Advertisment

ট্রাম্পের মতো হুঙ্কার না দিলেও, চুপচাপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা এড়িয়ে যাচ্ছে ভারত

সরকারি উপেক্ষার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন দেখা যায় ৩ এপ্রিল, যখন বাড়ি থেকে বেরোলেই মুখোশ পরার পরামর্শ দেয় সরকার, যা WHO-এর নির্দেশের বিপরীত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
india who coronavirus

মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন একদল নার্স। ছবি: প্রশান্ত নাদকর, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সর্বসমক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (WHO) অপমান করে তাদের অর্থসাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বভাবসিদ্ধ হতে পারে, যদিও নয়া দিল্লিতে সম্ভবত এর প্রতিধ্বনি হবে না।

Advertisment

তবে একথা অনস্বীকার্য যে COVID-এর মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে WHO-এর নির্দিষ্ট সময়ে জারি "পরামর্শ" ভদ্রভাবে উপেক্ষা করে চলছে ভারত সরকার। বরং তাদের ভরসা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এবং কিছু রাজ্য সরকারের অভিজ্ঞতার ওপর - কেরালা থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে মহারাষ্ট্র।

অথচ টীকাকরণ, টিবি, এবং অন্যান্য অবহেলিত ক্রান্তীয় রোগ বা 'ট্রপিক্যাল ডিজিজ'-এর ক্ষেত্রে যেমন, তেমনই নভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে WHO, এবং সংস্থার কর্মীরা বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে সাহায্য করছেন প্রশিক্ষণ ও ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে।

সরকারি উপেক্ষার সাম্প্রতিকতম নিদর্শন দেখা যায় ৩ এপ্রিল, যখন বাড়ি থেকে বেরোলেই মুখোশ পরার পরামর্শ দেয় সরকার, যা WHO-এর নির্দেশের বিপরীত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র যাঁদের শরীরে রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, বা স্বাস্থ্যকর্মী, অথবা COVID আক্রান্তদের দেখাশোনা করছেন, এমন ব্যক্তিদেরই মুখোশ পরা প্রয়োজন।

আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রেই WHO-এর দেখিয়ে দেওয়া পথ থেকে সরে গিয়েছে সরকার

বিচার্য বিষয়:

# গত ৩০ জানুয়ারি WHO-এর ডিরেক্টর-জেনারেল টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন যে চিনে ভ্রমণ করার ওপর কোনোরকম নিষেধাজ্ঞার পক্ষপাতী নয় তাঁর সংস্থা - বস্তুত, এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে WHO।অথচ সেই দিনই WHO-এর আন্তর্জাতিক হেলথ রেগুলেশনস এমারজেন্সি কমিটি বিশ্ব জুড়ে সতর্কবার্তা জারি করে নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি, রোগনির্ণয়, আইসোলেশন, এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং সম্পর্কে। ইতিমধ্যেই ২৫ জানুয়ারি নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া চিনে সফর না করা সম্পর্কে উপদেশাবলি জারি করে দেয় ভারত।

# WHO-এর বিবৃতির তিনদিন পর এই উপদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের চিনে সফর না করার উপদেশ দেয় ভারত।

# ১৬ মার্চ গেব্রেইয়েসুস বলেন যে WHO-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো "টেস্ট টেস্ট টেস্ট"। অথচ ২২ মার্চ ICMR-এর অধিকর্তা ডাঃ বলরাম ভার্গব বলেন, "যথেচ্ছ টেস্টিং হবে না। আইসোলেশন, আইসোলেশন, আইসোলেশন।"

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই লকডাউনে চলে যায় ভারত, প্রথমে দেশের ৭৫টি জেলা, এবং পরবর্তীকালে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে সারা দেশ। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ছিল ICMR-এর একটি রিপোর্ট, যাতে বলা হয় যে ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের চেয়েও কার্যকরী পদ্ধতি হলো কোয়ারান্টাইন।

publive-image বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থবরাদ্দ কমানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ভারত এবার ঠিক করেছে পরীক্ষার মাত্রা বাড়াতে হবে, যদিও প্রক্রিয়ায় খুব একটা বদল হবে না - রোগের লক্ষণ আছে, সঙ্গে সফর বা রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস, উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন স্বাস্থ্যকর্মী, গুরুতর স্বাসজনিত অসুখ (জ্বর, কাশি ইত্যাদি) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী, এবং উপসর্গ নেই অথচ করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন এমন কেউ (সংস্পর্শে আসার ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে)।

ICMR কর্তৃক জারি করা "নিয়ন্ত্রণ জোন এবং বড় সংখ্যক পরিযায়ী সমাবেশ/উদ্বাস্তু কেন্দ্রে" র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট ব্যবহার করার নির্দেশিকার ফলে আরও ব্যাপক হারে সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা করানো হবে।

# লকডাউন শুরু হওয়ার পরের দিন WHO-এর শীর্ষ আধিকারিক মাইক রায়ান বলেন, "যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে, যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত না করে, (লকডাউন থেকে) দেশের পক্ষে বেরোনো মুশকিল হবে। এবং বেরোনোর পর একটা পুনরুত্থান ঘটবে, সেটাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।"

#  WHO-এর চিকিৎসা ও রোগীর সেবাযত্ন সংক্রান্ত নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে "বর্তমানে COVID-19 এর মোকাবিলার জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি সুপারিশ করার মতো প্রমাণ নেই"। কিন্তু ভারত তবু প্রথমে দুটি পরীক্ষাসাপেক্ষ অ্যান্টি-ভাইরাল - লোপিনাভির (lopinavir) এবং রিটোনাভির (ritonavir) - নিজেদের চিকিৎসা নির্দেশাবলীর অন্তর্ভুক্ত করে, এবং পরে এই নির্দেশাবলী সংশোধন করে এই দুটির পরিবর্তে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (hydroxychloroquine) এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন (azithromycin) নামের অ্যান্টিবায়োটিক-এর একটি মিশ্রণকে অন্তর্ভুক্ত করে।

তবে সাম্প্রতিক কালে WHO-পরিচালিত একটি বিশ্বব্যাপী ওষুধের ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছে ভারত। যদিও মাত্র ২০ জনকে নিয়ে এই দুটি ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি ফরাসি ট্রায়ালকে গ্রহণযোগ্য বলে মানা হচ্ছে না।

গত ২৬ মার্চ জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের উদ্দেশে এক ভার্চুয়াল বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন, যে WHO-এর মতো "বিভিন্ন সরকারের মধ্যে মেলবন্ধনকারী সংগঠনের সংস্কার এবং ক্ষমতায়নের প্রয়োজন"।

WHO-এর আধিকারিকরা সরকারের সঙ্গে মতের অমিল নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান নি।

ভারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হ্যাঙ্ক বেকেদাম বলেন, "COVID-19 এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন এক নির্ণায়ক মুহূর্তে রয়েছে ভারত। এই মুহূর্তটিকে অবিলম্বে আঁকড়ে ধরা উচিত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে COVID-19 এর মোকাবিলার প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে WHO, যার মধ্যে রয়েছে নজরদারি এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং; ল্যাবরেটরি এবং গবেষণা প্রক্রিয়া; ঝুঁকি সচেতনতা; হাসপাতালের প্রস্তুতি; প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদির মতো বিষয়। এই অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দৃঢ়ভাবে সরকারের পাশে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment