বৈশাখ এলেই বাঙালি যেন একটু বেশি করে ডুবে থাকে রবীন্দ্র ভাবনায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হত না। তবে সমীকরণ সব পালটে গেল। বদলে গেল সব হিসেব। দীর্ঘ সময়ের বন্দিজীবনে ফিকে হয়ে গেল এবারের রবীন্দ্র উদযাপন। অভূতপূর্ব এক সময়। অনন্ত সংকট। তবু তো বৈশাখ আসে। আসে ২৫, 'জন্মের প্রথম শুভক্ষণ'। বন্দি জীবন নিয়ে কেমন ভাবনা ছিল রবীন্দ্রনাথের? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের কাছে।
এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, যখন চারপাশটা থমকে আছে। সবাই ঘরে বন্দি। কবে কাটবে এই অবস্থা তাও জানা নেই? এই সংকটময়তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কী ভাবতেন? কী ভাবে পেরিয়ে যেতেন?
রবীন্দ্রনাথ সবসময় মানুষের আত্মশক্তিকে জাগাতে বলেছেন। দুঃখ, যন্ত্রণা, সব সংকটে। "দুঃখ-তাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা, দুঃখে যেন করিতে পারি জয়", এ তো সব সময়ের ভাবনা, অসম্ভব একটা আশাবাদ। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও, গভীরতম দুঃখেও।
আরও পড়ুন, ‘সংস্কৃতিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, তাই রবীন্দ্রনাথ সবার হলেন না’
সভ্যতার সংকটে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, 'মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ', একবারও ঈশ্বরের কথা বলছেন না কিন্তু। বলাকার ৩৭ নম্বর কবিতায় বলেছেন, "তুফানের মাঝখানে, নূতন সমুদ্রতীরপানে, দিতে হবে পাড়ি", এই যে যেকোনো দুর্যোগের সামনে দাঁড়াবার সাহস অর্জনের কথা ভেবেছেন।
কোথাও কী মনে হয়, এত আড়ম্বর, এত ঘটার মাঝে রবীন্দ্রনাথ চাপা পড়ে যান? বরং এ বছর কি কিছুটা নিভৃতে পাওয়া যাবে রবীন্দ্রনাথকে?
এটা হয়, অস্বীকার করার কিছু নেই। ' তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে কোলাহল'... নানা প্রতিষ্ঠান নানা ভাবে ২৫ বৈশাখ উদযাপন করতে চায়। প্রতিযোগিতা থাকে, টেক্কা দেওয়ার মানসিকতা থাকে, প্রদর্শনপ্রিয়তা থাকে। তবে কী, অন্যকিছু নিয়ে তো নয়, রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই তো করছে। এর মধ্যে দোষের কিছু দেখিনা তেমন। তবে এবার জোড়াসাঁকো, রবীন্দ্রসদন খাঁ খাঁ করবে। উৎসব হবে না। কিন্তু আমরা প্রত্যেকে যে যার মতো করে আমাদের রবীন্দ্রনাথের কাছে যাব, ব্যক্তিগত ভাবে। তিনি তো আমাদের একলা থাকারও সঙ্গী।
আরও পড়ুন, নাইটহুড ফিরিয়ে ছিলেন, ২০২০ তে দাঁড়িয়ে জাতীয় পুরস্কারও কি ফিরিয়ে দিতেন রবীন্দ্রনাথ?
এই অসময়ে যে কোনও আর্থ সামাজিক পরিকাঠামো থেকে আসা শিশুদের অবস্থাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ডাকঘরের অমলের কথা। জানলার গরাদের ওপারে বন্দি বিকেল। শিশুমনের বিষণ্ণতা, একলা থাকার মনখারাপ নিয়ে আমরা তেমন ভাবিনা। ওদের জন্য কী বলবেন?
আর একটু অপেক্ষা...রাজার চিঠি নিশ্চয়ই আসবে সব অমলের ঠিকানায়।