আজ মাধ্যমিকের ভৌত বিজ্ঞান বা ফিজিক্সের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরু হয় বেলা বারোটায়। আধঘন্টার মধ্যে আমাদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পৌঁছে যায় প্রশ্নপত্র। এখন আর আমরা কেউ অবাক হচ্ছি না, কারণ প্রথম দিন, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি, থেকেই তো প্রশ্নপত্র এসে চলেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড না এলে বরং অবাক হচ্ছি।
যতই সিআইডি কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করুক, চুনোপুঁটিদের সূত্র ধরে রাঘব বোয়ালদের নাগাল পেতে পেতে সম্ভবত এ বছরের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দিন ইংরেজির প্রশ্নপত্র হাতে আসার পর আমরা পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করি। প্রশ্ন শুনেই "আমি কোনো কথা বলব না", বলে মুখের ওপর ফোন কেটে দেন তিনি।
কিন্তু আর তো এতে কুলোবে না। এবার তো এই পরীক্ষার প্রহসন নিয়ে আপনাকে মুখ খুলে কিছু বলতেই হয়। যেসব পরীক্ষার্থী সৎভাবে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা যাতে অসদুপায় অবলম্বনকারী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে একাসনে বসতে বাধ্য না হয়, তা নিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেটা অন্তত বলুন। বিধাননগর পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ বা সিআইডি তদন্ত তো বোঝা গেল, কিন্তু পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে কিছু বলুন। খুব গোদাভাবে বললে, আপনার কি মনে হয় না, গোটা পরীক্ষা প্রক্রিয়া বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়া উচিত? আপনি না বলতে পারেন, শিক্ষামন্ত্রী কিছু বলুন?
আমরা জানি, রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুজন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রকে গ্রেফতার করে সিআইডি, পাশাপাশি আটক হয় দুুুুজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও। চারজনেই পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির মামুন ন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র। বলা হয়, 'খোকা ৪২০' নাম দিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে প্রশ্নপত্র চালাচালি করছিল তারা, যে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০। জেনে আমরা যুগপৎ আমোদ এবং উদ্বেগ অনুভব করি।
তারপরেও সোমবার ফাঁস হয় অঙ্কের প্রশ্নপত্র। আজ বেরোলো ফিজিক্স। তাহলে এই যে চারজন ধরা পড়ল, তারা কতটা দোষী, এই প্রশ্ন উঠছে না কি? এরা যদি হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র শেয়ার করেও থাকে, এদের নেপথ্যে কে বা কারা?
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগে জলপাইগুড়ি জেলার সুভাষনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায় ধরা পড়েছিলেন। ঘটনার পরে পদ থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ বছর তাই আমরা শুনলাম, পরীক্ষা চলাকালীন কড়া নিরাপত্তা জারি থাকবে সমস্ত কেন্দ্রে। টিচিং বা নন-টিচিং কর্মী, পরীক্ষার্থী, কাউকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। তার মানে হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গল্পই থাকার কথা নয়।
কিন্তু অফিসার-ইন-চার্জ, সেন্টার সেক্রেটারি, এবং ভেনু-ইন-চার্জ সহ মোট পাঁচজনকে মোবাইল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে কেউ মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে এলে প্রধান শিক্ষকের কাছে লকারে জমা রাখতে হবে তা। লকারের চাবি থাকবে ভেনু-ইন-চার্জের কাছে। তাহলে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকতেই পারে, সেই সন্দেহ কি একেবারে অমূলক?
কতটা গভীরে গিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে, তা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বুঝবেন তদন্তকারীরা। কিন্তু উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে বসে থাকলে যে সমস্যার সমাধান হবে না, এটুকু তো আমরাও বুঝি।