/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/dr-biman-chakraborty.jpg)
নব্বইয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি। বালিগঞ্জ থেকে নিত্যদিন সকালে নিজেই গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে। টানা তিন থেকে চার ঘন্টা অপারেশন থিয়েটারে থাকেন। এই করোনা আবহেও সশরীরে হাজির থাকেন রোগীদের পাশে।
তিনি ডাঃ বিমান চক্রবর্তী। আজকের নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকদের কাছে দৃষ্টান্ত। ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের সেনাপতি তিনি। করোনার দাপটে অনেক ডাক্তার যখন নমো নমো করে ফোনেই চিকিৎসা সারছেন, তখন রোজ হাসপাতালে উপস্থিত থাকছেন বৃদ্ধ মানুষটি।
আজ প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন। প্রতিবছর এই দিনটিতে ভারতে পালিত হয় জাতীয় চিকিৎসক দিবস। সেই বিধানচন্দ্র রায়ের সান্নিধ্যও পেয়েছেন ডাঃ চক্রবর্তী। বিধানবাবুর পরামর্শ ছিল তাঁর কাছে বেদবাক্য। তাঁরই কথায় কলকাতার "ব্রাইট, ঝাঁ চকচকে প্রসপেক্ট" ছেড়ে গ্রামীণ মহিলাদের চিকিৎসা করতে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন মালদায়। কারণ সে সময় জেলায় কোনও ডাক্তার পাওয়া যেত না। সময়টা ১৯৬০। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যাঁরা প্রথম বাংলার জেলাগুলিতে পদার্পণ করেন, ডাঃ চক্রবর্তী তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আরও পড়ুন- Doctors’ Day 2020: কেন পয়লা জুলাই পালিত হয় ডক্টরস ডে?
এতটা বয়স হলো, অবসর নিতে ইচ্ছা করে না? ডাঃ চক্রবর্তী অট্টহাসি হেসে জানান, "ওষুধের গন্ধ, অপারেশনের যন্ত্রপাতি না ধরলে দিনটা সম্পূর্ণ হয় না। তার চেয়েও বড় কথা, আমি একজন ডাক্তার, কী করে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি?"
তাঁর ডাক্তারি জীবনে এহেন ভাইরাসে নিশ্চয়ই এই প্রথম গোটা বিশ্বকে কুপোকাত হতে দেখলেন? "সে আর বলতে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসা শিখছি এখন আমি। প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে থামতে পারিনি। এই ভয়ানক সময়ে মানুষের রোগ নিরাময় করার লক্ষ্যই আমাকে বাড়ি থেকে বের করেছে।"
স্ত্রী চন্দন চক্রবর্তী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "রোজ ভোরে উঠে ওঁর জন্য টিফিন করে দিতে হয়। বয়স হয়েছে, বাইরের খাবার খান না। সেই টিফিন নিয়ে সারাদিনের মতো বেরিয়ে পড়েন। বিবাহিত জীবনে যে ভাবে ওঁকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়োজিত করতে দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়, অবসর নিলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।"
মানুষের চিকিৎসা করে, তাঁদের রোগ নিরাময় করেই বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পান ডাক্তার বিমান চক্রবর্তী। ডাক্তারির পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি ভালো লাগার বিষয় - নিজের গাড়ি নিজে চালানো। যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন নিজের উপরেই নির্ভরশীল থাকতে চান।
করোনা পরিস্থিতিতে ষাটোত্তীর্ণদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, এই অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরোনো নিরাপদ নয়, প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করতে ভয় করে না? "না, আমার তিন পুরুষ ডাক্তার, তাদেরকে দেখেছি, কোনও অবস্থাতেই নিজেদের কর্তব্য থেকে মুখ ফেরাতে দেখিনি। সেই পথই অবলম্বন করেছি ডাক্তারি জীবনে। যেটা কাজ, সেটা করতেই হবে। আমরা যদি পিছিয়ে যাই, তাহলে হবে না, আমাদের দেখে নবীনরা এগিয়ে আসবে, তাদেরকে পথ দেখানো আমাদের দায়িত্ব।"
১৯৪৬ সালে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে, পরের দুবছর প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে, ১৯৫৩ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে থেকে ডাক্তারি পাশ করেন ডাঃ চক্রবর্তী। এরপর বিলেত চলে যান। সেখানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন। মালদার গ্রামে শুরু করেন চিকিৎসা।
তিনি বারবার জানাচ্ছেন, তাঁর পেশার প্রতি ভালোবাসা আজও অক্ষুণ্ণ। "সেই ভালোবাসার জন্যই আজও যে কোনো অবস্থায় চিকিৎসা করা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার চেষ্টা করেছি।"