scorecardresearch

বড় খবর

অনুপ্রেরণা নির্ভয়া, নারী সুরক্ষায় অভিনব যন্ত্র আবিষ্কার বাংলার পাঁচ যুবকের

এই যন্ত্রের সাহায্যে বিপদগ্রস্ত যে কোনও মহিলাকে দ্রুত উদ্ধার করতে পারবে পুলিশ। তাছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে খুব কম সময়ে সহজেই তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করতে পারবে।

Women care
'ও-কেয়ার' ডিভাইসের সঙ্গে তিন গবেষক। ছবি- শশী ঘোষ

আজ থেকে সাত বছরের কিছু বেশি আগে দিল্লিতে নির্ভয়ার মর্মান্তিক গণধর্ষণ ও খুন মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল পাঁচ যুবকের। কী করে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে মুক্ত পেতে পারেন মহিলারা, তখন থেকেই গবেষণা শুরু হয়ে যায় উত্তর ২৪ পরগনার বিশরপাড়ার গবেষণাগারে। আজ অবশেষে নারী-সুরক্ষার স্বার্থে অভিনব এক ডিভাইস আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন ওই পাঁচজন।

অপরাধ ঘটা মাত্রই কার্যকরী হয়ে যাবে তাঁদের তৈরি যন্ত্রটি। তারপর লাইভ ভিডিও, অডিও, চলতে থাকবে রেকর্ডিং। চলে যাবে মেসেজ, লিংক। যাঁদের কাছে যাবে, তাঁরা একটু সক্রিয় হলেই ঘটনাস্থলেই ধরা পড়ে যাবে অপরাধীরা। যন্ত্রটি আরও ‘আপডেট’ করার জন্য চলছে নিরন্তর গবেষণা।

women care device
এই সেই ‘ওমেন-কেয়ার’ যন্ত্র। ছবি-: শশী ঘোষ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফর্মেশন টেকনোলজি বিভাগে গবেষণার ছাত্র অয়ন দে, অন্যদিকে সুদূর লুক্সেমবার্গে গবেষণা করছেন সুকৃতী ভট্টাচার্য। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্সের তিন ছাত্র অরিজিৎ দাস, সৌরদীপ দাস ও রাহুল দত্ত। বিশরপাড়ায় অয়নের ঘরটা রীতিমত গবেষণাগার। রোবোটিক গবেষণার নানা কাজে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন বছরভর।

দিল্লিতে নির্ভয়াকাণ্ডের পর এই গবেষণাগারে নারী-নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন অয়নরা। মহিলাদের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ডিভাইস তৈরির কাজ শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের এখন আফসোস যে, সাত বছর নির্ভয়াকাণ্ডের বিচারে যে সময় ব্যয় হয়েছে, এই ডিভাইস থাকলে সেই সময় লাগত না। বরং ঘটনাস্থলেই অপরাধীরা ধরা পড়ে যেত। ঘটত না হায়দরাবাদের প্রিয়াঙ্কা, বা কাঠুয়ার ঘটনাও।

women care device
হাতঘড়ি বা ব্যান্ড আকারে ব্যবহার করা যাবে যন্ত্রটি। ছবি: শশী ঘোষ

যন্ত্রটির বর্ণনা দিলেন অয়ন। হাতে স্মার্ট ঘড়ি, ব্যান্ড, বা গলায় লকেট। যে কোনও মোড়কেই ব্যবহার করা যেতে পারে এই ‘ওমেন-কেয়ার’ বা ‘WO-CARE’, যা সচল হতে পারে নানাভাবে। প্রথমত, হাতে ঘড়ি বা ব্যান্ড আকারে থাকলে ঝাঁকুনির ফলে বিপদের সময় কাজ করতে শুরু করবে ওমেন-কেয়ার। বোতামে চাপ দিলে বা সাংকেতিক কোড বললেও চালু হয়ে যাবে যন্ত্রটি। বিপদের সময় স্বাভাবিক ভাবে ‘বাঁচাও’ শব্দটি মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। সাংকেতিক ‘কোড’ হিসাবে ‘বাঁচাও’ রাখা যেতে পারে। আবার হাত ধরে টানাটানির ফলে ঝাঁকুনির দরুন ‘অ্যাক্টিভ’ হয়ে যাবে যন্ত্রটি। অর্থাৎ খুব সহজেই কাজ শুরু করে যেবে ‘ওমেন-কেয়ার’।

এমনকি, বিপদের সময় হৃদস্পন্দনের পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত ধরিয়ে দিতে পারে আততায়ীকে। এখন চলছে এই পর্যায়ের গবেষণা। আক্রান্ত হওয়ার সময় স্বাভাবিক ভাবেই ‘হার্ট বিট’-এর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। সেই স্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে সক্রিয় হয়ে উঠবে যন্ত্রটি। এবং কাজ শুরু করে দেবে। মুহূর্তের মধ্যে শুধু আক্রান্ত হওয়ার খবর নয়, ঘটনাস্থলের ঠিকানা, এমনকী লাইভ ভিডিও পর্যন্ত পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়।

women care device
সমস্ত তথ্যপ্রমাণ মজুত থাকবে অপরাধী সনাক্তকরণে। ছবি: শশী ঘোষ

বিপদের কথা জানার পর যন্ত্রটি খুব সহজেই আক্রান্তের পরিবারের লোক, নিকটবর্তী থানা এবং আশেপাশের লোকদের সে খবর জানিয়ে দেবে। বার্তা চলে যাবে ফোন কল, মেসেজ, ইমেইল এবং ‘WO-CARE App’ এর মাধ্যমে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে পুলিশ আক্রান্ত মহিলার বর্তমান লোকেশন জানতে এবং ট্র্যাক করতে পারবে। দেখতে ও শুনতে পাবে ওই জায়গায় সেই মুহূর্তে কী কী হচ্ছে (লাইভ ফুটেজ)। এর সাহায্যে পুলিশ দ্রুত সেই মহিলাকে উদ্ধার করতে পারবে।

ঘটনাস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও রেকর্ডিং হয়ে যাবে। ইন্টারনেট সংযোগ আসামাত্রই মেসেজ ছাড়ার কাজ শুরু করবে যন্ত্রটি। বলা বাহুল্য, অপরাধীদের বিরুদ্ধে খুব কম সময়ে সহজেই তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে পুলিশ। কোনও ভাবেই নিষ্কৃতী পাবে না দুষ্কৃতীরা। অপরাধী ধরা পড়বে, শাস্তিও পাবে।

অয়ন জানালেন, ইতিমধ্যে তাঁরা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, “কন্যাশ্রীর মত এটাকে প্রকল্প হিসাবে বাংলার নারীদের হাতে তুলে দিতে। তাহলে মহিলারা আরও নিরাপদ থাকবেন। ইতিমধ্যে লুক্সেমবার্গের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অফারও এসেছিল পেটেন্ট কিনে নেওয়ার জন্য।” তবে সেই ব্যবসায়িক পথে হাঁটতে চাইছেন না অয়নরা।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Feature news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Women care device five youth inventor kolkata