Advertisment

'সাধারণ মানুষই আমার ছবির উৎস', অকপট কিংবদন্তী শিল্পী শাহাবুদ্দিন

"ধ্যেত, কী কও মিয়াঁ? স্যেন একটা নদী হলো? আমাদের মেঘনা নদীর ধারেকাছে পৃথিবীর কোনও নদী নেই। আহা! কী রূপ, কী সৌন্দর্য। যারা দেখেনি, জীবন বৃথা।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
shahabuddin paintings

কলকাতার প্রদর্শনীতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে শাহাবুদ্দিন। ছবি সৌজন্য: উইকিপিডিয়া

বলেছিলেন একজন, "শিল্পীরা মুডি হন, কিন্তু শাহাবুদ্দিন অন্য ধাঁচের।" যেমন? প্রশ্ন করি। উত্তর: "ঘর ঝাড়ু দেন, রান্না করেন, পিংপং খেলেন, ফুটবল পাগল, রাজনীতি নিয়ে তার্কিক, প্রচণ্ড আড্ডাবাজ, বৌ পাগল, দুই কন্যা চিত্র ও চর্যার আদুরে পিতা, টিভিতে ভালো ভালো ছবি দেখেন নিয়মিত, হলেও যান সিনেমা দেখতে, কাঁচামরিচের ঝাল খান বেশি। তখন একেবারে বাঙাল।"

Advertisment

জানতে চাই, ছবি আঁকেন কখন? কোথায় ছবি আঁকেন? বলেন, "আমরা যেমন সকাল দশটা-পাঁচটা অফিস করি, মাঝখানে লাঞ্চের জন্য বিরতি, শাহাবুদ্দিনের ছবি আঁকার অফিশিয়াল টাইমও তাই। ছুটির দিনে, শনি-রবিবারেও কাজ করেন। ছবি আঁকেন। শাহাবুদ্দিনের কথা: 'কবিসাহিত্যিক শিল্পীদের ছুটি নেই। কাজে ফাঁকি দিলে লেখা হয় না, শিল্প হয় না।' ঠিকই বলেন, নিরলস কাজ করেন। এই সময়ের মধ্যে কেউ ফোন করলে বা সাক্ষাৎপ্রার্থী এলে বিরক্ত হন।"  শুনে ভাবনা হয়, কোন সময় নাগাল পাওয়া সম্ভব তবে?

ভদ্রলোক এও জানান, "নিজের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে শাহাবুদ্দিনের স্টুডিও। দেখে মনে হবে স্টুডিও নয়, পরিপূর্ণ গ্যালারি। থরেবিথরে সাজানো ছবি, সবই তাঁর আঁকা। কোনোটি ছোট, মাঝারি, কোনোটি বড়। বিশাল। স্টুডিওর দেওয়াল ঘেঁষে ক্যানভাস, এক কোণে টেবিলে স্তূপীকৃত রং-কালি, ব্রাশ। জলের ছোট বালতি। এও বাহুল্য। স্টুডিওর ভিতরেই হরেক জাতীয় গাছগাছালি। দেশি ও বিদেশি। যাকে বলে 'ঘরোয়া প্লান্টস'। লেবুর গাছ, গন্ধরাজ, সন্ধ্যাচাঁপা, গোলাপ, মায় নিমগাছও। যদিও বঙ্গদেশীয় গাছপালা ইউরোপীয় আবহাওয়ায় বেশিদিন বাঁচে না। কিছু কিছু গাছ অবশ্য মালির (অর্থাৎ শাহাবুদ্দিনের) পরিচর্যায় টিকে যায়। টিকে আছে। গাছের সঙ্গে শাহাবুদ্দিন কথা বলেন গুনগুনিয়ে। গাছও নাকি সাড়া দেয়।"

shahabuddin paintings প্যারিসে নিজের স্টুডিওয় কাজে মগ্ন শাহাবুদ্দিন। ছবি: লেখক

শাহাবুদ্দিন সম্পর্কে এত কিছু শুনে এবং জেনে একজন বিশ্বখ্যাত শিল্পীর, ইতিমধ্যেই কিংবদন্তী, বিশ্বের '50 Master Painters of Contemporary Art' (১৯৯২ সালে ঘোষিত স্পেনের বার্সেলোনায়), ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র শাহাবুদ্দিন, বাংলাদেশের, নিশ্চয় তাঁর সান্নিধ্য আনন্দের। বিশ্বের বহু দেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী, চড়া দামে বিক্রি, পৃথিবীর নানা দেশের নামী মিউজিয়ামে (গ্যালারি) স্থায়ী আসন। বছর দুয়েক আগে কলকাতায় শাহাবুদ্দিনের ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বছর পাঁচেক আগে ঢাকায় ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শাবানা আজমির কথা: "আই অ্যাম ভেরি মাচ অনারড টু ওপেন শাহাবুদ্দিনস পেইন্টিংস।"

বিশ্বের সব বড় শহরে শাহাবুদ্দিনের প্রদর্শনী, কিন্তু "ঢাকা, বোম্বে, দিল্লি, কলকাতায় এক্সজিবিশন আমার আপন, আমার আনন্দ। দর্শক আমারই সগোত্রীয়। দেশীয়। ওঁরাই সবচেয়ে ভালো বোঝেন, জানেন আমার ছবির জীবনভাবনা, রেখা অঙ্কন, অভিব্যক্তি। আমি আমার দেশকেই নানারূপে চিত্রিত করি। চিত্রণে বৈশ্বিকতা। আছে দেশের মানুষ, মানুষের সংগ্রাম, পেশিবহুল শ্রমজীবী, যা বিশ্বের সব মানুষের প্রতিকৃতি, অবয়ব, বিপ্লব, দৈনন্দিন জীবনধারা। সাধারণ মানুষই আমার ছবির উৎস। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, বঙ্গবন্ধু (শেখ মুজিবুর রহমান), সব দেশের, নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি, প্রেরণা, আমারও। রবীন্দ্রনাথ ছাড়া ভারতের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির মুক্তি নেই। গান্ধীজির আন্দোলন ছাড়া ভারত নয়, ভারতের স্বাধীনতা নয়। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নয়, স্বাধীনতা নয়। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী, বঙ্গবন্ধু, সব দেশের,  কোনও একক দেশে আবদ্ধ নন। ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশি ছবি এঁকেছি। কারণও আছে। আমার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামি লিগের অন্যতম নেতা, আমরা পাঁচ ভাই মুক্তিযুদ্ধে (১৯৭১ সাল, স্বাধীনতার যুদ্ধ) প্রত্যক্ষ সৈনিক, যোদ্ধা। রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। আমি ছিলাম প্ল্যাটুন কমান্ডার।"

উল্লেখ্য, শাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন আগরতলার মেলাঘরে। খালেদ মোশাররফের সেক্টরে। স্বাধীনতার পরে খালেদ মেজর জেনারেল। খালেদের সেক্টর দুই নম্বর। শাফিউল্লাহর সেক্টর এক নম্বর। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে দুটি সেক্টর বিশেষভাবে চিহ্নিত। দুই নম্বর সেক্টর ঢাকা-কুমিল্লা। ঢাকার বিস্তীর্ণ এলাকা লালবাগ ও ধানমণ্ডির দায়িত্বে শাহাবুদ্দিন, প্ল্যাটুন কমান্ডার। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, যেদিন পাক সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে, শাহাবুদ্দিনই প্রথম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রেডিও স্টেশনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এবং এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন। এই দৃশ্য, কলকাতার অজয় রায়ের শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রে ঝলমলে। অজয় রায়ের তথ্যচিত্র চমৎকার। মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিনকে, শিল্পী শাহাবুদ্দিনকে, পারিবারিক শাহাবুদ্দিনকে, বন্ধুবৎসল শাহাবুদ্দিনকে, গ্রামীণ ও শহুরে শাহাবুদ্দিনকে নানাভাবে চিত্রায়িত করেছেন। এই তথ্যচিত্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত হবে, জানালেন অজয় রায়।

shahabuddin paintings শাহাবুদ্দিনের তুলিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছবি সৌজন্য: উইকিপিডিয়া

শাহাবুদ্দিন দেশবিদেশের বহুমান্য সব পুরস্কারেই ভূষিত। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসরকারি 'লিজিওন অফ অনার'-এ সম্মানিত। "পুরস্কার, সম্মান, ভূষণমাত্র, হয়তো বাড়তি পালক, হয়তো বায়োডাটায় বাড়তি দু'একটি লাইন, আদতে কিছু নয়। আমি চাই মানুষের ভালোবাসা, মানুষের আত্মিকতা," বলেন শাহাবুদ্দিন। ওঁর স্ত্রী আনা ইসলাম সুলেখিকা, গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ লেখেন, বিষয় নানাবিধ, জানান, "মানুষকে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করেন শাহাবুদ্দিন, মাঝে মাঝে মনে হয় ওঁর দেখার চোখ আর পাঁচজনের চেয়ে আলাদা। দেখেন শরীর, গতর, হাঁটার ভঙ্গী, চলার ভঙ্গী, দাঁড়ানোর ভঙ্গী, বসার ভঙ্গী, এমনকি কথা বলার ভঙ্গী, অঙ্গ সঞ্চালনের ভঙ্গিও।"

শাহাবুদ্দিনের ফিগারেটিভ ছবিতে মানবমানবীর গতি (ফোর্স) বিভিন্ন মাত্রায় চিত্রিত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে সহজ সরল, আদৌ তা নয়। বরং গভীরতর অবলোকনে একজন মানুষ বা মানুষীর জটিল, বিচিত্র আলেখ্য রঙেরেখায়-অঙ্কনে প্রস্ফুটিত, আপাদমস্তক।

ফটোগ্রাফার-চিত্রপরিচালক অজয় রায় নিশ্চয় শাহাবুদ্দিনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। তাঁর সাবধানবাণী: "শিল্পী শাহাবুদ্দিনকে বেশি ঘাঁটাবেন না, মেজাজ ঘোলা হবে, সাক্ষাৎকারে তিন-চারটে প্রশ্ন করলে সংক্ষিপ্ত, চোখা চোখা উত্তর দেবেন। বরং ঘরোয়া আড্ডায় সামিল হয়ে, যদি ঘরোয়া আড্ডার চান্স পান, শাহাবুদ্দিন যেন বুঝতে না পারেন, একথা সেকথায়, সাক্ষাৎকারের অছিলায়, জানতে চাইলেন, চার দশকের বেশি প্যারিসে বাস, স্যেন নদীর রূপচেহারা নিশ্চয় মোহনীয়, তাই না?"

অজয় রায়ের সাবধানবাণী মনে রাখি। শিখিয়ে দেওয়া কথাও। আড্ডায় বললুম, "আইফেল টাওয়ারের কোল ঘেঁষে স্যেন নদী চমৎকার।" শাহাবুদ্দিন তেতে উঠলেন, "ধ্যেত, কী কও মিয়াঁ? স্যেন একটা নদী হলো? আমাদের মেঘনা নদীর ধারেকাছে পৃথিবীর কোনও নদী নেই। আহা! কী রূপ, কী সৌন্দর্য। যারা দেখেনি, জীবন বৃথা। নদী, নদীর জল, দুই তীর যেন পটে আঁকা ছবি। বর্ষায় নদী যেন ভরন্ত যৌবনের যুবতী। উচ্ছৃঙ্খল। চারদিক উদ্ভাসিত করে দুরন্ত, চলমান। ছোটবড় নৌকো ভাসমান। সারিসারি নৌকো। বজরা, গহনার নৌকো। ছলাতছল বৈঠার শব্দ। মাঝির ভাটিয়ালি গান। নৌকোয় কতরকম পসরা। ছুটছে বিরামহীন। গুণটানাও দেখবে। এসব কি দেখবে স্যেন নদীতে? কী দেখবে? দেখবে ট্যুরিস্টদের নিয়ে ফেরির চলাচল। নদীর প্রাণ নেই। কর্পোরেট ব্যবসায় বাঁধা। জলের ঢেউয়ে কোনও সুর নেই। জল তো ফেরির ধোঁয়ায় কালো, ফেরির টেল জলে ভাসমান।"

শাহাবুদ্দিনের জন্ম ঢাকায় (১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০), পৈতৃকভূমি নরসিংদীর মেঘনা নদীর পাড়ে আলগি গ্রামে। মেঘনা নদী, আলগি গ্রাম তাঁর অস্থিমজ্জায়, ঢাকাও। ঢাকায় শিক্ষা, স্কুলে ও ঢাকা আর্ট কলেজে। ঢাকা থেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান। একুশ বছর তখনও হয়নি।

গল্পচ্ছলে কীভাবে সাক্ষাৎকার নিতে হয়, সম্ভবত নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও ভার্গাস ইয়োসার লেখায় পড়েছিলুম। কথার পিঠে কথা চড়িয়ে গল্প, প্রশ্ন। এও এক 'আর্ট'। আপনার স্টুডিওয় সবই তৈলচিত্র, জলরঙের কোনও ছবি দেখলুম না। "দেখবে কী করে? জলরঙে ছবি আঁকি না। আঁকতাম এক সময়, যখন (ঢাকার) আর্ট কলেজে পড়ি। পড়াকালীনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিই, চলে যাই ত্রিপুরার আগরতলায়, মেলাঘরে। ওখানে, বহু চেষ্টা করে দুই- তিনটি রঙ পাই, তাও আবার ভেজাল রঙ, জলটল মিশিয়ে প্রথম ছবি আঁকি বঙ্গবন্ধুর। ওই ছবিই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, আমাদের কমান্ডদের কাছে, পরম পাওয়া। বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখে উজ্জীবিত, উদ্দীপ্ত। প্রত্যেকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি আরও আঁকুন। জলরঙে আঁকি। কেবল বঙ্গবন্ধুরই ছবি নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েও। ফ্রান্সে স্কলারশিপ নিয়ে (১৯৭৪ সালে) আসি, প্যারিসে নয়, শিক্ষা শুরু প্যারিস থেকে দূরে, অন্য শহরে, রোয়ান (Rouen)-এ। ওখানেও এঁকেছি ছাত্রাবস্থায়। প্যারিসে এসে তেলরঙের প্রতি প্রেম দুর্দম।"

কারণ আছে কি? "আছে বৈকি। প্যারিসে এক প্রদর্শনীতে বিশ্বখ্যাত শিল্পী ফ্রান্সিস বেকন এসেছেন, কোনোরকমে তাঁর সান্নিধ্য, পরিচয়। কথায় কথায় তৈলচিত্রের মাহাত্ম্য, স্থায়িত্ব, রঙের উজ্জ্বলতা, অঙ্কন ও রেখার কারিকুরি নিয়ে বলেন। বেকনের কথা শুনে তেলরঙের পরীক্ষায় মাতি। ঠিকই বলেছেন তিনি, বিশ্বের সব বড় শিল্পীর ছবি তেলরঙে অঙ্কিত। নানা দেশে, নানা আবহাওয়ায় আজও অক্ষত। তৈলচিত্রের আরও একটি ব্যাপার সাংঘাতিক। ময়লা হলে ধোয়ামোছা যায়, জল দিয়েও। জলরঙের ছবিতে সমস্যা।"

shahabuddin paintings ফিগারেটিভ ছবির ফোর্সে প্রবল আস্থা শাহাবুদ্দিনের। এই ছবির শীর্ষক, 'দ্য ফ্রিডম ফাইটার'। ছবি সৌজন্য: উইকিপিডিয়া

আপনার স্টুডিওয় একটি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট (বিমূর্ত) ছবি দেখছি, যা আপনার সব ছবির সঙ্গে অমিল, আপনার টেম্পারামেন্টে খাপছাড়া, অথচ স্টুডিওয় রেখেছেন, কারণ কী? "দুই-চারটে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট এঁকেছিলাম ছাত্রত্ব শেষে, পরে জ্ঞান হয়, এই ছবির বোদ্ধা 'হাই লেভেলের আঁতেল', সাধারণ মানুষ, সাধারণ দর্শক নয়। এসব অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ছবি সাধারণ্যে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সাধারণ্য চায় সমকালীনতা, যা সর্বকালের।"

তাহলে আপনি বিমূর্তপন্থী তথা বিমূর্তবাদী নন। আপনার ধাতে নেই। যেমন নেই প্রকৃতিনিসর্গ অঙ্কনে। জলরঙের প্রতিও ভালোবাসা উবে গেছে। তেলরঙেই আস্থাশীল, স্থিতু। "কোনও কোনও বিমূর্ত ছবি আমার খুবই পছন্দ। ওঁদের মতো আঁকার চেষ্টা করি নি কখনও। করলে নকলের গুঞ্জরণ, শুনেছি অনেক শিল্পীর বিমূর্ত ছবির অঙ্কনে, বিশেষত মোটিফ ও বিষয় নির্বাচনে। নেচার খুব ভালবাসি, কিন্তু নেচার নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত ছবি আঁকা হয়েছে যে, নতুন কিছু আঁকার আছে কি? স্কুলকলেজে পড়াকালীন ছাত্রছাত্রী 'নেচার স্টাডি' করে। স্বীকার করি, জলরঙে প্রকৃতিনিসর্গের রূপচেহারা মাস্টারি অঙ্কনে খোলতাই। অপূর্ব।"

আপনার গুরু জয়নুল আবেদিন, ছাত্র ছিলেন তাঁর, গুরুর কোন বিষয়টি আপনার মর্মে, অস্থিমজ্জায়? "এক কথায়, স্যারের অঙ্কনরেখায় যে ফোর্স, আর কারোর ছবিতে পাই নি। তিনি ভেতরে সেঁধিয়ে গেছেন। সর্ব অর্থেই তিনি আমাকে প্রভাবিত করেছেন।"

যতদূর জানা আছে, ভুলও হতে পারে, ১৯৭৭-৭৮ সালের আগে ফিগারেটিভের প্রতি ঝোঁকেন নি খুব। এক ঝোঁকও কি জয়নুল আবেদিনের কাছ থেকে পাওয়া? "ঠিক। ফিগারেটিভে সাংঘাতিক ফোর্স তৈরি করা সম্ভব।" যেমন করেছেন আপনার ছবিতে। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সাধারণ শ্রমিক, উদ্বাস্তুর, এমনকি শান্ত, হিংস্র পশুরও। এই ফোর্স কি মুক্তিযুদ্ধে থাকাকালীন পাওয়া? একই কথা শোনালেন। "তা বলতে পারো। আমার ছবিতে সাধারণ মানুষই উৎস, সাধারণ মানুষই শিল্প।"

রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি, বঙ্গবন্ধুও কি সাধারণ মানুষ? "অসাধারণ, তবে সাধারণ। সব দেশের, সব কালের। মানবতার, মানবমুক্তির। রবীন্দ্রনাথ তো বলেইছেন, 'আমি তোমাদেরই লোক'।"

এবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ঢাকায় যাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আঁকা ছবির প্রদর্শনী করবেন, পুরোনো-নতুন (আঁকা) ছবি নিয়ে। ঢাকায় গিয়েও কয়েকটি আঁকবেন কি? "অবশ্যই, থাকব তিন মাস, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ শুরু হচ্ছে ১৭ মার্চ থেকে। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।"

Advertisment