ওরা অকারণে চঞ্চল, কারোর কথাও শোনে না। এমনকি কথা শুনলো না দিল্লি আদালতের বিচারকেরও। দুটি খাঁচায় বন্ধ করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাদের? বিচারকের এই প্রশ্নে কেউ বা খুঁটে খুঁটে আপেল খেয়ে গেল, কেউ আবার 'ট্যারা চোখে' আদালত কক্ষ পরিদর্শন করে গেল। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর দিল না কেউই। মানুষের মতো তারা কথা বলতে পারে ঠিকই, তবে সে তো শেখানো বুলি! আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে তাই চুপ করে থাকাকেই শ্রেয় বলে মনে করল চোরাচালানকারীদের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া ১৩টি টিয়া।
আরও পড়ুন, আদর করতেই খেপে গেল শিম্পাঞ্জি, ব্যথা পেলেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা
বুধবার বিকেলে এমনই অভিনব দৃশ্য দেখা গেল দিল্লির পাটিয়ালা হাউস আদালত চত্বরে। জানা গিয়েছে, এই ১৩টি টিয়াকে পাচার করতে তাসখন্দের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছিল উজবেকিস্তানের এক নাগরিক। ১৩টি টিয়া পাখির সঙ্গে তাদের পাচারকারী, বছর চব্বিশের আনভরজন রখমত জনভকেও বুধবার বিচার বিভাগীয় বিচারক মনীশ খুরানার সামনে হাজির করানো হয়। এমনকি টিয়াপাখি রফতানির ক্ষেত্রে কী কী নিষেধাজ্ঞা আছে তাও জানতে চাওয়া হয় শুল্ক দফতরের আধিকারিকদের কাছে।
আরও পড়ুন, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মক্কায় প্রাণ হারালেন ৩৫ জন তীর্থযাত্রী
শুল্ক দফতরের তরফে বিশেষ সরকারি আইনজীবি পি সি আগরওয়াল বলেন, "পাখিগুলিকে বাজেয়াপ্ত করার পর তাদের সম্পর্কে বিশদে জানতে উত্তরাঞ্চলের বন্যপ্রাণ বিভাগের ইনস্পেক্টর এবং বন্যপ্রাণ বিভাগের অপরাধ দমন শাখার আধিকারিকদের ডাকা হয়েছিল টিয়াগুলিকে পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য।" আগরওয়াল আরও বলেন, "পরীক্ষা করার পর এটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে এই টিয়াগুলি জীবন্ত প্যারাকিট প্রজাতি, যাদের রফতানি করা সম্পূর্ণতই নিষিদ্ধ।" এরপরই বিচারক মনীশ খুরানা আদেশ দেন যে পাখিগুলিকে যেন বন্যপ্রাণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয় যাতে তাদের যথাযথ যত্ন এবং সুরক্ষা দেওয়া সম্ভবপর হয় এবং টিয়া পাচারকারী উজবেকিস্তানের জনভকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন।
কিন্তু কীভাবে ধরা পড়ল এই তেরোটি টিয়া?
মঙ্গলবার দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাগেজ চেকিংয়ের সময় জনভের ব্যাগে জুতোর বাক্সে হঠাৎই কিছু পাখির ছবি ভেসে ওঠে স্ক্যান মেশিনের মনিটরে। যদিও জনভ জানায় সেগুলি খেলনা, সে কথা বিশ্বাস করেন নি সিকিউরিটি আধিকারিকরা। তৎক্ষণাৎ সেই বাক্স খুলতেই তাঁদের চোখে পড়ে ১৩টি অচৈতন্য টিয়াপাখি। সিআইএসএফ-এর এক আধিকারিক জানান, উজবেকিস্তান থেকে বিমান ধরে তাসখন্দে পৌঁছনোর কথা ছিল জনভের। এমনকি জেরায় জনভ স্বীকারও করে নেয় যে তাসখন্দে এই ধরনের টিয়াপাখির দারুণ চাহিদা। তবে এই ধরনের জীবন্ত পাখি নিয়ে যাওয়ার ঘটনা দিল্লি বিমানবন্দরে এই প্রথম, জানিয়েছেন শুল্ক দফতরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
Read the full story in English