শেষ হল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলে দুটি সিরিজ। প্রায় নিউজিল্যান্ড সফরের ধারাবাহিকতাই রক্ষা করলেন মিতালিরা। ওয়ান ডে সিরিজ জিতলেও যথারীতি ভরাডুবি ঘটল টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটের আসরে।
ওয়ান ডে সিরিজের তিনটি ম্যাচেরই আয়োজক ছিল মুম্বই। প্রথম ম্যাচে ৪৯.৪ ওভারে ২০২ রান করে ভারত। কার্যত ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই ছিল ভারতীয় বোলারদের হাতে। যথারীতি একতাদের আগুনে বোলিং এর সামনে খুব বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি সারাহ বাহিনী। একতা বিস্ত একাই তুলে নেন ৪টি উইকেট। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত জুগিয়েছেন শিখা শর্মা ও ঝুলনেরা। ১৩৬ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা।
আরও পড়ুন, মিতালি রাজ: লং লিভ দ্য কুইন, কিন্তু…
পরবর্তী ম্যাচেও নিজেদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন স্মৃতিরা। ঝুলন ও শিখা তুলে নেন ৪টি করে উইকেট। ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করলেও ৪৩ ওভারে মাত্র ১৬১ রানে শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস। খুব সহজেই এই রান তাড়া করে ফেলেন মিতালির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল।
তাল কেটে যায় শেষ ম্যাচে। ক্যাথরিন ব্রান্টের তুখোড় বোলিং (১০-২-২৮-৫) এর জেরে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। শূন্য রানে হারায় প্রথম উইকেট। তারপর মান্ধানা ও পুনমের কাঁধে ভর করে ২০৫ রান করে ভারত। শুরুর দিকে ইংল্যান্ড টলমল করলেও হাল ধরে নেন অধিনায়ক হিদার নাইট ও ড্যানিয়েল ওয়াট। ইংল্যান্ড ৭ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় দুই উইকেটে।
ঠিক যেভাবে ওয়ান ডে ক্রিকেটে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল, একইভাবে টি-২০ –তেও তারা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। তবে এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা পরাজয়ের।
নিউজিল্যান্ডের পরে আবারও টি- ২০ তে ভরাডুবি ঘটল ভারতের। গুয়াহাটির মাটিতে ৩-০ এ সিরিজ খোয়াতে হল ভারতকে। প্রথম টি-২০ ম্যাচে সবকটা বিভাগেই খারাপ খেলেছিলেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। ইংল্যান্ড ১৬০ রানের টার্গেট দিলে, ভারতীয় টপ অর্ডার প্রায় তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়ে। ভারতের টপ অর্ডারের প্রথম চারজনের এই ম্যাচে সংগৃহীত রান ছিল, ৮, ২, ২ এবং ৭।
পরবর্তী দুটি ম্যাচে বোলাররা মোটামুটি ভাল করলেও ব্যাটিং বিভাগের জন্যের মূলত ম্যাচ খোয়াতে হয় ভারতে। এক্ষেত্রে তৃতীয় ম্যাচটির কথা আলাদা করে উল্লেখ করা প্রয়োজন। মাত্র ১ রানে জেতা ম্যাচ মাঠেই রেখে চলে আসে ভারতীয় দল। আরও একবার বোঝা যায় অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঠিক কতটা প্রয়োজন।
ইংল্যান্ডের ১১৯ রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই হারলিনের উইকেট হারায় ভারত। আবারও একবার হাল ধরেন স্মৃতি মান্ধানা। মান্ধানার ৫৮ এবং তারপরে মিতালি রাজের অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংসের দৌলতে ম্যাচ প্রায় বের করে এনেছিল ভারত। শেষ ওভারে পরপর ভারতের দুটি উইকেট উলে বাজিমাত করেন কেট ক্রস। একদিক থেকে ফুলমালি ও অনুজা পাতিলের উইকেট পড়তে দেখেন মিতালি রাজ। শুধুমাত্র স্ট্রাইক পেলেন না বলে দলকে জিতিয়ে আসা হল না তাঁর।
ওয়ান ডে এবং টি-২০ সিরিজে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু নতুন প্লেয়ারকে সুযোগ দেয় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। হারলিন দেওল, ভারতী ফুলমালিরা তেমন কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য না করলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভারতীয় দল এদের আরও অনেক বেশি সুযোগ দিয়ে দেখতেই পারে। টোয়েন্টি ২০ সিরিজে চোটের কারণে বাইরে ছিলেন হরমনপ্রীত কৌর। তাঁর জায়গায় প্রথমবার অধিনায়কত্ব সামলাতে দেখা যায় স্মৃতি মান্ধানাকে। হরমনের অভাব বেশ ভালোই বোঝা গেছে। বিশেষ করে যখনই ব্যাটিং লাইন আপ ধরাশায়ী হয়েছে, হরমনের গুরুত্ব অনুভূত হয়েছে।
স্মৃতি আপাতত স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। ওয়ান ডে সিরিজে তিন ম্যাচে ১৫৩ রান করে প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ হয়েছেন স্মৃতি। কিন্তু টি-২০ ম্যাচগুলতে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ৭২ রান। ফর্মে থাকা স্মৃতি অনেক সময়ের বাকিদের অফ ফর্ম ঢেকে দিয়ে থাকেন। কিন্তু হয়ত খানিকটা অধিনায়কত্বের চাপেই টি-২০ সিরিজে চেনা ছন্দে দেখা যায়নি। আর এতে আদতে উপকারই হয়েছে ভারতের। ভারতীয় টপ ও মিডল অর্ডারের বাকিদের করুণ অবস্থা স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। জেমাইমা রড্রিগেজ দুটি সিরিজেই রান পাননি যদিও মোটামুটি ফর্মেই ছিলেন পুনম রাউত। মিতালি রাজ ওয়ান ডে ক্রিকেটে আজও অতুলনীয়, কিন্তু টি-২০ তে তাঁর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে এবার ভাবার সময় এসেছে।
বোলিং বিভাগে ভারতের পারফর্ম্যান্স তুলনামূলক ভাল এবং ধারাবাহিক ছিল। টি-২০তে ঝুলন গোস্বামীর অভাব মেটাতে এখনও সক্ষম হয়নি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। শিখা পান্ডে অনেকদিন পরে জাতীয় দলে ফিরে সুযোগের ভালোই সদ্ব্যবহার করছেন তবে অরুন্ধতী রেড্ডি আলাদা করে টোয়েন্টি-২০ তে কোনও ছাপ ফেলতে পারেননি এখনও অবধি।
ইংল্যান্ডের হয়ে নজর কেড়েছেন ড্যানিয়েলা ওয়াট। প্রথম দুটো একদিনের ম্যাচে না খেললেও তৃতীয় ম্যাচে দলে এসেই খেলেন অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংস। এরপর টি-২০ খেলাগুলোতে ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করে ওয়াট করেন যথাক্রমে ৩৫, ৬৪ এবং ২৪ রান। দ্বিতীয় টি-২০তে ম্যাচের সেরার পুরস্কারের সঙ্গে সঙ্গে শেষ অবধি পেয়েছেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও। বোলিং বিভাগে নজর কেড়েছেন অভিজ্ঞ ক্যাথেরিন ব্রান্ট। তৃতীয় ওয়ান ডে ম্যাচের পাঁচ উইকেট তাঁর সেরা পারফর্মেন্স হলেও টি-২০ খেলাগুলিতেও নিয়মিত উইকেটের মধ্যে ছিলেন ব্রান্ট। বেশ কিছুদিন পরে দলে ফিরলেও নজর কাড়তে ব্যর্থ সারাহ টেলর। যদিও টি-২০ ম্যাচগুলিতে খেলেননি তিনি। উইকেটের পেছনে ছিলেন অ্যামি জোনস।
টানা ৪টি টি -২০ ম্যাচে হারের সম্মুখীন হল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। অবশ্য এই নিয়ে এখনও অবধি দেশের মাটিতে ছয়টি ওয়ান ডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ডের মহিলা ক্রিকেট দল। সব কটিতেই জয়ী হয়েছে ভারত। ভারতের বহু খেলোয়াড় এর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে ওয়ান ডে এবং টি-২০ পারফরম্যান্সের মধ্যে সামঞ্জস্য ধরে রাখা। টি-২০ ক্রিকেটের দাবি মেনে দ্রুত রান তুলতে এখনও পারদর্শী নয় ভারতের ইয়ং ব্রিগেড। এই প্রসঙ্গ উঠে এসে এসেছে স্মৃতি মান্ধানার কথাতেও। তাঁর মতে ঘরোয়া ক্রিকেটে মান আরও উন্নত এবং প্রতিযোগিতামূলক হওয়া প্রয়োজন। ঘরোয়া ক্রিকেটে একরকম খেলায় অভ্যস্ত ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানের সঙ্গে মানিয়ে দিতে পারেন না। এখানেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যদি মহিলাদের আইপিএল নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করে, তাহলে তা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে।