পায়ের আলতো ছোঁয়ায় স্নেহের কাননকে একদা জলে ফেলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে যেন ছিল ফুলের ছোঁয়া। তার পর থেকে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত অনেক জল গড়িয়েছে। অনেকগুলো কাল-‘বৈশাখী’ দেখে ফেলেছেন সকলে। তবে ঝড় পোয়াতে হয়েছে হাতে গোনা কয়েকজনকেই। সে ঝড়ে আজ ফের জলে পড়ে গেলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়। এবারের জল গলা পর্যন্ত, সুইমিং পুলের খেলা-খেলা জল নয়।
এদিন দুপুরে প্রকাশ্যে আরও একবার তিরস্কৃত হয়েছিলেন শোভন। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, যাঁকে তিনি দিদি বলে ডাকতেন আর মায়ের মত সম্মান করতেন বলে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এ হেন তিরস্কার সাম্প্রতিক কালে প্রথম নয়। প্রেমজ সম্পর্ক, তা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য, প্রকাশ্যে ঝামেলা - মন্ত্রিসভার সদস্যের এসব গোলমাল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক বার। শোভনের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, এমনকি প্রকাশ্যেও বলেছেন সেসব।
আরও পড়ুন, মমতা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ কলকতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের
শোভন সে সব কানে নেননি।
শোভনের মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফার পরে পরেই রত্না চট্টোপাধ্যায় এক টেলিভিশন চ্যানেলে টেলিফোনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সে প্রতিক্রিয়ায় তিনি নাম করেননি, তবে যে কেউই বুঝতে পারবে এ গোটা ঘটনার ব্যাপারে তিনি দায়ী করেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁকে নিয়ে মহানাগরিকের সংসারে ভয়ানক অশান্তি ও দাম্পত্য সংকটের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মতে, গোটা কলকাতা এবং সারা পশ্চিমবঙ্গ।
আল আমিন কলেজ ফর গার্লস-এর অধ্যাপিকা বৈশাখীর সঙ্গে শোভনের সম্পর্ক প্রায় কারোরই অজানা নয়। যদিও সে সম্পর্ক যে প্রেমের, সে কথা স্বীকার করেননি দুজনের কেউই। বৈশাখী নিজে শোভন সম্পর্কে বলেছেন শুভানুধ্যায়ী, এবং শোভন অধ্যাপিকা বৈশাখী সম্পর্কে বলে থাকেন দুঃসময়ের বন্ধু।
সেই শুভানুধ্যায়ী এবং দুঃসময়ের বন্ধুর আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে মোটেই খুশি ছিলেন না রত্না চট্টোপাধ্যায়। ঘরণীর ঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা বেঁধেছেন শোভন। রাত দুপুরে সে বাসার সামনে হানা দিয়েছেন রত্না, পুলিশ এসেছে - এ সব কিছুর সাক্ষী থেকেছে শহর। মুচমুচে ভাষায় লেখা হয়েছে শোভন-রত্নার ডিভোর্স নিয়ে আদালতের ও আদালতের বাইরের আইনি এবং আইন বহির্ভূত নানা টানাপোড়েনের কথাও।
এ সব নিয়ে রত্না এবং বৈশাখীর বাকযুদ্ধও হয়েছে। ইনি ওঁকে চক্রান্তকারী বললে, উনি তার জবাবে এঁর শিক্ষা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কে বেশি ব্যবহার করেছেন, তরজা চলেছে তা নিয়েও।
এত টানাপোড়েনের মাঝখান থেকে একটু একটু করে পায়ের তলা থেকে রাজনৈতিক মাটি সরেছে শোভনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহ বঞ্চিত হয়েছেন, দলীয় পদ থেকে সরানো হয়েছে, প্রকাশ্যে তিরস্কৃত হয়েছেন, কিন্তু এসব কিছুর পরেও প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধুত্ব তিনি হারাতে রাজি নন। জানিয়েছেন, তাঁর জন্য সমস্ত কিছু হারাতেই রাজি তিনি।
শোভন চট্টোপাধ্যায় এখন মন্ত্রিত্বহীন। মহানাগরিকত্বহীন হওয়া সম্ভবত সময়ের অপেক্ষা।
প্রেমিক অথবা শুভানুধ্যায়ী, গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তিনি শোভন বটে!