প্রধান সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন যে সব অ-সিএনজি প্রাইভেট গাড়ি দূষণ মাত্রা বেড়ে গেলে বন্ধ রাখতে। দে গরুর গা ধুইয়ে! পায়ে ধুলো লাগছে তো দে পুরো পৃথিবীটাকেই মুড়ে। তা সে যা হোক, দুদিনের অকাল বর্ষণে কিছুটা দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় ভুরেলাল মশায়ের এই বুদ্ধিমত্তার ছাপ বাস্তবে রূপান্তরিত করার আগেই লকারে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।

তবে বলা যায় না, কবে কী হয়ে যায়। যত শীত বাড়বে ততই শুকনো পাতা পোড়ানো, খড় পোড়ানো, নির্মাণ সম্পর্কিত ধুলোময়লার পরিমাণ বাড়বে আর জানুয়ারি আসতে আসতে বোঝাও যাবে না এটা ধোঁয়াশা না কুয়াশা।

publive-image বাউলিতে বাওয়াল হয় না

সে যা হোক। কাল শনিবার, হঠাৎ করে হাজির হয়েছিলাম অগ্রসেনের বাউলিতে। বাউলিতে বাওয়াল হয় না। রাজস্থানি বা ঠেট উত্তরভারতীয় হিন্দিতে বাউলি হল হামাম বা স্নানাগার। যদিও লোককথা অনুযায়ী এই বিশেষ স্নানাগারটি আগরওয়াল বা অগ্রবাল সম্প্রদায়ের প্রথম রাজা অগ্রসেন বা উগ্রসেন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে এর কোন প্রমাণ নেই। বরং বাউলির সুলতানি স্থাপত্য অন্য কথা বলে। আর ইতিহাস বলে আগরওয়াল সম্প্রদায় এটিকে চতুর্দশ শতাব্দীতে পুনর্নির্মাণ করে।

সত্যি বলতে কি কাল গিয়ে আশ্চর্য একটা ব্যাপার মনে হল। এই যে হেইলি লেনের উপর অগ্রসেনের বাউলি, এর ঠিক পিছনেই বঙ্গ ভবন। এক সময় বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের অফিস ছিল, তারপর বিজলিগ্রিলের রেস্তোরাঁ। কতবার যে গিয়েছি, অথচ বাউলিতে গিয়ে ওঠা হয় নি।

দিল্লিতে থাকা হয়ে গেলো প্রায় কুড়ি কুড়ি বছর। কিন্তু তারপরেও ছোট ছোট মাইল ফলক, বিশেষ হেরিটেজ স্থান দেখা হয়ে ওঠেনি। কেন? উত্তর নেই।

যাই হোক, দের আয়ে সো দুরস্ত আয়ে। বাউলিতে ফিরে যাই। ১০৮ সিঁড়ির এই বাউলি, দিল্লির পপুলার সিনে ডেসটিনেশনের অন্যতম। পিকে, সুলতান থেকে আরম্ভ করে বেশ কিছু সিনেমার স্যুটিং এখানে হয়েছে। রাতেও। আর সেখানেই মজাটা। জনশ্রুতি আছে, ১০৮ ধাপ নিচে বাউলির অন্ধকার কালো জলের এক অমোঘ আকর্ষণ আছে। আত্মঘাতীদের টেনে নিয়ে যায় সে। আর যত অতৃপ্ত আত্মা, ততই ভূতের ভয়। বাউলিতে পূর্ণিমার রাতে নাকি...। না থাক, গুজব গুজবই থাকুক আমরা খালি আমাদের প্রাচীন দেশের বিশাল ইতিহাসের মধ্যে একটু অবগাহন করে নিই।

ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এই বিভিন্নতাকে স্বীকার করেই যুগ যুগ ধরে সে ধরে রেখেছে নিজের সভ্যতা সংস্কৃতি। হঠাৎ করে একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে যদি নতুন ইতিহাস লেখার দরকার পড়ে, তাহলে তার মতো দুরবস্থা আর কিছুতে নেই। রাজনৈতিক মন্তব্য লেখার আগে আজ পালাই বাবা। আপনারা বরং কিছু ছবি দেখুন। কাল দুপুরের বাউলি। এমনকি হাত বার করে বাউলির অন্ধকার জলের উপরের ছাদের একটা ছবিও আছে। আবার পক্ষকালে দেখা হবে কেমন?

Pollution
Advertisment