Advertisment

ব্রিটিশ শাসিত ভারত ১৯৪৭ সালে 'স্বাধীনতা' পায়নি! কবে স্বাধীন দেশের মর্যাদা পেয়েছিল?

মধ্যরাতে জওহরলাল নেহেরুর সেই ঐতিহাসিক 'ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি' বক্তৃতা দিয়ে ভারত শুরু করল নতুন যাত্রা। কিন্তু সত্যিই ১৫ অগাস্ট ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিল ভারত?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করছেন জওহরলাল নেহেরু। এক্সপ্রেস আর্কাইভ

১৪ অগাস্ট ১৯৪৭! লর্ড মাউন্টব্যাটেন জানিয়েছিলেন মাধ্যরাতেই নতুন দেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার উদয় হোক। রাত ১১টায় বন্দে মাতরম গান গেয়ে শুরু হল স্বাধীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। মধ্যরাতে জওহরলাল নেহেরুর সেই ঐতিহাসিক 'ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি' বক্তৃতা দিয়ে ভারত শুরু করল নতুন যাত্রা। কিন্তু সত্যিই ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীন হয়েছিল ভারত? ইতিহাস কিন্তু সে কথা বলে না।

Advertisment

তথ্য বলছে ১৯৫০ সাল অবধি ভারতে ব্রিটিশ আধিপত্য বজায় ছিল। একই বছরে ১৪ অগাস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা পেলেও ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের অধীনস্থ ছিল পড়শি দেশও। সহজ করে বলতে গেলে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা পেলেও, পূর্ণ স্বাধীনতা বলতে যা বোঝায়, তা পায়নি। অর্থাৎ 'স্বাধীন রাষ্ট্র'-এর মর্যাদা পেলেও টিকি বাঁধা ছিল ব্রিটিশ রাজের কাছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের পরও রাজা ষষ্ঠ জর্জ ভারতের সম্রাট হিসাবে রাজত্ব অব্যাহত রেখেছিলেন এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন দেশের প্রথম গভর্নর-জেনারেল। নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ করেছিলেন ঠিকই, তবে তিনি ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেলের আদেশে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে জানা যায়।

publive-image নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ করেছিলেন ঠিকই, তবে তিনি ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেলের আদেশে সে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এমনটাই জানা যায়।

মনে প্রশ্ন নিশ্চয়ই জাগছে যে ভারত কোন দিন তবে পূর্ণ স্বাধীনতা পেল? তথ্য বলছে, ১৯৫০ সালের ৩০ জানুয়ারি। ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর ঐতিহাসিক এই দিনটিতে দেশ রাজতন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতা দেওয়ার পরও তিন বছরের ব্রিটিশ আধিপত্য কিন্তু ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষত সংবিধান রচনা করার সময়।

তবে ১৯৪৭ সালের এই স্বাধীনতা পাওয়ার রাস্তা আক্ষরিক অর্থেই অত সহজ ছিল না। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের সংবিধান রচনায় সাহায্য করবেন তাঁরা। যদিও এই পরিকল্পনা অনেক আগেই নেওয়া হয়। ১৯২৭ সালে ৭ জন সদস্য নিয়ে পরাধীন ভারতের সংবিধান ব্যবস্থার পর্যালোচনার জন্য স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে 'সাইমন কমিশন' গঠন করা হয়েছিল। যদিও কোনও ভারতীয়কে এই কমিশনের সদস্য করা হয়নি। ফলে পরবর্তীতে এই কমিশনকে বয়কট করে দেশের সব রাজনৈতিক দল। বিকল্প সংবিধান রচনার জন্য মোতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি কমিটি।

publive-image ১৯৪৭ সাল ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি জানালেন ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন ভারতকে 'পূর্ণ স্বাধীন দেশ' ঘোষণা করবে তারা।

তবে ব্রিটিশ প্রদত্ত এই স্বাধীনতা নিয়ে খুশি হননি নেহেরু। শর্তসাপেক্ষে পাওয়া এই স্বাধীনতায় সম্মতি জানিয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু।তাই গলার কাঁটার মত বিঁধে ছিল এই স্বাধীনতা। অন্যদিকে, ১৯৪৬ সাল থেকে স্বাধীনতার জন্য উত্তাল হল ভারত। ব্রিটিশ সেনা দিয়ে ঠেকানো গেল না প্রতিবাদ। নৌ-বিদ্রোহ পৌঁছল চরমে। আরেকদিকে, উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে প্রবেশ করছে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনী। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ শাসনের ভিত টলমল। ১৯৪৭ সাল ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি জানালেন ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন ভারতকে 'পূর্ণ স্বাধীন দেশ' ঘোষণা করবেন তাঁরা।

publive-image ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের পরও রাজা ষষ্ঠ জর্জ ভারতের সম্রাট হিসাবে রাজত্ব অব্যাহত রেখেছিলেন এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন দেশের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

তবে জানা যায়, ভি কে কৃষ্ণ মেননের পরামর্শেই মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস নেতাদের 'টোপ' দিয়েছিলেন যে, স্বাধীন ভারত যদি কমনওয়েলথে যোগ দেয় তাহলে স্বাধীনতার সময় আরও এগিয়ে আনা হবে। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় কংগ্রেস। ইতিহাসবিদ এবং রাজনৈতিক মহলের মত ব্রিটিশদের টোপ না মেনে যদি ১৯৪৮ অবধি অপেক্ষা করা যেত তাহলে হয়তো ভারতের ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হত!

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Independence Day
Advertisment