Advertisment

সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধারে পথ দেখালেন বাংলার মেয়ে, স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মহলে

তাঁর দ্বিতীয় গবেষণাপত্র নিয়ে রিভিউ চলছে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক। ছুটির দশমাসেই গবেষণার মূল কাজ তাঁর সারা হয়েছিল। দশমাস সময়ের মধ্যে অনেক কিছু ঘটেওছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Indus Script, Nature Journal

নির্দিষ্ট আদর্শবাদের চশমা না পরে থাকলে কাজ এগোতে সুবিধে হয় বলে দাবি বহতার

পেশা যাঁর আইটি চাকরি, তাঁর টেনিসে বা ফ্যাশনে, এমনকি কবিতা বা কার্টুনে আগ্রহ থাকা কোনও চিত্তাকর্ষক ঘটনা নয়। এর মধ্যে কারও যদি আগ্রহ হয় সিন্ধুলিপিতে, তাঁকে নিয়ে কিছুটা অতিরিক্ত কৌতূহল জন্মাতে পারে। কিন্তু সে আগ্রহকে একেবারে পেশাদারি স্তরে নিয়ে যাওয়া, এবং তা নিয়ে অনুসন্ধিৎসু অনুধাবন ও শেষাবধি স্বীকৃতি - এই প্রায় অনতিক্রম্য পথটুকু হেঁটে ফেলেছেন বাঙালি মেয়ে বহতা। কর্মসূত্রে তিনি বেঙ্গালুরু নিবাসী। পুরো নাম, বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়।

Advertisment

নেচার ব্র্যান্ডের পত্রিকা প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্স তাঁর সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার নিয়ে কাজ প্রকাশ করেছে এই জুলাই মাসেই। ওপেন অ্যাক্সেস এই জার্নালে তাঁর  "Interrogating Indus inscriptions to unravel their mechanisms of meaning conveyance" শীর্ষক লেখাটি (Palgrave Communications, volume 5, Article number: 73, 2019) যে কেউ পড়তে পারেন। বহতা জানালেন, তাঁর প্রথম কাজ ঠিক পাঠোদ্ধার নয়, পাঠোদ্ধারের প্রকৃতি নির্ধারণ। তাঁর কথায়, "সিন্ধুলিপির বহুরকমের পাঠপ্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগই যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ফলসিফায়েবল- তা নয়। অধিকাংশই একে অন্যের নিয়ম মানেন না, বা অন্যকে খণ্ডনও করেন না, শুধুই নিজের পথের কথা বলে চলেন। আমি এই প্রক্রিয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে গাণিতিক প্রমাণের মতই অকাট্য একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি পদ্ধতিতে করা প্রমাণ পেশ  করেছি, একই সঙ্গে চিহ্নগুলিকে শ্রেণিকরণের কাজটাও করেছি। এতে পরবর্তীকালে পাঠোদ্ধারের কাজে সুবিধা হবে।" বহতার দাবি, নেচার ব্র্যান্ডের পত্রিকায় প্রকাশিত বহতার এই ব্লাইন্ড রিভিউড পেপারটি কিছু গবেষকের কাছ থেকে সিন্ধুলিপির প্রকৃতি নির্ধারণের ব্যাপারে এ যাবৎকালের অন্যতম সেরা কাজ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ঠিক কীভাবে এই পথে এসে পড়লেন বহতা? বহতার স্বামী বৈজ্ঞানিক। তাঁর সূত্রেই একবার বহতাদের বাড়িতে এসে পড়েন অধুনা ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, প্রসিদ্ধ গণিতবিদ এবং পদার্থবিদ রণজয় অধিকারী। এছাড়া পদ্মশ্রী ইরাভথম মহাদেবন (প্রয়াত), গবেষক ব্রায়ান ওয়েলস প্রমুখের কাছেও ঋণ স্বীকার করেছেন তিনি। রণজয় সম্পর্কে বহতা বললেন, "তাঁর সিন্ধু সভ্যতার লিপি  নিয়ে কিছু কাজের কথা আমি আগেই শুনেছি, যা নানান বিখ্যাত আন্তর্জাতিক  জার্নালে বেরিয়েছিল। তাঁকে অনুরোধ ক'রে তাঁর প্রোজেক্টে আমি কিছু কাজের সুযোগ পাই। কিন্তু আমার এই কাজটি সম্পর্কে যে ভাবে এগোনোর ইচ্ছে ছিল, তা এই অধ্যাপকের বিশুদ্ধ গাণিতিক বা সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার চাইতে খুবই আলাদা।" প্রথমে তাঁদের প্রজেক্টে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পেলেও পরে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু থামতে চাননি বহতা।

"২০১৫ সালে আমার অফিসে প্রথমে এক মাসের ছুটি নিয়ে, সিন্ধুলিপি নিয়ে আমার যা যা সন্দেহ ছিল সেগুলি জাভা প্রোগ্রামিং এর প্যাটার্ন সার্চের মাধ্যমে খতিয়ে দেখি আমি অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক। ব্যস। আর কী? অফিসে অনুরোধ ক'রে আমি রিজাইন করি সঙ্গে সঙ্গে। দশ মাসের মধ্যে আমি দুটি পেপার লিখি। তাদের একটি সিন্ধুলিপির স্ট্রাকচারাল দিকগুলি নিয়ে, আর পরেরটি সেই লিপিতে লেখা বাক্য বা বাক্যাংশগুলির অর্থ কী বা কী ধরনের তা বুঝতে চেয়ে।"

২০১৬ সালে করা এই কাজের প্রথম গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হল তিন বছর পর, ২০১৯ সালে। তাঁর দ্বিতীয় গবেষণাপত্র নিয়ে রিভিউ চলছে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক। ছুটির দশমাসেই গবেষণার মূল কাজ তাঁর সারা হয়েছিল। দশমাস সময়ের মধ্যে অনেক কিছু ঘটেওছিল। একমাত্র পুত্রকে লেখা-পড়া করানো, সংসার সামলানোর সঙ্গে জমানো টাকা ভাঙিয়ে অজস্র বই কেনা আর পড়ার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন বহতা। এই গোটা সময়কাল জুড়ে তাঁর বাবা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় তাঁকে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিন্ধুলিপিকে প্রধানত শব্দচিত্রের মাধ্যমে লিখিত একটি লিপি বলে মনে করেন বহতা। তাঁর গবেষণাপত্রে এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। তবে একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, "এ কাজটা কিন্তু পাঠোদ্ধার নয়। পাঠোদ্ধারের কাজ পরে আসছে।"

Advertisment