সীমান্তে যুদ্ধ হোক বা দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা শারদ উৎসব, শান্তিনিকেতনে আগত বাঙালির ডেস্টিনেশন সোনাঝুরির হাট। ফ্যাশন হোক বা দিনে গিয়ে দিনে ফেরা, নতুনত্বের নিরিখে নিজের আকর্ষন বাড়িয়ে চলেছে সোনাঝুরির হাট।
প্রায় ২০ বছর আগে শান্তিনিকেতনের পাশে বনদপ্তরের জমিতে হাট চালু হয়েছিল নিছকই কয়েকজন স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে। এখন শান্তিনিকেতন না ঘুরে পর্যটকরা পড়ে থাকছেন হাটেই। বিশেষ করে শনিবার এমন অবস্থা হচ্ছে যে ভীড় সামলাতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে রাত পর্যন্ত টহল দিতে হচ্ছে পুলিশ অধিকারিকদের।
পর্যটকদের কথায়, শান্তিনিকেতন নতুন কিছু নয়, সে চিরকালের, সেখানে যা দ্রষ্টব্য তা পর্যটকরা বহুবার দেখেছেন, কিন্তু মানুষ চাইছেন নতুনত্ব, সাথে বিনোদন। সেই সম্ভারের ডালি সাজিয়েছে সোনাঝুরির হাট।
আর এই হাটকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকে আয়ের নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। যেমন বল্লভপুর গ্রামের কিছু বাসিন্দা স্থানীয় জঙ্গলে গিয়ে হরেক ধরনের শেকড়, বুনো ফলফুল ইত্যাদি সংগ্রহ করে মহিলাদের অলঙ্কার গড়েছেন। নাগালের মধ্যে দাম এবং নতুন সেই সম্ভারের চাহিদা মেটাতে এখন নাকাল গ্রামবাসীরা।
এ হাটে মেলে একতারা বাঁশি থেকে শুরু করে নানা হস্তশিল্পের সম্ভার, এমনকি পিঠে-পুলিও, কিন্তু সব ছাপিয়ে চলছে এখন সেলফি বাজার। দু-তিনটি আদিবাসী নাচের দল ধামসা মাদল নিয়ে তাদের রীতি অনুযায়ী পোষাক পরে নাচ গান করে এখানে। আদিবাসী বলতেই যাঁদের মনে এক রোমান্টিক ছবি ভেসে ওঠে, সেই সব পর্যটক এসে আদিবাসীদের দলে মিশে নাচেন, অবশ্যই সেলফি বা ছবি তোলার জন্য, বিনিময়ে প্রত্যেকেই দিয়ে যান নাচের দলকে টাকা। এক দলের হিসেব, শনিবারে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্তও পাওয়ার রেকর্ড আছে তাদের।
যাঁরা ঘুরতে আসেন, তাঁরা অবশ্য নাচতে পারেন না, দুবার ঘুরতেই হাঁপিয়ে যান। ছবি তুলে টাকা দিয়ে চলে যান। তাঁরাও খুশি, আদিবাসীদেরও আয় হয়, তাই এবার ধান পোঁতার কাজের ডাক পেয়েও সে কাজে যান নি আদিবাসী নাচের দলের সদস্য-সদস্যারা।
সময়ের সাথে বদলাচ্ছে হাট, আদতে যা ছিল শনিবারের হাট, তা এখন হয়ে গেছে প্রাত্যহিক। সরকারিভাবে কিছু চালা তৈরি করা হয়েছে, হয়েছে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও, তবে শান্তিনিকেতনকে এড়িয়ে পর্যটকদের শুধু হাট দেখা এবং ঘোরার প্রবণতা অবাক করে দিচ্ছে স্থানীয়দের। এবং আইনের পরোয়া না করে লাগোয়া এলাকায় চলছে একের পর এক রিসর্ট নির্মাণ, আর সকাল হলেই পর্যটকদের বিনোদনের হরেক উপকরণ হাজির হচ্ছে এলাকায়। তাই প্রশাসনের দুশ্চিন্তাও বাড়াচ্ছে সোনাঝুরির হাট।