Advertisment

সংবিধানের কলঙ্কিত রক্ষক

প্রশাসন যতই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ভিত্তিতে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনুক, বোঝা যাচ্ছে যে তথাগতবাবুর বাকস্বাধীনতায় সকলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

তথাগত রায়।

কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সাম্প্রতিক মারাত্মক সন্ত্রাসবাদী হামলার জেরে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় প্রকাশ্যে কাশ্মীর এবং কাশ্মিরীদের 'বয়কট' করার একটি প্রস্তাব সমর্থন করেন। মঙ্গলবার টুইটারে একটি পোস্ট করে তিনি জানান, এক "অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের" কাশ্মীর এবং "যা কিছু কাশ্মিরী" বর্জন করার প্রস্তাব সমর্থন করেন তিনি। ওই কর্নেলের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে তথাগত রায় জুড়ে দেন, "আমি সহমত।"

Advertisment

এদিকে যত দিন যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত মানুষজন তত বেশি নানারকম হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নিগ্রহের শিকার হয়ে চলেছেন।

রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বামপন্থী দলগুলি এবং স্বাভাবিকভাবেই জম্মু কাশ্মীরের দলগুলি বাদ দিয়ে বাকিরা এই প্রচারের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও, তথাগতবাবু স্পষ্টতই এই বয়কটের পক্ষে।

আরও পড়ুন: সৌদি আরব কেন ভারতের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ?

হয় তো ওঁর মনে থাকে না, কাজেই ওঁকে সম্ভবত মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে উনি একজন সাংবিধানিক পদাধিকারী। যে কোনো রাজ্যপাল রাজ্যে থাকেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি স্বরূপ, এবং তিনি সংবিধানের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। শুধু তাই নয়, সরকার যদি সাংবিধানিক লক্ষণরেখা অতিক্রম করে, তা নিয়ে উপদেশ এবং সাবধানবাণী জারি করাও তাঁর কাজের মধ্যে পড়ে।

রাজ্যপাল নিজে যদি সেই দায়ে অভিযুক্ত হন, তবে কী হয়? এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে, কিচ্ছু হয় না। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতিকে শিরোনাম-প্রত্যাশী বাক্যবাগিশ হিসেবে নস্যাৎ করে দেওয়াই যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের চরিত্রের কোনো অভাব নেই - তিনি বাম, দক্ষিণ, মধ্য, যে কোনো পন্থী হোন না কেন।

এর আগে কি তথাগতবাবু এরকম কিছু বলেন নি? বলেছেন বইকি। বছর দুয়েক আগে যখন ত্রিপুরার রাজ্যপাল ছিলেন, ভারতীয় জন সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের সমর্থনেও টুইট করেছিলেন তিনি। সারমর্ম, "হিন্দু-মুসলিম সমস্যা" সমাধানের একমাত্র রাস্তা হলো "গৃহযুদ্ধ"। পরে তিনি জানান, তিনি নিজে গৃহযুদ্ধের কথা বলেন নি, শ্যামাপ্রসাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করছিলেন মাত্র।

ন্যায়ের স্বার্থে এটাও বলা উচিত, তিনি কিন্তু তাঁর ধর্মান্ধতার প্রতি অটল থেকেছেন গোড়া থেকেই, এবং এও সম্ভব, যে তিনি বিশ্বাস করেন তাঁর এই অবস্থানের কারণেই উচ্চপদ লাভ করেছেন তিনি। ত্রিপুরার রাজ্যপাল মনোনীত হওয়ার বছরখানেক আগে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে "বহুধর্মীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েম রাখতে হিন্দুদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক"। সঙ্গে জারি করেছিলেন সতর্কতা বার্তা, এ ব্যাপারে "পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে"। রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেওয়ার অনতিকাল পরেই তিনি টুইট করেন, যে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন হিন্দুরা, এবং প্রশ্ন তোলেন, "আমাদের মতো বাঙালি হিন্দুদের জন্যে কী অপেক্ষা করে আছে?"

আরও পড়ুন: ইমরান খান যাই বলুন, জৈশের টিকি পাকিস্তানেই বাঁধা

তথাগতবাবুর টুইটার প্রোফাইলে তিনি নিজেকে বর্ণনা করেছেন "দক্ষিণপন্থী হিন্দু সামাজিক-রাজনৈতিক চিন্তাজীবি, লেখক, ভাববাদী" হিসেবে। অবশ্যই ব্যক্তিগত মত পোষণের অধিকার তাঁর আছে। প্রশাসন যতই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ভিত্তিতে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনুক, বোঝা যাচ্ছে যে তথাগতবাবুর বাকস্বাধীনতায় সকলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী।

কিন্তু এটা বোধহয় ভাবার সময় এসেছে, যে আরও কতটা নামলে রাজ্যপালের ওপর নজর পড়বে সরকারের এবং রাষ্ট্রপতির। ইত্যবসরে উনি একের পর এক ঘৃণাপূর্ণ টুইট করে যাবেন, এবং প্রতিটি টুইটের কল্যাণে তাঁর সাংবিধানিক অবস্থান আরো একটু খর্ব হবে। তাতে অবশ্য তাঁর কিছু এসে যায় না।

bjp Governor
Advertisment