একটি পৃথিবী বিখ্যাত গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। ১৮৯৩ এর ৭ জুন। তরুণ ভারতীয় আইনজীবী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত। সবে একটি ট্রেনে উঠেছেন, অমনি বিপত্তি। সহযাত্রীর দাবি, গান্ধী শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত ফার্স্টক্লাস কামরায় উঠেছেন, কাজেই তাঁকে অবিলম্বে নেমে যেতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই, এই অমানবিক দাবির প্রতিবাদ করলেন গান্ধী। কিন্তু জোর যার মুলুক তার। পিটারম্যারিটসবার্গ স্টেশনে ট্রেনের গার্ডের সাহায্যে নামিয়ে দেওয়া হল জেদি তরুণকে। প্রায়ান্ধকার সেই স্টেশনে বীজ রোপিত হল সত্যাগ্রহ আন্দোলনের।
বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার সিনে সেন্টার নামক প্রদর্শনগৃহে মহাত্মা গান্ধীর ওপর একটি বায়োপিকের প্রদর্শন দিয়ে শুরু হলো সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনদিন-ব্যাপী অনুষ্ঠান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার অভিষেকের পর, ১৯৯৬-এ ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথ প্রযোজনায় গান্ধীজীর ওপর বায়োপিকটি তৈরি হয়। প্রয়াত প্রফেসর ফতিমা মীরের লেখা 'অ্যাপ্রেন্টিসশিপ অফ আ মহাত্মা' বইটির অনুপ্রেরনায় এবং শ্যাম বেনেগলের পরিচালনায় তৈরি হয়েছিল ছবিটি।
সিনে সেন্টারের বর্তমান মালিক অ্যাভালন গ্রুপের সিইও এ বি মুসা পিটিআইকে জানান, মহাত্মার সঙ্গে কাটানো তাঁর প্রপিতামহদের মূহুর্তগুলিকে অমর করে রাখতে চান তিনি। মুসা বলেন "এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমি আর আমার বাবা (মুসা মুসা) আমাদের ছবি দিয়েই মহাত্মার আন্দোলনের ১২৫ বছর যাপন করতে পারছি। তরুণ মাহাত্মার এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের আমাদের পূর্বপুরুষরা।"
তিনি আরও জানান, "যদি মহাত্মা ট্রেনে চড়ে প্রিটোরিয়াতে আইনী কাগজপত্র জমা দিতে না আসতেন, তাহলে হয়ত গোটা ঘটনাটাই ঘটত না। আর পৃথিবী ওঁর নেতৃত্ব এবং পথপ্রদর্শন থেকে বঞ্চিত হত।" ব্রিটেন থেকে আইন পাশ করে গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন দুজন ভারতীয় ব্যবসাদারের আইনি যুদ্ধের মীমাংসা করতে, সত্যাগ্রহ প্রসঙ্গে এই ঘটনারও উল্লেখ করেন মুসা।
আরও দুদিন ব্যাপী চলবে এই উদযাপন। থাকবে মহাত্মাকে নিয়ে ওয়ার্কশপ, বিশেষ ট্রেন রাইডের ব্যবস্থাও। ট্রেনের ইঞ্জিন ও কামরা সজ্জিত হয়েছে ভারত থেকে আনা ৪০০ মিটারের খাদি কাপড় দিয়ে।