কলকাতার কাছে পিঠে এক রাতের জন্য ঘুরে আসার কথা ভাবলেই চোখ বন্ধ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ বলবেন সুন্দরবনের কথা। অথচ স্বাধীনতার পর সাত দশক কেটে গিয়েছে, এতদিন কোনও মানচিত্র ছিল না অঞ্চলের। সম্প্রতি কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন মেলায় প্রকাশিত হল ভারতীয় সুন্দরবনের মানচিত্র। সরকারি উদ্যোগে নয়, মানচিত্র প্রকাশ করল এক পত্রিকা, যার নাম 'শুধু সুন্দরবন চর্চা'।
আয়লার সময়, ২০০৯ সালে মূলত আয়লা বিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করতে গিয়ে ত্রৈমাসিক পত্রিকা 'শুধু সুন্দরবন চর্চা'র পথ চলা শুরু। মানচিত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পত্রিকার জনা চারেক সদস্য। অভিজিৎ চক্রবর্তী, সমীরণ ঘোষ, অন্বেষা হালদার এবং জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী। উপদেষ্টার ভূমিকায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং নদী বিশেষজ্ঞ ডঃ কল্যাণ রুদ্র।
আরও পড়ুন, ভয়ঙ্কর বিষাক্ত কলকাতার বাতাস, কী করবেন?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী জানালেন, "আমাদের দেশে জেলাভিত্তিক মানচিত্র রয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন যেহেতু উত্তর ২৪ পরগণা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, দুই জেলার বেশ খানিকটা অংশ জুড়েই বিস্তৃত, তাই আলাদা করে সুন্দরবনের মানচিত্র এতদিন ছিল না। সাধারণ পর্যটকদের সুন্দরবনের এলাকা নিয়ে ধন্ধ ছিল। যিনি গোসাবা দিয়ে পাখীরালয় হয়ে সজনেখালি জাচ্ছেন, তিনি ভাবতেন সজনেখালিটাই সুন্দরবন। যিনি আবার হাসনাবাদ থেকে সামশেরনগর গেলেন, তিনি ভাবলেন ওটাই সুন্দরবন। কিন্তু আসলে সাগরদ্বীপ থেকে সামশেরনগর একটা বিশাল বড় এলাকা। সাধারণ মানুষকে এটা বোঝাব বলেই এই মানচিত্র তৈরির ভাবনা আসে। আমাদের পত্রিকার সাম্প্রতিক এক সংখ্যায় প্রথম বারের জন্য প্রকাশ করা হয়েছিল মানচিত্র। খুব ভালো সাড়া পাওয়ায় আলাদা করে ফোল্ডার আকারে প্রকাশ করা হল এবার"।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/01/sunderban-inline-edit.jpg)
এখন তো গুগল ম্যাপে পৃথিবীর যে কোনও কোণা চলে আসে হাতের মুঠোয়। তাহলে নতুন করে মানচিত্রের দরকার হল কেন? প্রথমত, সমস্ত মানুষ ইন্টারনেটের সুজোগ সুবিধা পায়, এমন ধরে নেওয়ার কারণ নেই। দ্বিতীয়ত গুগল ম্যাপে জুম-ইন, জুম আউট করলে হয় খুব ছোট, অথবা খুব বড় দেখায়, সার্বিক মানচিত্র পাওয়া যায় না। আমাদের মানচিত্রে সেই অসুবিধেটা হবে না বলেই মনে করছেন ৪৭ বছরের পেশায় স্কুল শিক্ষক জ্যোতিরিন্দ্র নারায়ণ লাহিড়ী।
আরও পড়ুন, তিন শতকের শহরে দু’শতকের ফুলের মেলা
সাধারণ পর্যটক অথবা গবেষক ছাড়া সুন্দরবনের স্থায়ী বাসিন্দাদের কতোটা কাজে লাগতে পারে এই মানচিত্র? "স্থানীয় মানুষের এখনও এই ধারণাটাই নেই যে ঠিক কোথায় তাঁরা রয়েছে। স্থানীয় নদীর নাম নিয়েও নানা রকমের তথ্য পাবেন এক এক জনের কাছে। আর সুন্দরবনের মধ্যে একাধিক গ্রামের পাশ দিয়ে নদী বয়ে গেলে গ্রামের নামেই ওই নদীকে চিনে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই মানচিত্র ধন্ধগুলো দূর করবে অনেকটাই", বললেন জ্যোতিরিন্দ্র বাবু।
প্রাথমিক ভাবে কলকাতার বই-পাড়া চত্বরে পাওয়া যাচ্ছে এই মানচিত্র। অদূর ভবিষ্যতেই গোসাবা, কাকদ্বীপ অঞ্চলের বইয়ের দোকানে যাতে পৌঁছে দেওয়া যায় সুন্দরবনের মানচিত্র, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে 'শুধু সুন্দরবন চর্চা'।