রাজধানী দিল্লিতে তবলিগি জামাতের সমাবেশ থেকে ভারতের নানা জায়গায় ছড়িয়েছে COVID-19 এর সংক্রমণ, এই নিয়ে যখন আলোড়ন চারিদিকে, তখনই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) মঙ্গলবার জানাল, ভারতে সংক্রমণের "সম্ভাবনা" এখনও "অত্যন্ত কম", বিশেষ করে যদি করোনা মহামারীর নতুন কেন্দ্রস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৪৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার, এবং দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এর ফলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৩৯৭। এঁদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২৪ জন, মৃতের সংখ্যা ৩৫। ICMR-এর ছোঁয়াচে রোগ তথা মহামারী-সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ডাঃ আর আর গঙ্গাখেড়কর বলছেন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
ভারতে 'ফেস মাস্ক'-এর ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাল্টানো উচিত কিনা, সেই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ গঙ্গাখেড়কর বলেন, "ব্যাপারটা বুঝতে হবে। যেখানে ছোঁয়াচ লাগার ঝুঁকি বেশি, সেখানে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। মাস্ক পরা এই কারণে, যাতে মুখে বা নাকে হাত না লেগে যায়। ভারতে এবং আমেরিকায় প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আমার সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, সেই জন্য আমরা বলছি যে স্রেফ উপসর্গ দেখা দিলে তবেই মাস্ক পরুন। যদি মুখে হাত দেওয়ার অভ্যাস না থাকে, ভয়ের কিছু নেই। সবটাই নির্ভর করে কতটা ছোঁয়াচ লাগছে, তার ওপর।"
অন্যদিকে আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC), যা এতদিন বলে আসছিল যে শুধুমাত্র অসুস্থরাই মাস্ক পরবেন, এই নির্দেশ বদলানোর কথা বিবেচনা করে দেখছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,৬৪,৬২০, মৃতের সংখ্যা ৩,১৭০। তুলনায় চিনে আক্রান্ত ৮২,২৪১ জন, এবং ইতালিতে আক্রান্ত ১,০১,৭৩৯ জন। এর ফলে করোনা মহামারীর নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আমেরিকাই।
বিশ্বব্যাপী COVID-19 আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৯৮, মৃতের সংখ্যা ৩৭,২৭২।
ভারতে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর আক্রান্তের হার হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেছেন আধিকারিকরা।
মাস্ক বা মুখোশকে "দুষ্প্রাপ্য" সামগ্রী আখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেন, "জনগণের কাছে অনুরোধ, সকলের মুখোশ পরার প্রয়োজন নেই। যদি অসুস্থ বোধ করেন এবং হাসপাতালে যেতে চান, তবে অবশ্যই পরবেন। আমাদের নজর কিন্তু মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর। বাড়িতে তৈরি মুখোশের খবর এসেছে আমাদের কাছে, সেগুলি খতিয়ে দেখছি আমরা।"
গত সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের সমস্ত হাসপাতাল মিলিয়ে মজুত ছিল ১১.৯৫ লক্ষ N95 মাস্ক। গত দুদিন বিতরণ হয়েছে আরও অতিরিক্ত ৫ লক্ষ মাস্ক, মঙ্গলবার বিতরণ হয় ১.৪০ লক্ষ। সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি হওয়া PPE 'কিট'-এর সঙ্গে থাকবে আরও ১০ লক্ষ মাস্ক।
উপস্থিত N95 মুখোশ তৈরি করছে দেশের দুটি সংস্থা, যাদের সম্মিলিত দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা হলো ৫০ হাজার মুখোশ। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত এই ক্ষমতা ১ লক্ষ হয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) কিছু স্থানীয় উৎপাদনকারীদের সঙ্গে মিলে এক সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক প্রায় ২০ হাজার মুখোশ বানানোর ব্যবস্থা করছে।
আপাতত নিয়ন্ত্রণের ওপরেই মনোনিবেশ করছেন কর্তৃপক্ষ, যার ফলে কিছু 'হটস্পট' চিহ্নিত করে সেইসব জায়গায় পরীক্ষার মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। আগরওয়ালের কথায়, "সরকারের দিক থেকে দেখতে গেলে, একটা কেস হলেও তা হটস্পট হতে পারে... আপনাদের বুঝতে হবে যে এটি একটি অত্যন্ত গতিশীল পরিস্থিতি। আজ যা হটস্পট, ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ হলে কাল তা নাও থাকতে পারে। একইভাবে আজকের কোনও সাফল্যের কাহিনীও আগামীকাল হটস্পট হয়ে যেতে পারে।"
ভারতে এখন পর্যন্ত ৪২,৭৮৮ জনের পরীক্ষা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৪,৩৪৬ জনের। যে ৪৭ টি বেসরকারি ল্যাবরেটরি 'চেইন' করোনা পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে, তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১,৮০০ জনের পরীক্ষা হয়েছে। সূত্রের খবর, এদের মধ্যে কয়েকটি ল্যাবরেটরি সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে পর্যাপ্ত পরিমাণ 'টেস্টিং কিট' না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের কাজ।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাঙ্কের 'COVID-19 Fast-Track Facility' নামক তহবিল থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি চার বছরের প্রকল্প চালু হয়েছে, যার নামকরণ হয়েছে 'India COVID-19 Emergency Response and Health Systems Preparedness'।