বহু ভাষিক, বহু সংস্কৃতির অসমে প্রথম দফায় যে মোট পাঁচটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে, তাতে এন আর সি নামক ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ থাকা সত্ত্বেও বিজেপির অসম রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত কুমার দাস দাবি করেছেন, কালিয়াচকের মত মাত্র গুটিকয় জায়গায় কংগ্রেসের সঙ্গে সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও শেষ হাসি হাসবে তাঁর দল। ঠিক তার সঙ্গেই তিনি তাঁর মন্তব্যে তুলে এনেছেন সেই পুরনো অ্যাজেন্ডা, অসমে বসবাসকারী সকলে আসলে অসমিয়া। সেই প্রাচীন সময় থেকে বহুত্ববাদী অসমের মৌলিক চরিত্র বিরোধী এই মন্তব্য বা সমষ্টিগত এই প্রয়াস আদপে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি আসলে ইতিহাসের একটা প্রক্রিয়া মাত্র। স্বাধীনতা ও দেশভাগের পরে আগত উদ্বাস্তু বাঙালিদেরকে এখন ‘অসমবাসী বাঙালি’ বলতে অসুবিধে কী? কেন তাঁদের হয় ‘বিদেশি’ অথবা ‘অসমিয়া’ তৈরি করার চেষ্টা ক্রমাগত চলছে?
অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, সম্ভাবনা-সংঘাতের বিবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শেষ পর্যন্ত রাজ্যসভায় কিন্তু পাশ হয়নি বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬। এই বিলে আসলে শর্তসাপেক্ষ সুরক্ষা ও নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছিল পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অভিপ্রয়াণ করে আসা ছয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী- হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান এবং পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষদের। যাতে ‘রাষ্ট্রহীনতা’ নামক শব্দের বেড়াজাল কাটিয়ে কিছু অসহায় উদ্বাস্তু মানুষ আংশিক হলেও নামমাত্র নাগরিক অধিকার ও সামান্য সামাজিক সুরক্ষার দাবিদার হতে পারেন। আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে আসা অবৈধ শরণার্থীদের নিয়ে কেন্দ্র ঠিক কতটা ব্যাকুল তা বোঝা যায়নি, কিন্তু প্রতিবেশী দেশের বাসিন্দা ‘বাংলাদেশি’ দের নিয়েই যে আসল সমস্যা, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। রাজ্যসভায় এই বিতর্কিত বিলটি পাশ হওয়ার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও, অসম সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল একেবারে নেমে পড়েছিল সহিংস প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে।
আরও পড়ুন, নির্বাচনী ইস্তেহারে যেসব নাগরিক অধিকারের কথা নেই
প্রতিরোধের যুক্তি ছিল, এই বিলের ফলে পাওয়া আপাত সুরক্ষাকবচের মাধ্যমে হয়ত নতুন করে বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থীর ঢল নামবে অসমে, যার জেরে নিজভূমে পরবাসী হয়ে যেতে পারে অসমিয়ারা। তথাকথিত ‘খিলঞ্জিয়া সরকার’ এর এই যুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে অখিল গগৈ, সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মত রাজনৈতিক নেতারা নেমে পড়েছিলেন রাস্তায়, আবার হীরেন গোঁহাই, সঞ্জয় হাজারিকা ও গোর্কি চক্রবর্তীর মত ভিন্ন মতের বুদ্ধিজীবীরা তাত্ত্বিক বাকযুদ্ধে মেতে উঠেছিলেন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাকি রাজ্যগুলোতে যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিজেপির শরিক দলগুলো এই বিল পাশকে ঠেকাতে ময়দানে নেমেছিল, তা অনেকসময় তথাকথিত পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরও অবাক করেছে। মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যাণ্ড, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব রাজ্যে এই বিলের বিরোধিতায় করে সহিংস প্রতিবাদ ও পর-পর সংঘর্ষের খবর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে বার-বার। রাজ্যসভাতে এই বিলটি পাশ হওয়ার দিন যত এগিয়ে এসেছে, কেউ প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখিয়েছেন, আবার কোনও দল প্রকাশ্যে এমনকি গোপনাঙ্গের প্রদর্শনেও পিছপা হননি।
আরও পড়ুন, নির্বাচনমুখী জাতি ও জাতীয়তা
তাহলে কি ভাষা/ধর্মভিত্তিক সংখ্যালঘুদের নিয়ে এই ধরনের মনোভাব আসলে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় রাজনীতির সমস্যা, যার মূল সুর কোথাও একটা বাঁধা হয়ে আছে বহিরাগত বিরোধিতায়? নাকি, এটা শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর উদ্বাস্তু/শরণার্থীদের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে তৈরি আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণের সমস্যা? অসমে ‘এনআরসি’ লিস্টে নাম তোলার জন্য আইনি ছাড় দেওয়া হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যরাত অবধি আসা মানুষদের, যাকে সরকারি ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ’ নামে। কিন্তু এরপর যারা এসেছেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে, তাদের অস্তিত্বের অধিকার সম্পর্কে বৈধ নীতি ঠিক কি নেওয়া হয়েছে দুটি দেশেই? ২০১৫ সালে ভঙ্গুর অরক্ষিত বর্ডার পেরিয়ে ‘silent migration’ এর তত্ত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি আগরতলায় উল্লেখ করেছিলেন, ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশ থেকে কোন শরণার্থী ভারতে আসার খবর তাঁদের কাছে নেই। ভোটের বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ যেমন আবার ঘোষণা করেছে, ‘NRC was India’s internal problem.’ বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুত্বর কারণে চলে আসতে বাধ্য হওয়া মানুষগুলোকে দুটি রাষ্ট্র কি বাস্তবে আসলে একই ভাবে দেখে?
বর্তমান এই সমস্যা তৈরি হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও ১৯৪৭ সালের দেশভাগ (পড়ুন সিলেট ভাগ) এর কারনে বাস্তুচ্যুত ‘বঙ্গালি’ হিন্দু/মুসলমান বাঙালিদের নাগরিকত্বের অধিকারকে ঘিরে। কিন্তু পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাঙালিদের নিয়েই শুধু মাথাব্যথা কেন? প্রথমে দেশভাগ ও পরে বাংলাদেশের উত্থানের পর পূর্ববঙ্গ থেকে আসা শরণার্থীরা যে শুধুমাত্র বাঙালি ছিলেন তা নয়। প্রচুর সংখ্যক আদিবাসীরাও তাঁদের জমি ও বাসস্থান থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে।
আরও পড়ুন, ভোট দিতে যাওয়ার আগে মনে রাখবেন…
১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রায় ৯৮ শতাংশ বৌদ্ধ ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর মতকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে এই অঞ্চলকে জুড়ে দেয়া হয় মুসলমানদের জন্য তৈরি ‘স্বপ্নভূমি’ পাকিস্তানের সঙ্গে। ব্রিটিশ শাসনকালে প্রশাসনিক স্বার্থে এই অঞ্চলের বিশেষ অভিধা ‘Totally Excluded Area’ র আইন-কানুনকে ওলট-পালট করে দেওয়া হল। যার ফলে ১৯৫০ এর দশক থেকে আদিবাসীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়তে থাকে। চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে, বিদেশি বিনিয়োগের সহায়তায় একে পাকিস্তানের শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ১৯৫৩ সালে চন্দ্রগোলাতে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সহায়তায় কর্ণফুলি পেপার মিল এবং ১৯৫৯ থেকে-১৯৬৩ সালের মধ্যে পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা, কাপতাই হাইড্রোইলেকট্রিক প্রোজেক্ট তৈরি করা হয়। চট্টগ্রামকে শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজে বনজ সম্পদকে কাজে লাগানো শুরু হয়, আর কাপতাই প্রোজেক্টের সার্থক রূপায়ণের জন্য ৫২,০০০ একর চাষযোগ্য জমি নিয়ে নেওয়া হয়, যা চট্টগ্রামের মোট আবাদ করা জমির মোট ৪০ শতাংশ।
চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমারা সংখ্যার দিক থেকে বেশি হলেও, মারমা, টিপরা, হকং, হাজং, লুসাই রিয়াং ও গারোরা ছিল জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রধান। এই ঘটনাগুলি প্রায় কয়েক লক্ষ আদিবাসীকে জমি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাকিস্তান সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা অন্যত্র জুম চাষের জমি/বাসস্থান খুঁজতে শুরু করে। এই সময় রাঙ্গামাটি ও খাগরাছড়ি এলাকা থেকে আদিবাসীরা আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয়ের দাবি জানাতে শুরু করে। ১৯৬০ এর দশকে প্রায় ৪০,০০০ এর বেশী সংখ্যায় চাকমা ও হাজংরা ত্রিপুরা দিয়ে ভারতে এলে, কেন্দ্রীয় সরকার নেফা অঞ্চলের টিরাপ ও চাংলাং জেলার এজেন্সি এলাকায়, লোহিত ও সুবলসিঁড়ি জেলায় মোট ১০,৭৯৯ একর জমিতে এদের চিরস্থায়ী ভাবে পুনর্বসতি দেয়। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্বের আইনে এদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি নেফা ইউনিয়ন টেরিটরিতে পরিণত হয়। অরুণাচল প্রদেশ নামে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে পিপলস পার্টি অফ অরুণাচল ও অল অরুণাচল প্রদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন চাকমা ও হাজং উদ্বাস্তুদের অবস্থানের বিরোধিতা করে। ১৯৮০ সাল থেকে রাজ্য সরকার এদের চাকরি, সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে বিরোধিতা করতে শুরু করে। এদের যুক্তি ছিল, কম জনসংখ্যার কারণে অরুণাচল প্রদেশ ক্রমে উদ্বাস্তুদের ‘dumping ground’ এ পরিণত হয়েছে। ১৯৮৫ সালের নাগরিকত্ব আইনেও এদের কথা বলা হয়নি। ঠিক অসমের মত, যেসব আদিবাসীরা জন্মসূত্রে অরুনাচলের বাসিন্দা, তাদের নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকারও আইনত স্বীকৃত হয়নি।
আরও পড়ুন, স্বদেশি রাজনীতি, বিদেশি প্রচার
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার পর, মিজোরাম ও ত্রিপুরাতেও আদিবাসীদের অভিপ্রয়াণ শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে জিয়া-উর-রহমান এর ‘রাষ্ট্রীয় ইসলামিকরণ’ নীতি ও এরশাদের শাসনকালে কয়েক লক্ষ বাঙালি মুসলমানকে চট্টগ্রামে বসবাসের জন্য জমি প্রদান করা হয়। এই সময় অন্তত ৩০,০০০ চাকমা মিজোরামে ও ৭০,০০০ ত্রিপুরায় আশ্রয় নেন। পরবর্তী এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষের পর, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার পিসিজেএসএস এর সঙ্গে ‘Peace Accord’ সই করে। কিছু আদিবাসীরা ফিরে গেলেও অনেকেই থেকে গেছেন, যাঁদের নাগরিকত্ব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে।
১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি থেকে চট্টগ্রাম যখন জাতিসত্তা ও স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের প্রশ্নে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত, ১৯৭৮ সাল থেকে নাফ নদী পেরিয়ে বা বান্দরবন-মায়ানমার সীমানা অতিক্রম করে প্রথমে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ চট্টগ্রামে আশ্রয় নেন। সেই থেকে এখন অবধি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লক্ষেরও বেশি। মায়ানমার এর উত্তর রাখাইন প্রদেশে ঠিক একইরকমের ধর্ম, ভাষা ও জাতিসত্তা রক্ষার প্রশ্নে বিপন্ন মুসলমান রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার জন্য উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে চলে আসছেন। যদিও বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে, কিন্তু এদের ক্ষেত্রে অন্তত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে সাহায্যের খামতি নেই। হাসিনা সরকার উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে অস্থায়ী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে আশ্রয় নেওয়া বা জনসমাজের মূল স্রোতে মিশে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরও অন্তত ৪ লক্ষ। যদিও চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে মোট ১২৩ টি দেশি-বিদেশি এনজিও।
আরও পড়ুন, অক্সফোর্ডে ঠাঁই: জাতে উঠল ‘চাড্ডি’
অধিকাংশ রোহিঙ্গারাই আসলে ‘economic migrant’। তাই তারা অনেক ক্ষেত্রেই বিধিনিষেধ না মেনে স্থানীয় শ্রম-বাজারে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করছে। যদিও রোহিঙ্গা মুসলমান ও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে বৈধ রেজিস্ট্রি বিয়ে আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ, কিন্তু নাগরিকত্ব বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধে পাওয়ার আশায় ‘সাদা কাগজে’ বিয়ের এক নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। তাই একই ধর্মের অনুসারী হলেও, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে এখন বেশি চাপে মুসলমান বাঙালিরাই। তাদের সবচেয়ে বড় ভয়, এভাবে অনুপ্রবেশ চলতে থাকলে হয়ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা কখনো বাঙালিদের থেকে বেশি হয়ে যাবে।
এসব জটিল যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগের সমীকরণের হিসেব বাদ দিয়ে ইতিহাসের অমোঘ নিয়মের দৃষ্টিতে দেখলে অদ্ভুত লাগে, জাতীয় রাষ্ট্রের নীতি-নির্দেশের বাধানিষেধের কারণে যে অঞ্চলে এক প্রান্তীয় জনগোষ্ঠী একসময় বাস্তুহারা হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল, ঠিক সেই অঞ্চলেই আরেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ঠিক একই কারণে আশ্রয় নিয়েছে। আসলে কোনও রাষ্ট্রই সংখ্যালঘুদের নিয়ে, তাদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবিত নয়। প্রতিটা দেশের সীমান্তের এপাশে ও ওপাশে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে নিপীড়িত মানুষের ছবিটা আসলে একইরকম।
(অনিন্দিতা ঘোষাল ডায়মন্ডহারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা, বর্তমানে ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বাস্তু সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণারত।)